চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য্য
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য্য (জন্ম ৩৪০ খ্রীষ্টপূর্ব, শাসনকাল ৩২০-২৯৮ খ্রীষ্টপূর্ব) বংশ পরিচয় নিয়ে মতান্তর আছে। কেউ মনে করেন তিনি কোন নন্দ যুবরাজ ও তার পরিচারিকা 'মুরা'র সন্তান ছিলেন। মৌর্য্য কথার উৎপত্তি মুরা থেকেই। কেউ কেউ আবার মনে করেন তিনি নেপালের তরাই অঞ্চলের এক প্রজাতন্ত্রের থেকে এসেছিলেন। আবার কেউ কেউ আবার মনে করেন তিনি গান্ধার অঞ্চলের এক প্রজাতন্ত্রের থেকে এসেছিলেন।
বিভিন্ন সংস্কৃত স্রুত্র থেকে জানা যায়, সেসময় তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালায়ের এক ক্ষুরধার বুদ্ধিসম্পন্ন ব্রাহ্মণ ছিলেন। তার নাম ছিল চানক্য। তিনি কৌটিল্য নামেও পরিচিত ছিলেন। জৈন গ্রন্থ থেকে জানা যায়, তিনি কোন কারণে নন্দ রাজাদের দ্বারা অপমানিত হন, তিনি তখন থেকে এর প্রতিশোধ নেবার চেষ্টা করতে থাকেন। এই সময় তিনি বালক চন্দ্রগুপ্ত দেখেন। তার মনে হয় এই বালকের মধ্যে রাজা হবার সবগুণ আছে। তিনি তাকে তক্ষশীলা নিয়ে যান ও বিভিন্ন বিদ্যায় পারদর্শী করে তোলেন। জৈন গ্রন্থ ও বিশাখাদত্তের মুদ্রারাক্ষস থেকে জানা যায়, চন্দ্রগুপ্তের সংগে হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চলের রাজা পার্বতকের সাথে মৈত্রী চুক্তি হয়। কোন জায়গায় একে আবার রাজা পুরু বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
নন্দরাজাদের সংগে যুদ্ধে প্রথমে সাফল্য না পেলে চানক্য কৌশল পরিবর্তন করে নন্দ সামাজ্যের প্রান্তিক প্রদেশগুলো আক্রমণ করা শুরু করেন, এতেই সাফল্য আসে। নন্দ সেনাপতি ভদ্রশালা ও ধননন্দকে একের পর পর যুদ্ধে পরাজিত করে চন্দ্রগুপ্তের বাহিনী রাজধানী কুসুমপুরা অবরোধ করে। আনুমানিক ৩২১ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে মাত্র ২০ বছর বয়সে চন্দ্রগুপ্ত নন্দ সামাজ্যের পতন ঘটিয়ে মৌর্য সামাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেন। এইভাবেই তিনি এত অল্প বয়সেই পূর্বে আসাম ও বাংলা থেকে পশ্চিমে সিন্ধু উপত্যকা পর্যন্ত বিশাল সামাজ্যের অধিকারী হন।
এরপর চন্দ্রগুপ্ত ভারতের পশ্চিম সামাজ্যের বিস্তারে উদ্যোগী হন। সেসময় সেলুকাস আই নিকাটর, আলেকজান্ডারের সামাজ্যের ব্যকট্রিয় থেকে সিন্ধু উপত্যকা পর্যন্ত বিস্তীর্ণ অঞ্চল শাসন করছেন। চন্দ্রগুপ্তের সাথে ৩০৫ খ্রীষ্টপূর্বে তার যুদ্ধ শুরু হয়, পরে তাদের মধ্যে মৈত্রী চুক্তি সাক্ষরিত হয়। মনে করা হয়ে থাকে, এর ফলে হিন্দুকুশ পর্বত ও বালুচিস্থান পর্যন্ত দীর্ঘ অঞ্চল তাঁর অধীনে আসে। বিনিময়ে চন্দ্রগুপ্ত সেলুকাসকে ৫০০ যুদ্ধের হাতী দেন। সেলুকাসকন্যার সাথে চন্দ্রগুপ্তের বিয়ে হয় বলেও মনে করা হয়।
এরপর চন্দ্রগুপ্ত দক্ষিণভারতে দিকে অগ্রসর হন। তিনি বিন্ধ্য পর্বত পেরিয়ে দাক্ষিণাত্য মালভূমির সিংহভাগ দখল করতে সক্ষম হন। এরফলে কলিঙ্গ ও দাক্ষিণাত্যের অল্পকিছু অংশ বাদে সমগ্র ভারত মৌর্য্য সাম্রাজ্যের অন্তর্গত হয়।
জৈন মতানুসারে শেষ বয়সে চন্দ্রগুপ্ত জৈন গ্রহন করে জৈন সন্ন্যাসী ভদ্রবাহুর সাথে দাক্ষিণাত্য যাত্রা করেন ও বর্তমানে কর্ণাটকের শ্রাবণবেলগোলায় স্বেচ্ছায় উপবাসে দেহত্যাগ করেন।
--Kaushik saha ১৪:৪৩, ২৪ মার্চ ২০০৮ (UTC)