সার্চ ফর এক্সট্রা টেরেস্ট্রিয়াল ইন্টেলিজেন্স
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
সার্চ ফর এক্সট্রা টেরেস্ট্রিয়াল ইন্টেলিজেন্স (Search for Extra-Terrestrial Intelligence) কে সংক্ষেপে সেটি (SETI) বলা হয়। এর বাংলা করলে দাঁড়ায় বহির্জাগতিক বুদ্ধিমত্তার অনুসন্ধান। এটি হল বহির্জাগতিক প্রাণের সন্ধান লাভের জন্য মানব পরিচালিত এক ধরণের প্রকল্প। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় সেটির আওতায় বেশ কয়েকটি গবেষণা হয়েছে এবং এ নিয়ে নতুন আরও গবেষণা শুরু হয়েছে। সেটির মূল লক্ষ্য হল মহাকাশ গবেষণার মাধ্যমে মহাবিশ্বের দূরবর্তী কোন গ্রহে বসবাসকারী কোন সভ্যতা কর্তৃক প্রেরিত সংকেতের অনুসন্ধান এবং বিশ্লেষণ। সংকেত সনাক্তকারণের এই বিজ্ঞানটি প্রায় সকল বিজ্ঞানীর অনুমোদনের সাপেক্ষেই দুর্বোধ্য বিজ্ঞান (Hard science) হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।
আকাশ হতে প্রাপ্ত বিভিন্ন সংকেতের বিশ্লেষণ করে তার কোনটি বুদ্ধিমান তা প্রথমবারের মত বের করা সত্যিই দুঃসাধ্য এবং এর সঠিক প্রক্রিয়াটি অনেকটা দুর্বোধ্যও বটে। কারণ প্রাপ্ত সংকেতটির দিক, বর্ণালী এবং যোগাযোগ প্রক্রিয়াগত বৈশিষ্ট্য ঠিক কেমন হলে তাকে বুদ্ধিমান প্রাণী হতে আগত বলা যেতে পারে তা এখন পর্যন্ত আমাদের অজ্ঞাতই রয়ে গেছে। এই প্রেক্ষাপটে স্বাভাবিক বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া অনুসারে সেটি প্রথমত অনুমানের মাধ্যমে গবেষণা প্রক্রিয়াটিকে সংক্ষেপিত করে নিয়ে আসে। এই কারণেই এখন পর্যন্ত কোন সম্পূর্ণ অনুসন্ধান প্রক্রিয়ার মুখ দেখেনি সেটি।
সূচিপত্র |
[সম্পাদনা] সাধারণ আলোচনা
মহাবিশ্বের দূরবর্তী কোন গ্রহের অন্য এক সভ্যতার সাথে যোগাযোগ স্থাপন করা এখন পর্যন্ত মানুষের ক্ষমতার বাইরে (এ ধরণের কিছু কাল্পনিক অভিযান সম্বন্ধে জানতে দেখুন - অরিয়ন প্রকল্প এবং ডেডালাস প্রকল্প)। তবে বর্তমানে আমাদের হাতে এমন কিছু প্রযুক্তি আসার উজ্জ্বল সম্ভাবনা আছে যার সাহায্যে আমরা একটি শক্তিশালী প্রেরকযন্ত্র (Transmitter) এবং একটি সংবেদনশীল গ্রাহকযন্ত্র (Receiver) ব্যবহার করে বহির্জগতের সেই সব নাগরিকের সাতে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারি আমাদের মতই যাদের যোগাযোগ স্থাপনের প্রবৃত্তি রয়েছে।
[সম্পাদনা] অনুমিতিসমূহ
আমাদের গ্যালাক্সিটির দৈর্ঘ্য এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত পর্যন্ত ১০০,০০০ আলোক বর্ষ এবং এর মাঝে প্রায় ১০০ বিলিয়ন নক্ষত্র রয়েছে। সুতরাং এর সমগ্র অংশ জুড়ে কিছু ক্ষীণ সংকেতের অনুসন্ধান করা বেশ কষ্টসাধ্য কাজ। সেটিকে ম্ভাবন্ময় হয়ে উঠতে হলে প্রয়োজন কিছু উপর্যুপরি অনুমিতি।
সেটির একটি মৌলিক অনুমিতি হল মধ্যম অবস্থা (Mediocrity): এটি এমন একটি ধারণা যার মূলতত্ত্ব হল, অন্যান্য বুদ্ধিমান প্রজাতির সাথে তুলনা করলে মানুষ এই বিশ্বজগতে কোন বিচ্ছিন্ন আগন্তুক নয় বরং এক রকম মধ্যমজাতি এবং মহাবিশ্বের প্রেক্ষাপটে বিরাজমান জীবকুলের একটি প্রতিরুপ মাত্র যা তাদেরই প্রতিনিধিত্ব করে। অর্থাৎ অন্যান্য বুদ্ধিমান প্রাণীর সাথে মানুষের এমন সামঞ্জস্য রয়েছে যে তাদের সাথে মানবজাতির যোগাযোগ স্থাপনের আশা আছে এবং যোগাযোগ স্থাপনের একটি বোধগম্য পন্থা রয়েছে। যদি মধ্যম অবস্থার অনুমিতি সত্য হয় এবং বিশ্বজগতের কোথাও কোন বুদ্ধিমান প্রজাতি থেকে থাকে তাহলে তাদের সাথে মানুষের যোগাযোগ অবশ্যম্ভাবী।
আরেকটি অনুমিতি নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে প্রথমেই বলা যায় যে আমাদের পৃথিবীতে কিংবা আমাদের জ্ঞাত পরিসীমার মধ্যে বিরাজমান সকল প্রাণীরই মূল গাঠনিক পদার্থ হল কার্বন। এর কারণ হল একমাত্র কার্বনেরই সে সব বৈশিষ্ট্য রয়েছে যার কারণে এর যৌগের সংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে বেশী যা সংকরায়ন অনন্য ক্ষমতা থেকে উদ্ভূত। কিন্তু বিজ্ঞানীরা ধারণঅ করছেন যে কার্বন ছাড়া অন্য মৌলেরও প্রাণী হতে পারে। কারণ যদি এমন শর্ত আরোপ করা যায় যে সেই মৌলটিও কার্বনের মত সংকরায়নের মাধ্যমে তার সকল যোজ্যতাকে সর্বক্ষেত্রে কাজে লাগাতে পারবে তাহলে তা থেকেও ৬০ লক্ষের মত যৌগ সৃষ্টি হতে পারে। আর তা থেকে হতে পারে প্রাণী।
আরেকটি অনুমিতি হল সূর্যের মত নক্ষত্রসমূহের দিকে লক্ষ্য করা। অনেক বড় নক্ষত্রসমূহের জীবনসীমা বেশ ছোট হয় বলে এসকল নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে ঘূর্ণায়মান গ্রহে বুদ্ধিমান জীবের বিকাশ ঘটা অনেকটাই অসম্ভব। আবার বেশ ছোট নক্ষত্রসমূহের বিকিরিত তাপশক্তির পরিমাণ এত কম যে কেবল এর অতি নিকটে থেকে আবর্তনরত গ্রহসমূহই কেবল বরফে জমে যায়না। কিন্তু অতি নিকটে আবর্তনরত গ্রহগুলো নক্ষত্রটির সাথে Tidally locked হয়ে যায় যার ফলে এর একটি অংশ আজীবনের জন্য বরফাচ্ছাদিত এবং অন্য অংশ প্রচন্ড উত্তাপে জীবন বিকাশের প্রতিকূল হয়ে যায়। এর সাথে পানির উপস্থিতিও একটি উল্লেখযোগ্য অনুমিতি। কারণ এটি হল একটি সাধারণ অণু যা কার্বন সংশ্লিষ্ট জটিল যৌগ গঠনের জন্য একটি আবশ্যকীয় মাধ্যম এবং উপাদান। আর পানির উপস্থিতিতে কার্বনের জটিল যৌগ গঠনের মাধ্যমেই প্রাণের পরিস্ফুটন ঘটে।
আমাদের ছায়াপথের শতকরা প্রায় ১০ ভাগ নক্ষত্র সূর্যের মত এবং সূর্যের ১০০ আলোকবর্ষ দূরত্বের মধ্যে এ ধরণের প্রায় ১০০০ নক্ষত্র রয়েছে। এই নক্ষত্রগুলোই তাই আন্তঃগ্রহ যোগাযোগ স্থাপনের জন্য গবেষণার প্রধান লক্ষ্যবিন্দু হয়ে উঠেছে। আমাদের জানামতে মাত্র একটি গ্রহেই প্রাণ আছে আর তা হলো আমাদের নিজেদের গ্রহ। আর আমাদের কাছে এমন কোন মানদন্ডও নেই যার মাধ্যমে আমরা মহাকাশের কোন নির্দিষ্ট দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করতে পারি; আর তাই প্রাথমিকভাবে মানুষকে সমগ্র মহাকাশেই অনুসন্ধান পরিচালনা করতে হচ্ছে।
[সম্পাদনা] তড়িৎচৌম্বক বর্ণালীর অনুসন্ধান
ভিন গ্রহের কোন সভ্যতা কর্তৃক প্রেরিত তড়িৎচৌম্বক ট্রান্সমিশনের সন্ধান লাভের জন্য আমাদেরকে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় ও সম্ভাবনাময় বেতার বর্ণালীগুলোর মাধ্যমে গবেষণা চালিয়ে যেতে হবে। কারণ আমরা জানিনা ঠিক কোন মাপের কম্পাঙ্ক ভিনজগতের সভ্যতা কর্তৃক ব্যবহৃত হয়। বৃহৎ ব্যাপ্তির তরঙ্গদৈর্ঘ্যের মধ্য দিয়ে শক্তিশালী সংকেত প্রেরণ অবাস্তব কল্পনা বৈ অন্য কিছু নয়। আর তাই সম্ভাবনাময় সংকেতগুলো অবশ্যই অপেক্ষাকৃত একটি সরু ব্যান্ডের মধ্য দিয়ে প্রেরিত হবে, এটাই স্বাভাবিক। এর অর্থ এই দাঁড়ায় যে মহাকাশের প্রতিটি স্থানাংকের জন্য বৃহৎ পরিসরের কম্পাঙ্কসমষ্টি নিয়ে অনুসন্ধান চালাতে হবে।
তাছাড়া আমরা জানিনা আমাদেরকে ঠিক কি শুনতে হবে কারণ মহাবিশ্বের অন্য কোন সভ্যতা থেকে প্রেরিত সংকেতকে ওধগম্য পর্যায়ে নিয়ে আসার জন্য এবং তা লিপিবদ্ধ করা সম্বন্ধে আমাদের কোন ধারণাই নেই।
[সম্পাদনা] আরও দেখুন
[সম্পাদনা] বহিঃসংযোগ
- সেটি ইনস্টিটিউট
- SETI@home
- দি প্ল্যানেটারি সোসাইটি
- দি সেটি লীগ
- আইএএ সেটি পার্মানেন্ট স্টাডি গ্রুপ
- হোয়ার ইজ এভরিবডি? : আর্থার সি. ক্লার্ক রচিত একটি নিবন্ধ।
- ইন্টারন্যাশনাল একাডেমি অফ অ্যাস্ট্রোনটিক্স
- সেটির মূলনীতি সাউথইস্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট এর ডিপার্টমেন্ট অফ স্পেস স্টাডিস কর্তৃক সংজ্ঞায়িত (পিডিএফ ফাইল)
- হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সেটি প্রকল্প
- দি কলম্বাস অপটিক্যাল সেটি অবজারভেটরি
- ফার্স্ট কন্টাক্ট উইদিন টুয়েন্টি ইয়ার্স: শস্তাক* সেটি: জীবনের সন্ধানে – স্কাই অ্যান্ড টেলিস্কোপ সাময়িকীর ধারাবাহিক রচনা।
- মিলান এম. চিরকোভিক, এবং আর. জে. ব্র্যান্ডবারি, ২০০এন, "ছায়াপথীয় ঢাল, উত্তর জীববৈজ্ঞানিক বিবর্তন, এবং সেটির আপাত ব্যর্থতা"
- ভালো বিজ্ঞানের সন্ধানে: নাসার সেটি প্রকল্প বাতিলিকরণ
- উন্মুক্ত সেটি কর্যক্রম – গেরি জিটলিনের ওয়েবসাইট
- বহির্জাগতিক বুদ্ধিমত্তার অনুসন্ধান (নাসা এসপি-৪১৯, ১৯৭৭)
- ET Might Write, Not Radiate
- SETI radio link-budget range calculator
- তথ্যপ্রযুক্তি এবং সেটি: কম্পিউটার প্রযৃক্তির ভূমিকা
- বহির্জাগতিক জীববিজ্ঞান ও সেটি সম্বন্ধে মার্ক এলোউইজের
- বিগ এয়ার মেমোরিয়াল ওয়েবসাইট - ওয়াও সংকেতের আবিষ্কারক যা গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস-এ আছে।
- এনএএপিও, নর্থ আমেরাকান অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল মানমন্দির
- দ্য সোসাইটি ফর প্ল্যানেটারি সেটি রিসার্চ
- সেটি@হোম প্রশ্নোত্তর
- সেটি কি ভুল পথে যাচ্ছে