জীববিজ্ঞান
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
জীববিজ্ঞান বিজ্ঞানের একটি শাখা যাতে জীব ও জীবন সংক্রান্ত গবেষণা করা হয়। এর পাশ্চাত্য প্রতিশব্দ Biology প্রথম ১৮০০ সালে জার্মানিতে ব্যবহৃত হয় এবং পরবর্তীতে ফরাসি প্রকৃতিবিদ জঁ-বাতিস্ত দ্য লামার্ক জীবিত বস্তু সংক্রান্ত অনেকগুলি শাস্ত্রের ধারক নাম হিসেবে এটির প্রচলন করেন। পরবর্তীতে ইংরেজ প্রাণীবিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদ টমাস হেনরি হাক্সলি জীববিজ্ঞানকে একটি একত্রীকারক শাস্ত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। হাক্সলি জোর দিয়ে বলেন যে উদ্ভিদ ও প্রাণী বিষয়ক শাস্ত্রের প্রথাগত বিভাজন অর্থহীন এবং সমস্ত জীবিত বস্তু একত্রে আলোচনা করা উচিত। হাক্সলির এই ধারণা আজ আরও বেশি করে প্রযোজ্য, কেননা বিজ্ঞানীরা বুঝতে পেরেছেন যে অনেক নিম্ন স্তরের জীব প্রাণী বা উদ্ভিদ কোনটাই নয়। বর্তমানে জীববিজ্ঞান আণবিক, কোষীয়, জীবদেহ ও জীবসংগ্রহ - এই চারটি মূল স্তরক্রমে বিভক্ত।
আণবিক জীববিজ্ঞান, যাতে জীবপদার্থবিজ্ঞান ও জীবরসায়ন অন্তর্গত শাখা থেকে আধুনিক জীববিজ্ঞানের সবচেয়ে মৌলিক অবদানগুলি এসেছে। সমস্ত জীবিত বস্তুর প্রধানতম অণুসমূহ যথা নিউক্লিয়িক অ্যাসিড ও প্রোটিন-এর গঠন ও কাজ সম্পর্কে এখন আমরা অনেক কিছু জানি। বংশগতির কৌশল নির্ধারণ ছিল আধুনিক বিজ্ঞানের অন্যতম প্রধান আবিষ্কার। আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার হল কীভাবে জীবদেহের অণুগুলি বিপাক ক্রিয়া সম্পাদন করে জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি প্রক্রিয়া করে।
কোষ জীববিজ্ঞান আণবিক জীববিজ্ঞানের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। জীবিত বস্তুর কাঠামোগত একক কোষের কার্যপদ্ধতি বোঝার জন্য কোষ জীববিজ্ঞানীরা আণবিক পর্যায়ে কোষের বিভিন্ন অংশের গবেষণা করেন। জীবদেহ-সংক্রান্ত জীববিজ্ঞান, একইভাবে, কোষ জীববিজ্ঞানের সাথে জড়িত, কারণ একটি বহুকোষীয় জীব কীভাবে আচরণ করবে তা নির্ভর করে তার কোষগুলির কার্যাবলী ও এদের মধ্যকার মিথষ্ক্রিয়ার উপর। বহুকোষীয় জীবদেহের গবেষণার মধ্যে রয়েছে এগুলির বৃদ্ধি ও বিকাশ (বিকাশ জীববিজ্ঞান), এবং এগুলি কীভাবে কাজ করে (শারীরবিদ্যা)। এছাড়াও মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্র সংক্রান্ত গবেষণা (স্নায়ুশারীরবিদ্যা) এবং প্রাণী আচরণ (ethology) গুরুত্বপূর্ণ।
জীবসমষ্টি জীববিজ্ঞান ১৯৭০-এর দশকে এসে জীববিজ্ঞানের একটি অন্যতম প্রধান শাখা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই শাখার কেন্দ্রীয় শাস্ত্র হল বিবর্তনমূলক জীববিজ্ঞান, যাতে বিজ্ঞানী চার্লস ডারউইনের অবদান বহুদিন পরে যথাযথ মর্যাদা পায়। জীবসমষ্টি বংশগতিবিদ্যা (Population genetics), যেখানে জীবসমষ্টিগুলির ভেতরে জীনের পরিবর্তন গবেষণা করা হয়, এবং বাস্তুবিজ্ঞান, যেখানে প্রাকৃতিক আবাসস্থলে জীবসমষ্টির আচরণ গবেষণা করা হয়, ১৯৩০-এর দশক থেকে শাস্ত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। এই দুইটি শাস্ত্র ১৯৬০-এর দশকে জীবসমষ্টি জীববিজ্ঞান নামের এক দ্রুত বর্ধনশীল নতুন শাস্ত্র গঠন করে। এদের সাথে সম্পর্কিত একটি নতুন প্রাণী-আচরণ বিষয়োক শাস্ত্র হচ্ছে সমাজজীববিজ্ঞান, যাখানে প্রাণীদের মধ্যকার সামাজিক মেলামেশা এদের জীনের উপর কতটা প্রভাব ফেলে তার উপর গবেষণা করা হয়।
জীববিজ্ঞানে মানুষের উপরও আণবিক, কোষীয় ও দৈহিক পর্যায়ে গবেষণা করা হয়। এই জ্ঞান মানুষের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঈ সুরক্ষার কাজে চিকিৎসাশাস্ত্রে কাজে লাগানো হয়। রীতি অনুযায়ী মানুষদেরকে সাধারণত জীববিজ্ঞানের আওতায় ধরা হয় না। নৃবিজ্ঞান ও অন্যান্য সামাজিক বিজ্ঞানে মানুষের বিভিন্ন দিক আলোচনা করা হয়।
[সম্পাদনা] আরও দেখুন
|
---|
শারীরস্থান (Anatomy) | মহাজাগতিক জীববিজ্ঞান (Astrobiology) | প্রাণরসায়ন (Biochemistry) | জৈব তথ্যবিজ্ঞান (Bioinformatics) | উদ্ভিদবিজ্ঞান (Botany) | কোষ জীববিজ্ঞান (Cell biology) | পরিবেশবিজ্ঞান (Ecology) | বিকাশগত জীববিজ্ঞান (Developmental biology) | বিবর্তনমূলক জীববিজ্ঞান (Evolutionary biology) | বংশগতি বিজ্ঞান (Genetics) | জিনোমিক্স (Genomics) | সামুদ্রিক জীববিজ্ঞান (Marine biology) | মানব জীববিজ্ঞান (Human biology) | অণুজীববিজ্ঞান (Microbiology) | আণবিক জীববিজ্ঞান (Molecular biology) | জীবনের উৎস (Origin of life) | জীবাশ্মবিজ্ঞান (Paleontology) | পরজীবীবিজ্ঞান (Parasitology) | রোগতত্ত্ব (Pathology) | শারীরবৃত্ত (Physiology) | শ্রেণীকরণবিদ্যা (Taxonomy) | প্রাণীবিজ্ঞান (Zoology) |