বুধ গ্রহ
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বুধ | ||||
---|---|---|---|---|
মেরিনার ১০ কর্তৃক তোলা বুধের ছবি |
||||
কক্ষীয় বৈশিষ্ট্যসমূহ | ||||
ইপক জে২০০০ | ||||
অপসূর দূরত্ব: | ৬৯,৮১৭,০৭৯ কিমি ০.৪৬৬ ৬৯৮ ৩৫ এইউ |
|||
অনুসূর দূরত্ব: | ৪৬,০০১,২৭২ কিমি ০.৩০৭ ৪৯৯ ৫১ এইউ |
|||
অর্ধ-মুখ্য অক্ষ: | ৫৭,৯০৯,১৭৬ কিমি ০.৩৮৭ ০৯৮ ৯৩ এইউ |
|||
কক্ষীয় পরিধি: | ~৩৬০,০০০,০০০ কিমি (২.৪০৬ এইউ) |
|||
কক্ষীয় উৎকেন্দ্রিকতা: | ০.২০৫ ৬৩০ ৬৯ | |||
নাক্ষত্রিক পর্যায়: | ৮৭.৯৬৯ ৩৪ দিন (০.২৪০ ৮৪৬ ৯ বছর) |
|||
যুতিকাল: | ১১৫.৮৭৭৬ দিন | |||
গড় কক্ষীয় দ্রুতি: | ৪৭.৩৬ কিমি/সে | |||
সর্বোচ্চ কক্ষীয় দ্রুতি: | ৫৮.৯৮ কিমি/সে | |||
সর্বনিম্ন কক্ষীয় দ্রুতি: | ৩৮.৮৬ কিমি/সে | |||
নতি: | ৭.০০৪ ৮৭° (সূর্যের বিষুবের সাথে ৩.৩৮°) |
|||
উদ্বিন্দুর দ্রাঘিমা: | ৪৮.৩৩১ ৬৭° | |||
অনুসূর কোণ: | ২৯.১২৪ ৭৮° | |||
উপগ্রহসমূহ: | নেই | |||
ভৌত বৈশিষ্ট্যসমূহ | ||||
বিষুবীয় ব্যাসার্ধ্য: | ২৪৩৯.৭ কিমি (০.৩৮৩ পৃথিবী) |
|||
পৃষ্ঠতলের ক্ষেত্রফল: | ৭.৫×১০৭ কিমি&sup২; (০.১৪৭ পৃথিবী) |
|||
আয়তন: | ৬.০৮৩×১০১০ কিমি&sup৩; (০.০৫৬ পৃথিবী) |
|||
ভর: | ৩.৩০২×১০২৩ কেজি (০.০৫৫ পৃথিবী) |
|||
গড় ঘনত্ব: | ৫.৪২৭ গ্রাম/সেমি&sup৩; | |||
বিষুবীয় পৃষ্ঠের অভিকর্ষ: | ৩.৭০১ মি/সে&sup২; (০.৩৭৭ g) |
|||
মুক্তি বেগ: | ৪.৪৩৫ কিমি/সে | |||
নাক্ষত্রিক ঘূর্ণনকাল: | ৫৮.৬৪৬২ day (৫৮ দিন ১৫.৫০৮৮ ঘ) | |||
বিষুবীয় অঞ্চলে ঘূর্ণন বেগ: | ১০.৮৯২ কিমি/ঘ (বিষুবীয় অঞ্চলে) | |||
এক্সিয়াল টিল্ট: | ~০.০১° | |||
উত্তর মেরুর বিষুবাংশ: | ২৮১.০১° (১৮ ঘ ৪৪ মিন ২ সে) ১ | |||
বিষুবলম্ব: | ৬১.৪৫° | |||
প্রতিফলন অনুপাত: | ০.১০-০.১২ | |||
পৃষ্ঠের তাপমাত্রা: |
|
|||
বিশেষণসমূহ: | বুধীয়, Mercurian | |||
বায়ুমণ্ডল | ||||
পৃষ্ঠের চাপ: | trace | |||
গাঠনিক উপাদান: | ৩১.৭% পটাসিয়াম ২৪.৯% সোডিয়াম ৯.৫% পারমানবিক অক্সিজেন ৭.০% আর্গন ৫.৯% হিলিয়াম ৫.৬% আনবিক অক্সিজেন ৫.২% নাইট্রোজেন ৩.৬% কার্বন ডাই অক্সাইড ৩.৪% পানি ৩.২% হাইড্রোজেন |
বুধ (ইংরেজি Mercury; আ-ধ্ব-ব: [ˈmɝ.kjə.ɹi], আ-ধ্ব-ব: [ˈmɜː.kjə.ɹi])) সৌর জগতের প্রথম এবং ক্ষুদ্রতম গ্রহ। এটি সূর্যের সর্বাপেক্ষা নিকটতম গ্রহ। এর কোন উপগ্রহ নাই। এটি সূর্যকে প্রতি ৮৮ দিনে একবার প্রদক্ষিণ করে। এর উজ্জ্বলতার আপাত মান -২.০ থেকে ৫.৫ পর্যন্ত হয়ে থাকে। কিন্তু একে পৃথিবী থেকে শহজে দেখা যায় না, কারণ সুর্যের সাথে এর বৃহত্তম কৌণিক পার্থক্য হচ্ছে মাত্র ২৮.৩ ডিগ্রী। কেবল সকাল ও সন্ধ্যার ক্ষীণ আলোয় একে দেখা যায়। গ্রহটি সম্বন্ধে তলনামূলক অনেক কম তথ্য জানা গেছে। বুধের দিকে অগ্রসর হয়েছে এমন একমাত্র নভোযান হচ্ছে মেরিনার ১০ যা ১৯৭৪ - ১৯৭৫ সালে অভিযান চালায়।
ভৌত বৈশিষ্ট্যের দিক দিয়ে বুধ অনেকটা চাঁদের মত। কারণ এই গ্রহেও রয়ছে প্রচুর খাঁদ। গ্রহটির কোন স্থিতিশীল বায়ুমণ্ডল নেই, নেই কোন প্রাকৃতিক উপগ্রহ। এর একটি সুবৃহৎ লৌহ কেন্দ্র রয়েছে, এই কেন্দ্র কর্তৃক উৎপাদিত চৌম্বক ক্ষেত্র পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের তুলনায় ০.১% অধিক শক্তিশালী। বুধের পৃষ্ঠতলের তাপমাত্রা ৯০ থেকে ৭০০ কেলভিনের মধ্যে থাকে। সবচেয়ে উত্তপ্ত স্থান হচ্ছে অর্ধসৌর বিন্দু এবং শীতলতম স্থান হল এর মেরুর নিকটে অবস্থিত খাদসমূহের নিম্ন বিন্দু।
সূচিপত্র |
[সম্পাদনা] নামকরণ ও সংস্কৃতি
রোমানরা এই গ্রহের নামকরণ করেছিল তাদের ক্ষীপ্রগতি বিশিষ্ট বার্তাবাহক দেবতা মার্কারির নামানুসারে। গোধূলি লগ্নে আকাশে বুধকে অতি দ্রুত গতিতে চলতে এখা যায়। সম্ভবত এ কারণেই এর এ ধরণের নামকরণ করা হয়েছে। এই পৃষ্ঠায় সংযুক্ত তথ্যছকটির উপরে বুধ গ্রহের যে জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক প্রতীকের চিত্র দেয়া হয়েছে তা প্রকৃতপক্ষে দেবতার মাথা এবং তার টুপির প্রতীকী অর্থ বহন করে। এটি পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন একটি জ্যোতিষ শাস্ত্রীয় চিহ্ন। গ্রীকরা বুধ গ্রহকে Στίλβων তথা "স্টিবলন" নামে ডাকত যার অর্থ দ্যুতি প্রদানকারী। গ্রীসে এর অন্য একটি নাম ছিল "হেরমাওন"। খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীর পূর্বে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বুধকে দুইটি পৃথক বস্তুর সমন্বয় মনে করত যার একটি কেবল সূর্যোদয়ের সময় এবং অপরটি কেবল সূর্যাস্তের সময় দেখা যায়। মার্কারি নামীয় এই গ্রহটির বাংলা নাম বুধ এসেছে ভারতে ব্যবহৃত এর সংস্কৃত নাম থেকে। ভারতে এর নাম ছিল বুধ (बुध)। বুধ হল চন্দ্রের পুত্রের নাম। চৈনিক, কোরীয়, জাপানীয় এবং ভিয়েতনামীয় সংস্কৃতিতে একে "জল তারা" (水星) বলা হয় যা বিশ্ব গঠনকারী পাঁচটি মৌলিক পদার্থের দর্শনের উপর প্রতিষ্ঠিত। হিব্রুতে এর নাম হল Kokhav Hamah (כוכב חמה), তথা উত্তপ্ত বস্তুর তারা। এখানে উত্তপ্ত বস্তু বলতে সূর্যকে বোঝানো হয়েছে।
[সম্পাদনা] অভ্যন্তরীন গঠন
বুধ চারটি পার্থিব গ্রহের একটি অর্থাৎ এরও পৃথিবীর মত কঠিন পৃষ্ঠভূমি রয়েছে। চারটি পার্থিব গ্রহের মধ্যে এর আকার সবচেয়ে ছোট; বিষুবীয় অঞ্চলে এর ব্যাস ৪৮৭৯ কিমি। বুধের গাঠনিক উপাদানসমূহের মধ্যে ৭০% ধাতব এবং বাকি ৩০% সিলিকেট জাতীয়। এর ঘনত্ব সৌর জাগতিক বস্তসমূহের ঘনত্বের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ, ৫.৪৩ গ্রাম/সেমি³; পৃথিবী থেকে সামান্য কম। মহাকর্ষীয় সংকোচনের প্রভাব সম্পূর্ণ উদ্ধার করতে পারলে বুধের গাঠনিক উপাদানসমূহের ঘনত্ব আরও বেশী হত।[১]
বুধের অভ্যন্তরীন গঠন বোঝার ক্ষেত্রে এর ঘনত্ব ভাল ভূমিকা রাখতে পারে। পৃথিবীর উচ্চ ঘনত্বের মূল কারণ হচ্ছে মহাকর্ষীয় সংকোচন যার পরিমাণ কেন্দ্রে সবচেয়ে বেশী। বুধ অনেক ছোট এবং এর কেন্দ্র পৃথিবীর মত অতটা দৃঢ় ও সংকুচিত নয়। তাহলে বুধের এত উচ্চ ঘনত্বের মূল কারণ হতে পারে, এর কেন্দ্র অনেক বড় এবং লৌহসমৃদ্ধ।[২] আধুনিককালে ভূতত্ত্ববিদরা আবিষ্কার করেছেন যে বুধের সমগ্র আয়তনের ৪২% ই হচ্ছে এর কেন্দ্র। যেখানে পৃথিবীর কেন্দ্র মাত্র ১৭%।
কেন্দ্রের চারপাশে ৬০০ কিমি অঞ্চল জুড়ে রয়েছে ম্যানটেল। বুধের ইতিহাস ঘেটে যে তথ্য পাওয়া গেছে সে অনুসারে এখন সাধারণভাবে ধারণা করা হয়, অনেক আগে বুধের সাথে কয়েক কিলোমিটার ব্যাস বিশিষ্ট একটি বস্তুর সংঘর্ষ ঘটেছিল। এই সংঘর্ষে বুধের ম্যানটেলের বেশ কিছু অংশ খসে পড়ে। এ কারণেই বর্তমানে কেন্দ্রের তুলনায় ম্যানটেলের পুরুত্ব এত কম।[৩] অবশ্য এ বিষয়ে অন্যান্য মতও রয়েছে। ধারণামতে বুধের ভূ-ত্বকের পুরুত্ব ১০০ - ২০০ কিমি-এর মধ্যে। এর পৃষ্ঠতরের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এতে প্রচুর সরু ridge রয়েছে যার কয়েকটি প্রায় কয়েকশো কিলোমিটার পর্যন্ত প্রলম্বিত। বিশ্বাস করা হয় এগুলো বুধের কেন্দ্র এবং ম্যানটেল হিসেবে গঠিত হয়েছিলো, কিন্তু এগুলো শীতল ও সংকুচিত হওয়ার আগেই বুধের ভূ-ত্বক কঠিন হয়ে যায়। এ কারণে এগুলো ridge হিসেবে রয়ে যায়।[৪]
আমাদের সৌর জগতের অন্যান্য বৃহৎ গ্রহগুলোর যে কোনটির তুলনায় বুধে লৌহের পরিমাণ বেশী। বুধে ধাতুর এই উচ্চ পরিমাণের কারণ ব্যাখ্যার জন্য বেশ কয়েকটি তত্ত্ব প্রস্তাব করা হয়েছে। সবচেয়ে বেশী গৃহীত তত্ত্বটি হচ্ছে: বুধে ধাতু-সিলিকেটের অনুপাত সাধারণ কনড্রাইট উল্কায় এই অনুপাতের সমান ছিল এবং একসময় এর ভর বর্তমান ভরের ২.২৫ গুণ ছিল। সৌর জগতের ইতিহাস থেকে জানা যায় এক পর্যায়ে একটি বৃহৎ planetesimal বুধে আঘাত হানে যার ভর এর ছয় ভাগের এক ভাগ ছিল। এই সংঘর্ষের ফলে এর মূল ভূ-ত্বক ও ম্যানটেলের অনেকাংশ ক্ষয়ে যায়, কিন্তু অভ্যন্তরীন কেন্দ্রটি আগের মতই রয়ে যায়। ফরে কেন্দ্র এতো বড় এবং লৌহসমৃদ্ধ।[৩] পৃথিবীর একমাত্র কৃত্রিম উপগ্রহ চন্দ্রের উৎপত্তি ব্যাখ্যার জন্যও অনুরুপ একটি তত্ত্ব প্রস্তাবিত হয়েছে। একে giant impact theory বলা হয়। অন্য একটি মতে বলা হয়, বুধ গ্রহ সূর্যের শক্তি উৎপাদনের পরিমাণ সুস্থিত হওয়ার পূর্বে সৌর নীহারিকা থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে। সৃষ্টি আদিতে এর ভর সম্ভবত বর্তমান ভরের দ্বিগুণ ছিল। কিন্তু ভ্রূণ সূর্য সংকুচিত হওয়ার কারণে বুধের নিকটে তাপমাত্রা ২৫০০ থেকে ৩৫০০ কেলভিনে পৌঁছায়। অনেকের মতে এই তাপমাত্রা ১০,০০০ কেলভিনেরও উপর হতে পারে। এই উচ্চ তাপমাত্রায় বুধ পৃষ্ঠের অনেক শিলা জাতীয় বস্তুই হয়তো বাষ্পীভূত হয়ে গিয়েছিল এবং একটি শিলা বাষ্প বিশিষ্ট বায়ুমণ্ডল সৃষ্টি করেছিল। সৌর বায়ু এই শিলা বাষ্প সরিয়ে নিয়ে যায়।[৫] তৃতীয় অন্য একটি তত্ত্বে প্রস্তাব করা হয়েছে, যে কণাগুলো থেকে বুধ গ্রহের বিবৃদ্ধি ঘটছিলো সেগুলোর উপর সৌর নীহারিকা এক ধরণের গতিরোধক (drag) আরোপ করেছিল। এতে হালকা বস্তুগুলো আর বিবৃদ্ধি সাধনে অংশ নিতে পারেনি।[৬] এই তত্ত্বগুলোর প্রত্যেকটি বুধ পৃষ্ঠের গঠন সম্বন্ধে ভিন্ন ভিন্ন মত দেয়। এই তত্ত্বগুলো পরীক্ষা করে দেখার জন্য বুধ অভিযানে একটি মহাকাশযান পাঠানো হয়েছে: মেসেঞ্জার। এছাড়া ভবিষ্যতে আরেকটি যান পাঠানো হচ্ছে যার নাম বেপিকলম্বো।
[সম্পাদনা] পৃষ্ঠতলের ভূ-তত্ত্ব
এই বিষয়ে মূল নিবন্ধের জন্য দেখুন: বুধ গ্রহের ভূ-তত্ত্ব
সামগ্রিকভাবে বুধের পৃষ্ঠতল অনেকটা চন্দ্রের মত, এতে চাঁদের মত সাগর (mare) এবং খাদ রয়েছে। এ ধরণের গঠন থেকে বোঝা যায় বুধ বিলিয়ন বিলিয়ন বছর ধরে ভূতাত্ত্বিকভাবে নিষ্ক্রিয় অবস্থায় রয়েছে। বুধের ভূ-তত্ত্ব বোঝার জন্য আমাদেরকে কেবল একটি মাহাকাশ অভিযানের উপর নির্ভর করতে হয়। এজন্য পার্থিব গ্রহসমূহের মধ্যে এটি সম্বন্ধে সবচেয়ে কম জানা গেছে। বুধের পৃষ্ঠতলীয় বিষয়সমূহ নিম্নোক্ত নামগুলোর মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা হয়:
- প্রতিফলন অনুপাত বিষয়ক বৈশিষ্ট্য - বিভিন্ন অঞ্চলে প্রতিফলনের পরিমাণ সুস্পষ্টরুপে বিভিন্ন।
- ডরসাম - পর্বতশ্রেণী (ridge) (দেখুন: বুধের ভূ-তাত্ত্বিক কাঠামোসমূহের তালিকা)
- মন্টেস - পর্বত সমূহ (দেখুন: বুধের ভূ-তাত্ত্বিক কাঠামোসমূহের তালিকা)
- প্ল্যানিটিয়া - সমভূমিসমূহ, (দেখুন: বুধের ভূ-তাত্ত্বিক কাঠামোসমূহের তালিকা
- Rupe - পাহাড়ের ঢাল (দেখুন: বুধের ভূ-তাত্ত্বিক কাঠামোসমূহের তালিকা)
- উপত্যকা - উপত্যকাসমূহ (দেখুন: বুধের ভূ-তাত্ত্বিক কাঠামোসমূহের তালিকা)
সৃষ্টির পরপরই বুধ গ্রহে বিপুল পরিমাণ ধূমকেতু এবং গ্রহাণু আঘাত হানে। আঘাতের এই সময়টি লেট হেভি বম্বার্ডমেন্ট (late heavy bombardment) নামে পরিচিত। আজ থেকে প্রায় ৩.৮ বিলিয়ন বছর পূর্বে এই যুগের সমাপ্তি ঘটে। আঘাতের এই সময়টিতে বুধের সমগ্র ভূ-তল আক্রান্ত হয়। উপরন্তু এর কোন বায়ুমণ্ডল না থাকায় আঘাতের পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পায়। তখন গ্রহটি আগ্নেয়ভাবে সক্রিয় ছিল। বুধের অনেকগুলো অববাহিকা যেমন ক্যালরিস অববাহিকা তখন গ্রহের ভিতর থেকে বের হয়ে আসা ম্যাগমা দ্বারা পূর্ণ ছিল। এর ফলে গ্রহে সুষম তলের সৃষ্টি হয় যা অনেকটা চাঁদের সাগরের মত।
বুধের খাদসমূহ কয়েক কিলোমিটার থেকে কয়েকশো কিলোমিটার পর্যন্ত প্রশস্ত হয়। এখন পর্যন্ত জানা মতে সর্ববৃহৎ খাদের মধ্যে রয়েছে ক্যালরিস অববাহিকাগুলো (caloris basin)। এদের ব্যাস প্রায় ১৩০০ কিমি। তবে স্কিনাকাস অববাহিকার ব্যাস আরও বেশী, প্রায় ১৬০০ কিমি। অবশ্য মেরিনারের মাধ্যমে এগুলোর ছবি তোলা সম্ভব হয়নি। পৃথিবী থেকে তোলা ছবির ভিত্তিতে এই পরিমাপ করা হয়েছে। যে সংঘর্ষের কারণে ক্যালরিস অববাহিকাগুলো সৃষ্টি হয়েছিল সেগুলো এতটাই শক্তিশালী যে, এদের কারণে প্রচুর লাভা উদ্গীরণ ঘটে এবং প্রায় ২ কিমি উচ্চতা পর্যন্ত একটি ঘনকেন্দ্রিক বলয়ের সৃষ্টি হয়। সংঘর্ষ খাদগুলোকে কেন্দ্র করে এই বলয়ের সৃষ্টি হয়েছিল। ক্যালরিস অববাহিকার প্রতিপাদস্থানসমূহে একটি বৃহৎ অঞ্চলের সৃষ্টি হয় যা স্বাভাবিকের চেয়ে আলাদা। এই পর্বতসমৃদ্ধ ভূমিখণ্ডটি এ কারণে "অলৌকিক ভূমিখণ্ড" নামে সুপরিচিত। এ ধরণের ভূমিরুপ সৃষ্টির কারণ হিসেবে একটি প্রকল্পে বলা হয়েছে, সংঘর্ষের সময় সৃষ্ট অভিঘাত তরঙ্গ সমগ্র গ্রহে ছড়িয়ে পড়ে এবং যখন তারা ক্যালরিস অববাহিকার প্রতিপাদস্থানসমূহে অভিমুখে মিলিত হয় (একে অন্যের সাথে ১৮০ ডিগ্রী কোণে, যেহেতু দুটি প্রতিপাদস্থান দুই বিপরীত বিন্দুতে থাকে), তখন এত উচ্চ চাপ প্রয়োগ করে যে গ্রহের পৃষ্ঠতলে ক্ষতের সৃষ্টি হয়।[৭] অন্য একটি প্রকল্পে প্রস্তাব করা হয়েছে, ইজেক্টাগুলো এই অববাহিকার প্রতিপাদস্থানসমূহে মিলিত হওয়ার ফলে এ ধরণের ভূমিরুপ সৃষ্টি হয়েছে।
বুধ গ্রহের সমতল ভূমির দুইটি ভিন্ন ভিন্ন বয়স সীমা রয়েছে: অপেক্ষাকৃত কম বয়স্ক সমভূমিটিতে খাদের সংখ্যা কম। কারণ সম্ভবত এই ভূমি সৃষ্টি হয়েছে লাভা দ্বারা পূর্ববর্তী ভূমিখণ্ডগুলো আবৃত হয়ে যাওয়ার পর। সমতল ভূমিসমূহের একটি অস্বাভাবিক বিষয় হচ্ছে এদের মধ্যে আড়াআড়িভাবে বিপুল সংখ্যক সংকোচনজনিত ভাজ রয়েছে। ধারণা করা হয়, যখন গ্রহের অভ্যন্তরভাগ শীতল হচ্ছিল তখন তা সংকৃচিত হতে শুরু করে এবং এর ফলে এর পৃষ্ঠতল পুনরায় ভিন্নভাবে গঠিত হওয়ার চেষ্টা করে। এর ফলে ভাজগুলোর সৃষ্টি হয়। এই ভাজগুলো উপর থেকে খাদ বা সমভূমির চেয়ে স্পষ্টভাবে দেখা যায়। এ থেকে বোঝা যায় ভাজগুলো অপেক্ষাকৃত নবীন।[৮] সূর্য দ্বারা উত্থিত জোয়ার-ভাটার কারণে সৃষ্ট বিস্ফোটের পরিণতি হিসেবে বুধ গ্রহের পৃষ্ঠতল বিভিন্ন বাঁক নেয়। চাাঁদের প্রভাবে পৃথিবীতেও এ ধরণের বিস্ফোট ঘটে। তবে বুধের স্ফীতি পৃথিবীর চেয়ে ১৭% বেশী।[৯] চাঁদের মত বুধের পৃষ্ঠতল মহাশূন্য ওয়েদারিং প্রক্রিয়ার প্রভাবগুলো দ্বারা সম্পূর্ণভাবে আক্রান্ত হয়েছে। সৌর বায়ু এবং ক্ষুদ্র উল্কা দ্বারা বারংবার আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ায় এর প্রতিফলন অনুপাত অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়েছে এবং পৃষ্ঠের প্রতিফলন ধর্ম হ্রাস পেয়েছে।
বুধ গ্রহের পৃষ্ঠতলের গড় তাপমাত্রা হচ্ছে ৪৫২ কেলভিন (৩৫৩.৯°ফারেনহাইট, ১৭৮.৯°সেলসিয়াস)। তবে এই মান স্থানভেদে ৯০ কেলভিন থেকে ৭০০ কেলভিনের মধ্যে উঠানামা করে। দেখা যাচ্ছে বুধ পৃষ্ঠের তাপমাত্রা ৬১০ কেলভিন পর্যন্ত উঠানামা করে যেখানে পৃথিবীতে পৃষ্ঠের তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ৮০ কে পর্যন্ত উঠানামা করতে পারে। এর মূল কারণ বুধের কোন বায়ুমণ্ডল নেই। পৃথিবীর তুলনায় বুধ পৃষ্ঠে সূর্য রশ্মির তীব্রতা ৬.৫ গুণ বেশী। তবে এই সমানুপাতিক সম্পর্কের মধ্যে একটি সৌর ধ্রুবক রয়েছে যার মান ৯.১৩ কিলোওয়াট/বর্গমি.।
বুধ পৃষ্ঠের এত উচ্চ তাপমাত্রা দেখে মনে হতে পারে এতে বরফ থাকার কোন সম্ভাবনা নেই। কিন্তু আশ্চর্যজনক হলেও হলেও এটি সত্যি যে, বৃধ গ্রহে বরফ থাকতে পারে। মেরুর নিকটে অবস্থিত কিছু গভীর খাদের সমতলে সূর্য রশ্মি কখনও সরাসরি পৌঁছায় না। এতে সেখানকার তাপমাত্রা সবসময়ই পৃথিবীর গড় তাপমাত্রার চেয়ে কম থাকে। এতে বরফের সৃষ্টি হয়। পানি থেকে সৃষ্ট বরফ রাডারের সংকেতগুলোকে তীব্রভাবে প্রতিফলিত করে। এ কারণে বুধে বরফের অস্তিত্ব রাডার সংকেতের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা যায়। বুধ গ্রহের মেরুর সন্নিকটে অবস্থিত বরফ খণ্ড পৃথিবী থেকে প্রেরিত রাডার সংকেতকে প্রতিফলিত করেছে।[১০] এই প্রতিফলনের কারণ বরফ ছাড়া অন্য কিছুও হতে পারে। কিন্তু জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মতে এটি বরফ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশী। বিশ্বাস করা হয় বরফাচ্ছাদিত অঞ্চলগুলোতে আবরণের পুরুত্ব মাত্র কয়েক মিটার এবং এই আচ্ছাদনে ১০১৪ – ১০১৫ কেজির মত বরফ রয়েছে। পৃথিবীর ও মঙ্গলের সাথে এর তুলনা করা যেতে পারে। পৃথিবীর এন্টার্কটিকায় বরফের পরিমাণ ৪×10১৮ কেজি এবং মঙ্গলের দক্ষিণ মেরুতে বরফের পরিমাণ প্রায় ১০১৬ কেজি। বুধ গ্রহে বরফের উৎপত্তির কারণ সম্বন্ধে নির্দিষ্ট কিছু জানা যায়নি, তবে দুইটি সম্ভাবনা সবচেয়ে প্রকট: প্রথমত, গ্রহের অভ্যন্তরভাগ থেকে পানির outgassing এবং দ্বিতীয়ত, ধূমকেতুর সাথে সংঘর্ষের ফলে জমা হওয়া বস্তু।[১১]
[সম্পাদনা] বায়ুমণ্ডল
বুধ গ্রহ এত ছোট যে এর পক্ষে কোন দীর্ঘ মেয়াদের জন্য বায়ুমণ্ডল গঠন ও তা ধরে রাখা সম্ভব নয়। কারণ ক্ষুদ্র হওয়ার কারণে এর অভিকর্ষ বল খুবই কম। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় বুধেরও একটি অতি সূক্ষ্ণ ও হালকা বায়ুমণ্ডল রয়েছে যার প্রধান উপাদান হচ্ছে: হাইড্রোজেন, হিলিয়াম, অক্সিজেন, সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম এবং পটাসিয়াম। বায়ুমণ্ডলটি সুস্থিত নয়। এর মধ্যকার পরমাণুগুলো নিরন্তরভাবে হারিয়ে যাচ্ছে এবং আবার বিভিন্ন উৎস থেকে সৃষ্টি হয়ে স্থান পূরণ করে নিচ্ছে। হাইড্রোজেন এবং হিলিয়াম পরমাণু সম্ভবত সৌর বায়ু থেকে উৎপন্ন হয়। সেখান থেকে সৃষ্টি হয়ে এই গ্যাসগুলো বুধের চুম্বক গোলকে ব্যাপ্ত হয়ে যায়, অবশ্য পরে আবার এগুলো মহাশূন্যে হারিয়ে যায়। বুধের ভূ-ত্বকে বিদ্যমান পদার্থগুলোর তেজস্ক্রিয় ভাঙন হিলিয়ামের অন্য একটি উৎস। এই ভাঙন থেকে সোডিয়াম এবং পটাসিয়ামও সৃষ্টি হয়। বুধে সম্ভবত বাষ্পও রয়েছে। এর পৃষ্ঠের সাথে ধূমকেতুগুলোর সংঘর্ষের কারণে এই বাষ্পের সৃষ্টি হয়।[১২]
[সম্পাদনা] চুম্বক গোলক
যদিও বুধ দীর্ঘ ১৭৬ দিনে একবার নিজ অক্ষে আবর্তন করে তথাপি এর একটি অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী এবং আপাতভাবে আঞ্চলিক চৌম্বক ক্ষেত্র রয়েছে। এটি পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের ০.১%।[১৩] বুধের চৌম্বক ক্ষেত্রের উৎপত্তির কারণ পৃথিবীর মত হতে পারে; অর্থাৎ হয়ত বুধেও ঘূর্ণনরত তরল পদার্থ দ্বারা সৃষ্ট এক ধরণের ডায়নামো থেকেই বুধ গ্রহে এই চৌম্বক ক্ষেত্রের সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু বিজ্ঞানীরা বুধের কেন্দ্র কোন তরল পদার্থের উপস্থিতির বিষয়টি নিয়ে বেশ সন্দীহান, কারণ দীর্ঘ ৪.৫ বিলিয়ন বছর ধরে গ্রহটি ধীরে ধীরে শীতল হচ্ছে।[১৪] এখনও কেন্দ্রে তরল থেকে থাকলে তা থাকার একটি কারণ বর্তমানে দাড় করানো হয়েছে। মূলত একটি পদ্ধতির কথা বলা হয়েছে যার মাধ্যমে বুধের কেন্দ্রে তরল কঠিনে রুপান্তরিত হয়নি। হতে পারে, অতি উচ্চ কক্ষীয় উৎকেন্দ্রিকতা বিশিষ্ট পর্যায় চলাকালীন সময়ে জোয়ার-ভাটার প্রভাব কেন্দ্রে কিছু তরল রয়ে যেতে সাহায্য করেছে। আবার এমনও হতে পারে, বুধের বর্তমান চৌম্বক ক্ষেত্র একটি আদি ডায়নামো প্রভাবের অবশিষ্ট হিসেবে রয়ে গেছে, যদিও উক্ত প্রভাবটির কোন অস্তিত্ব বর্তমানে নেই। বর্তমানে চৌম্বক ক্ষেত্র কঠিন হয়ে যাওয়া চৌম্বক পদার্থের ভিতরে জমাটবদ্ধ হয়ে আছে। বুধ গ্রহের চৌম্বক ক্ষেত্র এর চারপাশের সকল সৌর বায়ুকে বিক্ষিপ্ত করার মত যথেষ্ট শক্তিশালী। প্রকৃতপক্ষে এই চৌম্বক ক্ষেত্র গ্রহটির চারপাশে চুম্বক গোলক নামক একটি আস্তরণের সৃষ্টি করেছে সৌর বায়ু যাকে অতিক্রম করতে পারে না। চাঁাদের সাথে বুধের মূল পার্থক্য এখানেই। চাঁদের চৌম্বক ক্ষেত্র বেশ দূর্বল হওয়ায় কোন চুম্বক গোলক নেই, যার ফলে সৌর বায়ু চন্দ্রপৃষ্ঠে চলে আসে অতি সহজেই।
[সম্পাদনা] কক্ষপথ ও ঘূর্ণন
প্রধান গ্রহগুলোর মধ্যে বুধের কক্ষপথ সবচেয়ে উৎকেন্দ্রিক। সূর্য থেকে এর দূরত্ব ৪৬,০০০,০০০ থেকে ৭০,০০০,০০০ কিলোমিটারের মধ্যে থাকে। নিজের কক্ষপথে চারদিকে একবার ঘুরে আসতে এর সময় লাগে ৮৮ দিন। বামে উল্লেখিত চিত্রটিতে বুধের কক্ষপথের উপর উৎকেন্দ্রিকতার প্রভাব দেখানো হয়েছে। এতে বুধের কক্ষপথ একটি বৃত্তাকার কক্ষপথের উপরে স্থাপন করা হয়েছে যার অর্ধ-মুখ্য অক্ষ বুধের সমান। দেখা যাচ্ছে প্রতি পাঁচ দিন অন্তর বুধ গ্রহ বিস্তর দূরত্ব অতিক্রম করে। এ থেকে বোঝা যায় গ্রহটি যখন অনুসূরের নিকটবর্তী হয় তখন এর বেগ সবচেয়ে বেশী থাকে।গোলকের আকৃতি সূর্য থেকে এর দূরত্বের ব্যাস্তানুপাতিক। সূর্য থেকে এর দূরত্বের তারতম্যের কারণ হিসেবে এটিকে উল্লেখ করা যায়। সূর্য থেকে দূরত্বের এই তারতম্যের সাথে গ্রহটির নিজ অক্ষের চারদিকে ঘূর্ণনের ফলে সৃষ্ট স্পিন-কক্ষপথ রেজোন্যান্স একত্রিত হয়ে এর কক্ষপথে তাপমাত্রার ব্যাপক পরিবর্তন ঘটিয়ে থাকে।
বুধের কক্ষপথ পৃথিবীর সমতলের (ভূ-কক্ষ) সাথে ৭° কোণে আনত। বামের চিত্রে এটি দেখানো হয়েছে। পৃথিবী ও সূর্যের মাঝখানে অবস্থানকালীন সময়ে সূর্যের সম্মুখ বরাবর বুধ গ্রহের অতিক্রম কেবল তখনই ঘটতে পারে, যখন গ্রহটি ভূ-কক্ষের সমতলেকে অতিক্রম করে। গড়ে প্রতি ৭ বছরে এ ধরণের ঘটনা ঘটে থাকে। বুধের এক্সিয়াল টিল্ট মাত্র ০.০১°, যা বৃহস্পতির চেয়ে ৩০০ গুণ কম। ৩.১ ডিগ্রীতে অবস্থিত সকল গ্রহের মধ্যে বুধের এক্সিয়াল টিল্টের মান দ্বিতীয় সর্বনিম্ন। এর দ্বারা বোঝা যায়, বুধের বিষুব রেখার সন্নিকটে দণ্ডায়মান একজন পর্যবেক্ষক ভর দুপুড় বেলায় সূর্যকে জেনিথের এক ডিগ্রীর ১০০ ভাগের এক ভাগ দক্ষিণ বা উত্তরেও দেখতে পাবে না। একইভাবে মেরু অঞ্চলে সূর্য দিগন্তের ০.০১° উপরে কখনও উদিত হয় না। বুধের কিছু নির্দিষ্ট বিন্দুতে, পর্যবেক্ষক দেখতে সমর্থ হবেন যে, সূর্য তার সম্পূর্ণ গতিপথের অর্ধেক পর্যন্ত এসে আবার উল্টো দিকে চলতে শুরু করেছে এবং এক পর্যায়ে পরবর্তী উদয়ের পূর্বেই অস্ত গিয়েছে। এই ঘটনাটি বুধ গ্রহের একই দিনে ঘটে। এটি ঘটার নির্দিষ্ট কারণ রয়েছে। অনুসূরের ঠিক চার দিন পূর্বে বুধ গ্রহের কৌণিক বেগ ঘূর্ণন বেগের ঠিক সমান হয়। এর ফলে সূর্যের আর কোন আপাত গতি থাকে না। অনুসূরের পর বুধের কৌণিক বেগ ঘূর্ণন বেগের চেয়ে বাড়তে থাকে। এতে মনে হয় সূর্য স্বাভাবিক গতির উল্টো দিকে চলছে। অনুসূরের চার দিন পর এই বিন্দুগুলোতে সূর্যের গতি আবার আগের মত হয়ে যায়।
সৌর জগতের বয়স যতদিন হয়েছে ততদিনে বুধ গ্রহের উৎকেন্দ্রিকতা ০ থেকে ০.৪৭ পর্যন্ত পরিবর্তীত হয়েছে। বুধের কক্ষপথের সিমুলেশনের মাধ্যমে এটি জানা গেছে। এই বিষয়টি দ্বারাই বুধের স্পিন-কক্ষপথ রেজোন্যান্সের মান ৩.২ হওয়ার ব্যাখ্যা দেওয়া হয়। কারণ এ ধরণের পরিস্থিতি উচ্চ উৎকেন্দ্রিকতা বিশিষ্ট পর্যায়ে উত্থিত হওয়ার কথা।[১৫]
[সম্পাদনা] অনুসূরের অগ্রগমন
এই বিষয়ে মূল নিবন্ধের জন্য দেখুন: বুধের অনুসূরের অগ্রগমন
আমরা জানি বুধের আবর্তন কাল ৮৮ দিন। কিন্তু পৃথিবী থেকে পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে দেখা যায়, এর কক্ষপথের ধীর পরিবর্তন ঘটছে। এই পরিবর্তনটির ব্যাখ্যা দেয়অ হয়েছে বুধের অনুসূর বিন্দুর পরিবর্তনের মাধ্যমে। এই ঘটনাটি বুধের অনুসূরের অগ্রগমন নামে চিহ্নিত। এর পরিমাণ প্রতি ১০০ বছরে ১°৩৩'২০। এই অগ্রগমনের একটি কারণ হচ্ছে ভূ-কক্ষের বিষুবন বিন্দুর অগ্রগমন। এই কারণটিই মুখ্য। এছাড়া শতকরা ৭ থেকে ১০ ভাগ অগ্রগমনের কারণ হচ্ছে অন্যান্য গ্রহের আকর্ষণ। প্রতি একশ বছরে বুধের অনুসূর বিন্দু ৪৩ পরিমাণ অগ্রসর হয়। নিউটনীয় বলবিজ্ঞানের সাহায্যে এর কোন ব্যাখ্যা প্রদান সম্ভব হয় নি। অনেক জ্যোতির্বিজ্ঞানী মনে করতেন বুধ ও সূর্যের মাঝখানে অন্য কোন গ্রহ আছে। যেমন, ফরাসি জ্যোতির্বিজ্ঞানী ল্য ভেরিয়ে ১৮৫৯ সালের পয়লা সেপ্টেম্বর ফ্রেঞ্চ একাডেমিতে যে গবেষণাপত্র জমা দেন তাতে অগ্রগমনের দুইটি সম্ভাব্য কারণ উল্লেখিত ছিল: শুক্র গ্রহের যে ভর আমরা জানি প্রকৃত ভর তা থেকে সামান্য বেশী অথবা বুধ ও শুক্রের মাঝখানে অন্য একটি গ্রহ আছে। প্রথম সম্ভাবনা দিয়ে অগ্রগমন ব্যাখ্যা করা গেলেও সেক্ষেত্রে পৃথিবীর গতিতে নতুন সমস্যা দেখা দেয়। দ্বিতীয় সম্ভবনায় বলা হয়েছে মধ্যখানের এই গ্রহটির আকর্ষণের কারণে অগ্রগমন ঘটে। কিন্তু অতি সূক্ষ্ণ অনেক গবেষণা সত্ত্বেও এ ধরণের কোন গ্রহের অস্তিত্ব আবিষ্কৃত হয় নি। এ থেকে বিজ্ঞানীরা মেনে নেন, এই গতির ব্যাখ্যা নিউটনের চিরায়ত বলবিজ্ঞানের সাহায্যে সমাধান করা সম্ভব নয়। পরবর্তীতে আলবার্ট আইনস্টাইন তার আপেক্ষিকতার সাধারণ তত্ত্বে বলেন, সূর্যের অবস্থিতির জন্য স্থান-কাল মহাশূন্যে একটি বক্রতার সৃষ্টি হয় এবং সাধারণ নিউটনীয় নীতি এই বক্রতারই ফল। সূর্যের চারদিকে উক্ত বক্রপথে যেতে বুধের কক্ষের পরিবর্তন ঘটে, যার ফলে এর অনুসূর বিন্দুর অগ্রগমন ঘটে। এই তত্ত্ব অনুসারে অগ্রগমনের পরিমাণ প্রতি ১০০ বছরে ৪৩.০৩ যা মূল পরিমাণের সাথে সুন্দরভাবে মিলে যায়। তাই বুধের অনুসূরের অগ্রগমন বর্তমানে আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতার সাধারণ তত্ত্বের একটি প্রমাণ হিসেবে গৃহীত হয়েছে।[১৬]
[সম্পাদনা] স্পিন-কক্ষপথ অনুরণন
অনেক বছর যাবৎ মানুষ ধারণা করত, বুধ গ্রহ সূর্যের সাথে একই পর্যায় এবং দশায় tidally locked হয়ে আছে। এ থেকে ধারণা জন্মায়, এটি নিজ কক্ষপথে একবার ঘুরে আসার সময় মাত্র একবার নিজ অক্ষে আবর্তন করে, যার ফলে এর একটি দিকই সবসময় সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে, ঠিক যেমন চাঁদের একটি দিকই সবসময় পৃথিবীর দিকে মুখ করা থাকে। কিন্তু ১৯৬৫ সালে রাডার পর্যবেক্ষণে ধরা পড়েছে এর স্পিন-কক্ষপথ রেজোন্যান্স ৩:২। অর্থাৎ বুধ গ্রহ যে সময়ে সূর্যের চারদিকে দুইটি আবর্তন সম্পন্ন করে সে সময়েই এটি নিজ অক্ষের চারদিকে তিনবার ঘূর্ণন সম্পন্ন করে। এর কক্ষপথের উৎকেন্দ্রিকতা এই অনুরণন সীমাটিকে অনুসূর বিন্দুতে বেঁধে রাখে। সূর্যের জোয়ার-ভাটার প্রভাব যখন সবচেয়ে শক্তিশালী হয় তখন একে বুধের আকাশে প্রায় স্থির দেখায়। একই পর্যায় ও দশায় বুধ গ্রহের এই আবদ্ধ হয়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, বুধ গ্রহ যখন পর্যবেক্ষণের জন্য সবচেয়ে উপযোগী স্থানে থাকে তখন ৩:২ রেজোন্যান্সে এটি যে বিন্দুতে থাকত সেই বিন্দুতেই একে দেখা যায়। ফলে এর একটি দিকই পর্যবেক্ষণ করা যায়। বুধের স্পিন-কক্ষপথ অনুরণন ৩:২ হওয়ার কারণে এর একটি সৌর দিন ১৭৬ পার্থিব দিনের সমান হয়। সৌর দিন বলতে সূর্যের দুইটি মধ্যরেখা অতিক্রমের (meridian transit) মধ্যবর্তী দৈর্ঘকে বোঝায়। অপরদিকে সেখানে এক নাক্ষত্রিক দিনের (ঘূর্ণনের পর্যায়কাল) দৈর্ঘ হচ্ছে ৫৮.৭ দিন। কক্ষপথের বিভিন্ন সিমুলেশনের মাধ্যমে দেখা গেছে মিলিয়ন বছরের মধ্যে বুধের কক্ষপথের উৎকেন্দ্রিকতা ০ থেকে ০.৪৭ -এর মধ্যে অনিয়মিতভাবে উঠানামা করে। এই ঘটনাটি দ্বারা বুধের ৩:২ স্পিন-কক্ষপথ অনুরণনের ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করা হয়। কারণ পর্যায়কালের এত উচ্চ উৎকেন্দ্রিকতার কারণে এ ধরণের পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে।[১৫]
[সম্পাদনা] পর্যবেক্ষণ
বুধ গ্রহের আপাত মান ২.০ (লুব্ধক-এর চেয়ে বেশী) থেকে ৫.৫ এর মধ্যে থাকে।[১৭] সূর্যের অতি নিকঠে অবস্থিত বলে একে পর্যবেক্ষণ করা বেশ দুঃসাধ্য। কারণ সূর্যের অত্যুজ্জ্বল আলোর কারণে অনেকটা সময় বুধকে দেখাই যায় না। ভোর বা সন্ধ্যার ক্ষীণ আলোতেই কেবল বুধকে দেখা যায়। হাবল মহাশূন্য দূরবীন বুধ গ্রহকে কখনই পর্যবেক্ষন করতে পারে না। নিরাপত্তার কারণেই হাবল দূরবীনকে সূর্যের নিকটে নেয়া হয় না।
পৃথিবী থেকে যেমন চাঁদের কলা দেখা যায়, তেমনি বুধেরও কলা রয়েছে। অন্তঃসংযোগে এটি একেবারে নতুন এবং বহিঃসংযোগে পূর্ণ থাকে। কিন্তু নবীন এবং পূর্ণ থাকা অবস্থায় বুধকে দেখা যায় না। কারণ এ সময় এই গ্রহটি সূর্যের সাথেই উদিত হয় এবং অস্ত যায়। কলার প্রথম এবং শেষ চতুর্থাংশ পূর্ব ও পশ্চিম দিকে সর্বোচ্চ দ্রাঘনে (elongation) ঘটে থাকে। বুধ থেকে সূর্যের দূরত্ব যখন অনুসূর থেকে ১৮.৫° দূরে থাকে তখন কলার প্রথম চতুর্থাংশে সর্বোচ্চ দ্রাঘন ঘটে। আর শেষ চতুর্থাংশের ক্ষেত্রে এটি ঘটে অপসূর বিন্দু থেকে ২৮.৩° দূরত্বে। পশ্চিম দিকে যখন সর্বোচ্চ দ্রাঘন ঘটে তখন বুধ সূর্য থেকে সবচেয়ে আগে উদিত হয়। আর পূর্বে সর্বোচ্চ দ্রাঘনের ক্ষেত্রে এটি সূর্য অস্ত যাবার সবচেয়ে পরে অস্ত যায়।
প্রতি ১১৬ দিনে বুধ গ্রহে অন্তঃসংযোগ ঘটে। অবশ্য গ্রহটির উৎকেন্দ্রিক কক্ষপথের কারণে এই সময় ১১১ থেকে ১২১ দিন পর্যন্ত যে কোন দিন হতে পারে। অন্তঃসংযোগের প্রতি পার্শ্বে এর প্রতীপ গতি ৮ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে উঠানামা করতে পারে। এই পর্যবেক্ষণটি অবশ্যই পৃথিবীর সাপেক্ষে হতে হবে। এই উচ্চ পার্থক্যের কারণও গ্রহটির উৎকেন্দ্রিক কক্ষপথ। পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধের তুলনায় দক্ষিণ গোলার্ধে বুধ গ্রহকে ভালভাবে দেখা যায়। কারণ সূর্যের পশ্চিম দিকে বুধের সম্ভাব্য সর্বোচ্চ দ্রাঘন তখনই ঘটে যখন দক্ষিণ গোলার্ধে early autumn থাকে। আবার পূর্বদিকে সর্বোচ্চ দ্রাঘনের সময় দক্ষিণ গোলার্ধে থাকে late winter ঋতু। এই উভয় ক্ষেত্রেই বুধ ভূ-কক্ষের সাথে সর্বোচ্চ মানের কোণ উৎপন্ন করে এবং এর ফলে প্রতিক্ষেত্রে সূর্য উদিত হওয়ার কয়েক ঘন্টা পূর্বে বুধ পৃথিবীর আকাশে উদিত হয় এবং সূর্য অস্ত যাবার কয়েক ঘন্টা পর বুধ অস্ত যায়। এই পরিস্থিতিতে দক্ষিণ গোলার্ধের যে দেশগুলো দক্ষিণ তাপমাত্রা অঞ্চলের অক্ষাংশের মধ্যে অবস্থিত সে দেশগুলো থেকে বুধ গ্রহকে স্পষ্ট দেখা যায়। এর মধ্যে রয়েছে আর্জেন্টিনা এবং নিউজিল্যান্ডের মত দেশগুলো। কিন্তু উত্তর তাপমাত্রা অঞ্চলের অক্ষরেখা বিশিষ্ট স্থানসমূহে রাতের আকাশে বুধ কখনই দিগন্তের উপরে উঠে না। একটি পূর্ণ সূর্যগ্রহণের সময় অন্যান্য কয়েকটি গ্রহ এবং উজ্জ্বল তারার মত বুধ গ্রহকেও স্পষ্ট দেখা যায়।
বুধ যখন গিবাস কলায় অবস্থান করে তখন পৃথিবীর সাপেক্ষে এর উজ্জ্বলতা সবচেয়ে বেশী হয়। অন্য কোন কলায় এই উজ্জ্বলতা পাওয়অ যায় না। বুধ যখন অর্ধচন্দ্র আকৃতির থাকে তখন পৃথিবী থেকে এর দূরত্ব গিবাস কলায় দূরত্বের চেয়ে কম হয়। কিন্তু এই অধিক দূরত্ব থেকেই বুধের সবচেয়ে বেশী অঞ্চল আলোকিত দেখা যায়। শুক্র গ্রহের ক্ষেত্রে ঠিক এর বিপরীতটি সত্য। শুক্র গ্রহকে যখন পৃথিবী থেকে অর্ধচন্দ্র আকৃতির দেখায় তখনই এর উজ্জ্বলতা সবচেয়ে বেশী হয়। কারণ গিবাস কলার তুলনায় এই কলাতেই শুক্র পৃথিবীর সবচেয়ে নিকটে আসে।
[সম্পাদনা] গবেষণা
[সম্পাদনা] প্রাচীন জ্যোতির্বিজ্ঞানী
প্রাচীন ইতিহাসে বুধ গ্রহের প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ অব্দে। তখন মেসোপটেমিয়ায় বসবাসকারী সুমেরীয়দের কাছে এটি উবু-ইদিম-গুদ-উদ নামে পরিচিত ছিল। অবশ্য এর আরও কয়েকটি নাম ছিল তাদের কাছে। সুমেরীয়দের উত্তরসূরী হিসেবে পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠা লাভ করে ব্যাবিলনীয়রা (২০০০ - ৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ)। তারাও প্রাচীনকালে এই গ্রহটি চিহ্নিত করতে সমর্থ হয়। এই পর্যবেক্ষণগুলোর কোন তথ্যসূত্র এখন আর পাওয়া যায়না। তবে ধারণা করা হয় খ্রিস্টপূর্বাব্দ সপ্তম শতাব্দী বা তারও আগে ব্যাবিলনীয়রা এই পর্যবেক্ষণ করেছিল। তারা এই গ্রহকে বলত নাবু বা নেবু। এই নামকরণ তারা করেছিল তাদের পুরাণ অনুসারে দেবতাদের বার্তাবাহকের নামে।[১৮] প্রাচীন গ্রীকরা এর দুইটি নাম দেয়। যখন ভোরের আকাশে একে দেখা যায় তখন এর নাম দেয় এপোলো; আর যখন সন্ধ্যার আকাশে উদিত হয় তখন এর নাম দেয় হার্মিস। অবশ্য গ্রীকরাই প্রথম বুঝতে পেরেছিল যে এপোলো ও হার্মিস নামীয় এই দুটি বস্তু আসলে একই। পিথাগোরাস প্রথম এই প্রস্তাবনাটি করেছিলেন।[১৯]
[সম্পাদনা] ভূমিস্থিত দূরবীন দিয়ে গবেষণা
পৃথিবী থেকে দূরবীনের মাধ্যমে প্রথম পর্যবেক্ষণটি করেছিলেন বিজ্ঞানী গ্যালিলিও গ্যালিলি, সপ্তদশ শতাব্দীতে। তিনি শুক্র গ্রহের কলা পর্যবেক্ষণ করতে সমর্থ হয়েছিলেন; কিন্তু তার দূরবীনটি বুধের কলা দেখার মত শক্তিশালী ছিল না। ১৬৩১ সালে বিজ্ঞানী পিয়েরে গ্যাসেন্ডি সর্বপ্রথম একটি বস্তুকে সূর্যের সামনে দিয়ে অতিক্রম করতে দেখেন। তিনি মূলত সূর্যের সামনে দিয়ে বুধ গ্রহের অতিক্রম দেখতে পান যা সম্পর্কে পূর্বেই ইয়োহান্নেস কেপলার ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। ১৬৩৯ সালে জিওভান্নি বাতিস্তা জুপি একটি দূরবীন ব্যবহার করে পর্যবেক্ষণ করার চেষ্টা করেন, এই বস্তুটির শুক্র গ্রহ ও চাঁদের মত কক্ষপথীয় কলা রয়েছে কি-না। এই পর্যবেক্ষন থেকে নিঃসন্দেহে এটি প্রমাণিত হয় যে, বুধ গ্রহ সূর্যকে কেন্দ্র করে আবর্তন করছে।
জ্যোতির্বিজ্ঞানের জগতে একটি অতি বিরল ঘটনা হচ্ছে পৃথিবীর সাপেক্ষে (অর্থাৎ পৃথিবী থেকে দেখা হলে) একটি গ্রহ অন্য একটি গ্রহের সামনে এসে পড়ে এবং এর ফলে একটি গ্রহ অদৃশ্য হয়ে যায়। এই ঘটনাটিকে অদৃশ্যকরণ বলে। কিন্তু বুধ এবং শুক্র গ্রহ কয়েক শতাব্দী পরপরই একে অপরকে অদৃশ্য করে দেয়। ইতিহাসে হয়ত এ ধরণের ঘটনা বেশ কয়েকবার ঘটেছে। অবশ্য ঐতিহাসিক তথ্যের ভিত্তিতে এই ঘটনার একটি পর্যবেক্ষণের বর্ণনাই পাওয়া যায়। ১৭৩৭ সালের ২৮ মে তারিখে রয়েল গ্রিনিচ মানমন্দিরের বিজ্ঞানী জন বেভিস এরকম একটি অদৃশ্যকরণ পর্যবেক্ষণ করেন।[২০] শুক্র কর্তৃক বুধ গ্রহের পরবর্তী অদৃশ্যকরণের ঘটনা ঘটবে ২১৩৩ সালে।
অন্যান্য গ্রহগুলোর তুলনায় বুধ গ্রহকে অনেক কম পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। ১৮০০ সালে Johann Schröter বুধের পৃষ্ঠতলীয় বৈশিষ্ট্যসমূহ পর্যবেক্ষণ করেন, কিন্তু তিনি এর কক্ষীয় পর্যায় পরিমাপ করেন প্রায় ২৪ ঘন্টা যা ছিল ভুল। ১৮৮০'র দশকে Giovanni Schiaparelli বুধের বিস্তৃত মানচিত্র নির্ণয় করেন এবং বলেন, এর কক্ষীয় পর্যায় ৮৮ দিন। tidal locking-এর সময় বুধের কক্ষীয় পর্যায় ৮৮ দিনই পরিমাপ করা হয়েছিল।[২১] এই ঘটনাটিকে সঙ্কালিক ঘূর্ণন (synchronous rotation) নামে অভিহিত করা হয়। পৃথিবীর উপগ্রহ চাঁদের ক্ষেত্রেও এটি ঘটতে দেখা যায়।
বুধের ঘূর্ণন যে সঙ্কালিক (synchronous) তা সকলেই গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু ১৯৬০-এর দশকে বেতার পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে যখন এই প্রক্রিয়াটি প্রশ্নবিদ্ধ হয় তখন অনেক জ্যোতির্বিজ্ঞানীই বিশেষ আহত হন। এই গ্রহের জোয়ার-ভাটার আবদ্ধতার (tidally locked) কারণে এর অন্ধকার অংশ প্রচণ্ড ঠাণ্ডা হওয়ার কথা। কিন্তু তা থেকে প্রাপ্ত বেতার নিঃসরণ পরিমাপ করে দেখা গেছে অন্ধকার অংশের তাপমাত্রা আকাঙ্ক্ষিত তাপমাত্রার চেয়ে বেশি। অর্থাৎ বুধের অন্ধকার অংশও অতটা ঠাণ্ডা নয়, যতটা মানুষ এককালে মনে করতো। এই পর্যবেক্ষণের কারণেই বুধের সঙ্কালিক ঘূর্ণন বৈশিষ্ট্য সন্দেহের সম্মুখীন হয়। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এর বদলে শক্তিশালী তাপ-বন্টন তত্ত্ব এবং এর মতো আরও বেশ কয়েকটি পদ্ধতির কথা উল্লেখ করতে থাকেন। এসময়, তথা ১৯৬৫ সালে রাডারের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করার ফলস্বরুপ এটি নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছিল যে, বুধের ঘূর্ণনকাল ৫৯ দিন। এই পর্যবেক্ষণের পর ইতালীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানী Giuseppe Colombo লক্ষ্য করেন, ঘূর্ণনকালের এই মান বুধের কক্ষীয় পর্যায়কালের দুই-তৃতীয়াংশ। এর প্রেক্ষিতে তিনি নতুন একটি তত্ত্বের কথা বলেন। তার মতে বুধে স্বাভাবিকের চেয়ে একটু ব্যতিক্রম ধরণের জোয়ার-ভাটা সংক্রান্ত আবদ্ধতার (tidal locking) সৃষ্টি হয়েছে। কারণ স্বাভাবিক আবদ্ধতা থাকলে গ্রহটির ঘূর্ণনকাল ও কক্ষীয় পর্যায়ের অনুপাত ১:১ হওয়ার কথা যা রেজোন্যান্স সৃষ্টি করে থাকে। কিন্তু বুধের ক্ষেত্রে সৃষ্ট টাইডাল লকিংয়ের কারণে এই অনুপাতটি হয়েছে ৩:২। এই অনুপাতটি একটি গ্রহের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট এবং এর কারণেই গ্রহগোলো একটি নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলতে বাধ্য হয়।[২২] Data from Mariner 10 subsequently confirmed this view.[২৩]
ভূ-কেন্দ্রিক পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে সৌর জগতের সবচেয়ে ভিতরের দিকে অবস্থিত এই গ্রহটি সম্বন্ধে আর তেমন কিছু জানা যায়নি। মানুষ যখন বুধের উদ্দেশ্যে মহাজাগতিক সন্ধানী যান প্রেরণ করে তখন এই গ্রহ সম্বন্ধে আরও অনেক কিছু জানা সম্ভব হয়। বর্তমানে বুধের অধিকাংশ মৌলিক ধর্মই মানুষ জানতে পেরেছে। অবশ্য অতি সাম্প্রতিককালে বুধ গ্রহ পর্যবেক্ষণের জন্য আরও শক্তিশালী ও নিখুঁত ভূ-কেন্দ্রিক পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা তৈরী করা হয়েছে। ২০০০ সালে মাউন্ট উইলসন মানমন্দিরে অবস্থিত ৬০-ইঞ্চি দূরবীনের সাহায্যে বুধের পৃষ্ঠতলের বেশ কিছু উচ্চ রিজল্যুশনবিশিষ্ট ছবি তোলা হয়েছে। এমনকি বুধ অভিযানে প্রেরিত মেরিনার মহাকাশযান দ্বারাও এই অংশের কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। মাউন্ট উইলসন মানমন্দির থেকে তোলা এ ধরণের ছবিগুলোকে লাকি ইমেজিং-এর অন্যতম দৃষ্টান্ত হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে।[২৪] এরপর তোলা আরও কিছু ছবির মাধ্যমে বুধে একটি সুবৃহৎ দুই রিং বিশিষ্ট ইমপ্যাক্ট অববাহিকার (double ringed impact bsin) অস্তিত্ব প্রমাণিত হয়েছে। এই অববাহিকাটি এমনকি ক্যালরিস বেসিনের চেয়েও বড়। মেরিনার মহাকাশযানের মাধ্যমে এই বেসিন যে গোলার্ধে অবস্থিত তার ছবি ধারণ করা সম্ভব হয়নি। আপাতত এই বেসিনটির নাম দেয়া হয়েছে স্কিনাকাস অববাহিকা।[২৫]
[সম্পাদনা] সন্ধানী যানের মাধ্যমে গবেষণা
প্রকৃতপক্ষে পৃথিবী থেকে বুধ গ্রহ পর্যবেক্ষণ করতে যেয়ে বেশ কিছু টেকনিক্যাল সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। কারণ পৃথিবীর চেয়ে বুধ অনেক কাছ থেকে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। এজন্যই বিজ্ঞানীরা মহাকাশযান প্রেরণের মাধ্যমে উচ্চতর গবেষণার দিকে নজর দেন। বুধের উদ্দেশ্যে পৃথিবী থেকে প্রেরিত একটি মহাকাশযানকে সূর্যের মহাকর্ষীয় বিভব উৎসের দিকে অবশ্যই ৯১ মিলিয়ন কিলোমিটার পথ ভ্রমণ করতে হবে। বুধের নিকট দিয়ে অতিক্রমকারী একটি Hohmann transfer orbit -এর ভিতর প্রবেশ করতে হলে সন্ধানী যানটিকে একটি নির্দিষ্ট গতিবেগ অর্জন করতে হবে। পৃথিবীর কক্ষপথ থেকে বেরোবার সময় এর বেগ থাকে পৃথিবীর কক্ষীয় বেগের সমান অর্থাৎ প্রায় ৩০ কিমি/সে। বুধের পাশের Hohmann transfer orbit-এ প্রবেশ করতে যে বেগ প্রয়োজন তা অর্জনের জন্য এক্ষেত্রে বেগের প্রচুর পরিবর্তন করতে হয়, যতটা অন্য কোন গ্রহে অভিযানের ক্ষেত্রে করতে হয়না। এজন্যই বুধ অভিযান অন্যান্য অভিযানের তুলনায় বেশি কষ্টকর।
সূর্যের বিভব উৎসের তীব্রতা কমে যাওয়ার কারণে যে বিভব শক্তি বিমুক্ত হয় তা গতিশক্তিতে পরিণত হয়। এর ফলে বুধের পাশ দিয়ে খুব দ্রুত চলে যাওয়া ঠেকাতে হলে মহাকাশযানের বেগে আরও বেশি পরিবর্তন আনতে হবে। উপরন্তু বুধের পৃষ্ঠে নিরাপদে অবতরণ করতে হলে সন্ধানী যান বহনকারী রকেটকে সম্পূর্ণভাবেই তার নিজস্ত মোটরের উপর নির্ভর করতে হয়। কারণ বুধের বায়ুমণ্ডল অতি ক্ষীণ হওয়ায় তা অ্যারোব্রেকিং-এর সুবিধা পাবেনা। প্রকৃতপক্ষে পুরো সৌর জগৎ অতিক্রম করতে একটি মহাকাশযানকে যে পরিমাণ শক্তি সরবরাহ করতে হয় তার চেয়ে বুধে অবতরণ করাতে হলে বেশি শক্তি দিতে হয়। এ কারণেই ছোট্ট এই গ্রহটিতে এ পর্যন্ত মাত্র একটি সন্ধানী যান প্রেরণ করা সম্ভব হয়েছে।
[সম্পাদনা] মেরিনার ১০
এই বিষয়ে মূল নিবন্ধের জন্য দেখুন: মেরিনার ১০
বুধ গ্রহ অভিযানে প্রেরিত একমাত্র মাজাগতিক সন্ধানী যানের নাম মেরিনার ১০। মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা ১৯৭৪-৭৫ সালে এই যান প্রেরণ করে।[১৯] কাজটি বেশ কষ্টকর ছিল। এজন্য মেরিনার ১০ শুক্র গ্রহের অভিকর্ষকে কাজে লাগিয়েছে। মূলত শুক্রের অভিকর্ষকে কাজে লাগিয়ে মেরিনার ১০ তার কক্ষীয় বেগকে নিয়ন্ত্রণ করে বুধের দিকে অগ্রসর হতে পেরেছে। মহাকর্ষীয় স্লিংশট নামক এই প্রভাব মেরিনার ১০ই প্রথমবারের মত ব্যবহার করেছে। মেরিনার ১০ প্রথমবারের মত বুধের অতি কাছ থেকে প্রচুর ছবি পাঠাতে সক্ষম হয়েছে। এর ফলে প্রচুর খাদবিশিষ্ট বুধ পৃষ্ঠের প্রকৃত চিত্র সম্বন্ধে জানা সম্ভব হয়েছে। এছাড়া আরও অনেকগুলো ভূ-তাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য আবিষ্কৃত হয়েছে। যেমন সুবৃহৎ খাড়া ঢালু গর্ত। এই গর্তগুলোকে পরবর্তীতে বুধের ঠাণ্ডা লৌহ কেন্দ্রের কারণে সৃষ্ট বলে বর্ণনা করা হয়েছে।[২৬] দুর্ভাগ্যবশত মেরিনার ১০এর কক্ষীয় পর্যায় ঠিক বুধের ৩ নাক্ষত্রিক দিনের সমান ছিল। এর কারণে মেরিনার ১০ যখনই বুধের কাছাকাছি হতে পেরেছে তখন সবসময়ই বুধের একটিমাত্র পৃষ্ঠ মহাকাশযানটির সামনে আসতে পেরেছে। ফলস্বরুপ বুধের সমগ্র পৃষ্ঠের মাত্র ৪৫% মানচিত্রের মাধ্যমে চিত্রিত করা সম্ভব হয়েছে।
সন্ধানী যানটি তিন তিনবার বুধের খুব সন্নিকটে যেতে পেরেছিল। এর মধ্যে নিকটতম ছিল বুধ পৃষ্ঠের ৩২৭ কিমি দূর পর্যন্ত। প্রথমবার কাছে যাওয়ার মাধ্যমে মেরিনার ১০ বুধে একটি অভাবনীয় চৌম্বক ক্ষেত্রের অস্তিত্ব আবিষ্কার করে। ভূ-তত্ত্ববিদরা সবাই এতে আশ্চর্য হয়েছিলেন। তারা দেখেন বুধের ঘূর্ণন বেগ যা ধরা হয়েছিল তার চেয়ে বেশ খানিকটা ধীর। এর ফলে উক্ত চৌম্বক ক্ষেত্রের মাধ্যমে সেখানে একটি ডায়নামো ক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। দ্বিতীয়বার যখন মেরিনার ১০ বু:এর খুব সন্নিকটে যায় তখন বুধ পৃষ্ঠের প্রচুর ছবি তোলা সম্ভব হয়। কিন্তু তৃতীয়বার নিকটবর্তী হওয়াটা ছিল আরও কার্যকরী। কারণ তখন গ্রহটির চৌম্বক ধর্ম সম্বন্ধে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপাত্ত জানা সম্ভব হয়। উপাত্তগুলো থেকে বোঝা যায়, গ্রহটির চৌম্বক ক্ষেত্র অনেকটা পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের মত যা গ্রহের চারপাশের সৌর বায়ুকে পথচ্যুত করতে পারে। অবশ্য বুধের চৌম্বক ক্ষেত্রের উৎপত্তি সম্বন্ধে এখনও বিতর্ক রয়ে গেছে এবং এ সম্বন্ধে বেশ কয়েকটি তত্ত্ব উপস্থাপিত হয়েছে। শেষবারের মত বুধের সন্নিকটে যাওয়ার পর মেরিনার ১০-এর জ্বালানী প্রায় ফুরিয়ে যায়। এর ফলে পৃথিবী থেকে এই অভিযানের নিয়ন্ত্রণ রক্ষা কষ্টসাধ্য হয়ে উঠে। অবশেষে পৃথিবীর জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা অভিযানের কার্যকলাপ বন্ধ করে দেয়। মূলত পৃথিবী থেকে সংকেত দেয়া হয়েছিল যেন, মেরিনার ১০ নিজেই নিজের কার্যকলাপ বন্ধ করে দেয়। ধারণা করা হয় মেরিনার ১০ এখনও সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরছে এবং প্রতি কয়েকমাসে একবার করে বুধ গ্রহের সন্নিকটে যাচ্ছে।[২৭]
[সম্পাদনা] মেসেঞ্জার
এই বিষয়ে মূল নিবন্ধের জন্য দেখুন: মেসেঞ্জার
বুধের উদ্দেশ্যে নাসা কর্তৃক প্রেরিত দ্বিতীয় অভিযান ছিল মেসেঞ্জার (ME S S EN GE R - MErcury Surface, Space ENvironment, GEochemistry, and Ranging) যা ২০০৪ সালের আগস্ট ৩ তারিখে প্রেরিত হয়। ।ঐখঠী বোয়িং ডেল্টা ২ রকেটের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের কেপ ক্যানাভেরাল মহাশূন্য স্টেশন থেকে এটি প্রেরণ করা হয়েছিল। এই সন্ধানী যানটি বেশ কয়েকবার বুধের সন্নিকটে যেতে সমর্থ হবে বলে মনে করা হচ্ছে। একে এমনভাবে তৈরী করা হয়েছে যাতে তা সুনির্দিষ্ট প্রাসে চলার মাধ্যমে বুধের চারদিকে নিজস্ব একটি কক্ষপথ তৈরীতে সমর্থ হয়। ২০০৫ সালের আগস্ট মাসে এটি পৃথিবীর কাছ দিয়ে উড়ে যায় এবং ২০০৭ সালের অক্টোবর ও জুন মাসে শুক্র গ্রহের কাছ দিয়ে উড়ে যায়। এই যানটি বুধের নিকট দিয়ে তিন তিনবার উড়ে যাবে বলে শিডিউল করা হয়েছে। এউ উড়ে যাওয়ার সময়গুলো হবে জানুয়ারি ২০০৮, অক্টোবর ২০০৮ এবং সেপ্টেম্বর ২০০৯। এর পর তা ২০১১ সালের মার্চ মাসে বুধ গ্রহের চারপাশে কক্ষপথে প্রবেশ করবে।
মেসেঞ্জারকে পাঠানো হয়েছে মূলত বুধের ছয়টি মৌলিক বিষয়ে অনুসন্ধান করার জন্য। এগুলো হচ্ছে: বুধের উচ্চ ঘনত্ব, এর ভূতাত্ত্বিক ইতিহাস, এর চৌম্বক ক্ষেত্রের প্রকৃতি, এর কেন্দ্রের গঠন, এর মেরু অঞ্চলসমূহে আসলেই বরফ রয়েছে কিনা, এবং এর পাতলা বায়ুমণ্ডল কোথা থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে। এই বিষয়গুলোকে সামনে রেখে সন্ধানী যানটিতে মেরিনার ১০-এর চেয়ে আরও শক্তিশালী ইমেজিং যন্ত্রপাতি সন্নিবেশিত করা হয়েছে যাতে বুধের আরও কাছ থেকে অপেক্ষাকৃত অধিক রিজল্যুশনবিশিষ্ট ছবি তোলা যায়। এছাড়া এতে রয়েছে যুতসই বর্ণালীবীক্ষণ যন্ত্র যার সাহায্যে বুধের ভূত্বকে মৌলসমূহের প্রাচুর্য নির্ণয় করা সম্ভব, রয়েছে ম্যাগনেটোমিটার এবং আয়নিত কণিকাসমূহের গতিবেগ নির্ণয়ের যন্ত্রাবলী। সন্ধানী যানটি যখন বুধকে কেন্দ্র করে তার কক্ষপথ বরাবর আবর্তন করবে তখন এর গতিবেগের সূক্ষ্ণতম পরিবর্তন পরিমাপের জন্য এই গতিমাপক পন্ত্রগুলো দেয়া হয়েছে। এই পরিবর্তন পরিমাপের মাধ্যমে বুধের অভ্যন্তরীন গঠন সম্বন্ধে বিস্তারিত জানা যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।[২৮]
[সম্পাদনা] বেপিকলম্বো
এই বিষয়ে মূল নিবন্ধের জন্য দেখুন: বেপিকলম্বো
জাপান ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির সাথে যৌথভাবে একটি অভিযানের পরিকল্পনা করছে যা বেপিকলম্বো নামে পরিচিত। এই অভিযানে দুই সন্ধানী যান ব্যবহৃত হবে যারা বুধের কক্ষপথ পরিভ্রমণ করবে। দুটি সন্ধানী যানের একটি বুধের মানচিত্র প্রণয়নের কাজ করবে এবং অপরটি এর ম্যাগনেটোস্ফিয়ার নিয়ে গবেষণায় ব্যবহৃত হবে। একটি ল্যান্ডার সহ মূল পরিকল্পনাটি করা হয়ে গেছে। ২০১৩ সালে রাশিয়ার সয়ুজ রকেটসমূহ এই সন্ধানী যানটি বহনের কাজ করবে। মেসেঞ্জারের সাথেই বেপিকলম্বো বেশ কয়েকবার বুধের অতি সন্নিকটে যাবে। একইভাবে এটি চাঁদ এবং শুক্র গ্রহের নিকট দিয়ে উড়ে গিয়ে বুধের কক্ষপথে প্রবেশ করার পূর্ব বেশ কয়েকবার এর নিকটবর্তী হবে। আনুমানিক ২০১৯ সালের দিকে এটি বুধের কক্ষপথে প্রবেশ করবে এবং প্রায় এক বছর ধরে একে অধ্যয়ন করবে।
সন্ধানী যান দুটি মেসেঞ্জারের মতই একটি বর্ণালীবীক্ষণ অ্যারে বহন করবে এবং গ্রহটিকে অনেকগুলো তরঙ্গদৈর্ঘ্যে পর্যবেক্ষণ করবে। ধর্তব্য তরঙ্গদৈর্ঘ্যের মধ্যে রয়েছে অবলোহিত, অকিবেগুণী, রঞ্জণ রশ্মি এবং গামা রশ্মি। কার্যকরভাবে বুধ গ্রহ অধ্যয়নের পাশাপাশি বিজ্ঞানীরা বেপিকলম্বোর মাধ্যমে আরেকটি কাজ করার ব্যাপারে আশাবাদী। এটি হচ্ছে সূর্যের সাথে সন্ধানী যানটির নৈকট্যকে ব্যবহার করে সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্বের ভবিষ্যদ্বাণীগুলো পরীক্ষা করা। বেশ নিখুঁতভাবে এটি করা সম্ভব বলে মনে করা হচ্ছে। এই অভিযানটির নামকরণ করা হয়েছে বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী গিউসেপ (বেপি) কলম্বোর (Giuseppe Colombo) নামানুসারে। তিনিই প্রথম সূর্যের সাথে বুধের কক্ষীয় রেজোন্যান্স নির্ণয় করেছিলেন। এছাড়াও তিনি ১৯৭৪ সালে মেরিনার ১০ মহাকাশযানের অভিকর্ষ-প্রভাবিত প্রাস নির্ণয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন।[২৯]
[সম্পাদনা] তথ্যসূত্র
- ↑ Mercury. U.S. Geological Survey. Retrieved on 2006-11-26.
- ↑ Lyttleton, R. A.; On the Internal Structures of Mercury and Venus, Astrophysics and Space Science, Vol. 5 (1969), p. 18
- ↑ ৩.০ ৩.১ Benz, W.; Slattery, W. L.; Cameron, A. G. W.; Collisional stripping of Mercury’s mantle, Icarus, Vol. 74 (1988), pp. 516-528
- ↑ Schenk, P.; Melosh, H. J.; Lobate Thrust Scarps and the Thickness of Mercury’s Lithosphere, Abstracts of the 25th Lunar and Planetary Science Conference (1994), 1994LPI....25.1203S
- ↑ Cameron, A. G. W.; The partial volatilization of Mercury, Icarus, Vol. 64 (1985), pp. 285-294.
- ↑ Weidenschilling, S. J.; Iron/silicate fractionation and the origin of Mercury, Icarus, Vol. 35 (1987), pp. 99-111
- ↑ Schultz, P. H.; Gault, D. E.; Seismic effects from major basin formations on the moon and Mercury, The Moon, Vol. 12 (February 1975), pp. 159-177
- ↑ Dzurisin, D.; The tectonic and volcanic history of Mercury as inferred from studies of scarps, ridges, troughs, and other lineaments, Journal of Geophysical Research, Vol. 83 (1978), pp. 4883-4906
- ↑ Van Hoolst, T.; Jacobs, C.; Mercury’s tides and interior structure, Journal of Geophysical Research, Vol. 108 (2003), p. 7.
- ↑ Slade, M. A.; Butler, B. J.; Muhleman, D. O.; Mercury radar imaging — Evidence for polar ice, Science, Vol. 258 (1992), pp. 635-640.
- ↑ Rawlins, K.; Moses, J. I.; Zahnle, K. J.; Exogenic Sources of Water for Mercury’s Polar Ice, DPS, Vol. 27 (1995), p. 2112
- ↑ Hunten, D. M.; Shemansky, D. E.; Morgan, T. H.; The Mercury atmosphere, In: Mercury (A89-43751 19-91). University of Arizona Press (1988), pp. 562-612
- ↑ Seeds, Michael A. (2004). Astronomy: The Solar System and Beyond, 4th, Brooks Cole. ISBN 0534421113.
- ↑ Spohn, T.; Breuer, D.; Core Composition and the Magnetic Field of Mercury, American Geophysical Union, Spring Meeting 2005
- ↑ ১৫.০ ১৫.১ Correia, A. C. M.; Laskar, J.; Mercury’s capture into the 3/2 spin-orbit resonance as a result of its chaotic dynamics, Nature, Vol. 429 (2004), pp. 848-850.
- ↑ বিশ্ব ও সৌরজগৎ: মোহাম্মদ আবদুল জব্বার। বুয়েট থেকে প্রকাশিত সংস্করণ। পৃ. ১৬৬ - ১৬৭
- ↑ Espenak, F.; Twelve Year Planetary Ephemeris: 1995–2006, NASA Reference Publication 1349
- ↑ Mercury and ancient cultures (2002), JHU/APL
- ↑ ১৯.০ ১৯.১ Dunne, J. A.; and Burgess, E.; The Voyage of Mariner 10 — Mission to Venus and Mercury, NASA History Office publication SP-424 (1978)
- ↑ Sinnott, R. W.; Meeus, J.; John Bevis and a Rare Occultation, Sky and Telescope, Vol. 72 (1986), p. 220
- ↑ Holden, E. S.; Announcement of the Discovery of the Rotation Period of Mercury [by Professor Schiaparelli], Publications of the Astronomical Society of the Pacific, Vol. 2 (1890), p. 79
- ↑ Colombo, G., Rotational Period of the Planet Mercury, Nature, Vol. 208 (1965), p. 575
- ↑ SP-423 Atlas of Mercury. NASA. Retrieved on 2007-03-09.
- ↑ Dantowitz, R. F.; Teare, S. W.; Kozubal, M. J.; Ground-based High-Resolution Imaging of Mercury, Astronomical Journal, Vol. 119 (2000), pp. 2455-2457
- ↑ Ksanfomality, L. V. (2006). "Earth-based optical imaging of Mercury". Advances in Space Research 38: 594.
- ↑ NASA - 2006 Transit of Mercury. Retrieved on March 28, 2007.
- ↑ NSSDC Master Catalog Display: Mariner 10. Retrieved on October 20, 2005.
- ↑ Johns Hopkins University’s MESSENGER mission web pages. Retrieved on 27 April, 2006.
- ↑ ESA Science & Technology: BepiColombo. Retrieved on 27 April, 2006.
[সম্পাদনা] আরও দেখুন
- বুধ গ্রহে অভিযান
[সম্পাদনা] বহিঃসংযোগ
- নাইন প্ল্যানেট তথ্যাবলী
- নাসার বুধ গ্রহ সম্বন্ধনীয় উপাত্ত সংগ্রহ
- ‘বেপিকলম্বো’, এসার বুধ অভিযান
- Merkur(dt.)
- ‘মেসেঞ্জার’, নাসার বুধ অভিযান
- SolarViews.com — বুধ গ্রহ
- গ্রহসমূহ — বুধ গ্রহ ছোটদের জানার জন্য বুধ গ্রহের তথ্যাবলী
- বুধ গ্রহ ওয়ার্ল্ড বুক অনলাইন রেফারেন্স সেন্টার
- জিওডি সাইটে বুধ গ্রহ বিশ্বের সার্চ ইঞ্জিন যা নাসা ওয়ার্ল্ড ওয়াইন্ড, সেলেস্টিয়া ও অন্যান্য প্রয়োগগুলোকে সমর্থন করে।
সূর্য • সৌর গোলক সৌর আবরণ হেলিওপজ হাইড্রোজেন দেয়াল |
গ্রহসমূহ ☾ = চাঁদসমূহ ∅ = বলয়সমূহ |
বুধ | শুক্র | পৃথিবী ☾ | মঙ্গল ☾ | |
বৃহস্পতি ☾ ∅ | শনি ☾ ∅ | ইউরেনাস ☾ ∅ | নেপচুন ☾ ∅ | |||
বামন গ্রহসমূহ | সেরেস | প্লুটো ☾ | এরিস ☾ | |||
ক্ষুদ্র সৌর জাগতিক বস্তুসমূহ |
গ্রহাণু (ক্ষুদ্র গ্রহ) |
গ্রহাণু শ্রেণী ও পরিবার: ভালকানয়েডসমূহ · পৃথিবীর নিকটবর্তী গ্রহাণু · গ্রহাণু বেষ্টনী বৃহস্পতি ট্রোজানসমূহ · সেন্টাউর · নেপচুন ট্রোজান · গ্রহাণু চাঁদ · উল্কা |
||||
আরও দেখুন: গ্রহাণুসমূহের তালিকা, অর্থ এবং গ্রহাণুসমূহের নামের উচ্চারণ. | ||||||
নেপচুন- উত্তর |
কুইপার বেষ্টনী – প্লুটিনো: অরকাস · ইক্সিয়ন – Cubewano: ২০০২ ইউএক্স২৫ · ভারুনা · ১৯৯২ কিউবি১ · ২০০২ টিএক্স৩০০ · ২০০৩ ইএল৬১ · কোয়াওর · ২০০৫ এফওয়াই৯ · ২০০২ এডব্লিউ১৯৭ |
|||||
বিক্ষিপ্ত চাকতি: ২০০২ টিসি৩০২ · ২০০৪ এক্সআর১৯০ · সেডনা | ||||||
ধূমকেতু | পর্যাবৃত্ত এবং অপর্যাবৃত্ত ধূমকেতুসমূহের তালিকা · ডেমোক্লয়েড · উওর্ট মেঘ | |||||
আরও দেখুন: জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক বস্তু, সৌর জগতের বস্তুসমূহের তালিকা, যার ভিত্তি হচ্ছে; ব্যাসার্ধ্য অথবা ভর, এবং জ্যোতির্বিজ্ঞান প্রবেশদ্বার |