লুইস ওয়াল্টার আলভারেজ
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
লুইস ওয়াল্টার আলভারেজ (জুন ১৩, ১৯১১ - সেপ্টেম্বর ১, ১৯০৮) একজন স্পেনীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন পদার্থবিজ্ঞানী। তার জন্ম ক্যালিফোর্নিয়ার সান ফ্রানসিস্কোতে। কর্মজীবনের একটি বিশাল সময় তিনি ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, বার্কলেতে শিক্ষকতা করে কাটিয়েছেন। তিনি ১৯৬৮ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।
সূচিপত্র |
[সম্পাদনা] পরিবার
আলভারেজের বাবা বিখ্যাত চিকিৎসক ওয়াল্টার সি আলভারেজ এবং পিতামহ লুইস এফ আলভারেজ। তার পিতামহ হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে চিকিৎসক হিসেবে কাজ করেছিলেন এবং সে সময় ম্যাকুলার লেপরোসি রোগ নির্ণয়ের জন্য একটি উত্তম পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছিলেন। তার খালা ক্যালিফোর্নিয়ার চিত্রশিল্পী এবং তৈল চিত্রকর ম্যাবেল আলভারেজ। তার ছেলে ওয়াল্টার আলভারেজ ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্বিদ্যালয়, বার্কলের ভূতত্ত্ব বিভাগের সনামধন্য অধ্যাপক।
[সম্পাদনা] জীবন ও কর্ম
আলভারেজ পড়াশোনা করেছেন শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে। এখান থেকেই ১৯৩২ সালে স্নাতক হন, ১৯৩৪ সালে মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন এবং ১৯৩৬ সালে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।
আলভারেজ নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন মৌলিক কণা পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক আবিষ্কারের জন্য। বিশেষত তার আবিষ্কারের ফলে অনেকগুলো রেজোন্যান্স অবস্থা আবিষ্কার করা সম্ভব হয়েছে। তিনি হাইড্রোজেন বাব্ল চেম্বার এবং উপাত্ত বিশ্লেষণের মাধ্যমে এই অবস্থা নির্ণয়ের পদ্ধতি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এছাড়া তার আবিষ্কারের কারণে পরবর্তীতে কণা ত্বরক যন্ত্রে সৃষ্ট স্বল্পায়ু কণাসমূহ অধ্যয়ন করা এবং তাদের তথ্য সংগ্রহ করে রাখা সম্ভবপর করে তুলেছিল।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর আলভারেজ সক্রিয়ভাবে ম্যানহাটন প্রকল্পে অংশ নেন এবং বোমা নিক্ষেপের চূড়ান্ত দায়িত্বে যে আলবার্টা প্রকল্প নিয়োজিত ছিলেন সেখানকারও তিনি সক্রিয় সদস্য ছিলেন। এছাড়া যুদ্ধের অন্যান্য প্রকল্পে তার অবদান রয়েছে। তিনি দ্য গ্রেট আর্টিস্ট বিমানে চড়ে হিরোশিমায় গিয়েছিলেন, সেখানে পারমানবিক বোমা নিক্ষেপ কার্যক্রমের বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষক হিসেবে। ট্রিনিটি এবং নাগাসাকি বিস্ফোরণে ব্যবহৃত ফ্যাট ম্যান নামক বোমার জন্য এক্সপ্লোডিং-ব্রিজওয়্যার বিস্ফোরক তৈরী করেছিলেন যৌথভাবে আলভারেজ ও "লরেন্স জনস্টন" নামে তার এক ছাত্র।
পারমানবিক বোমা বিষয়ক গবেষণা ছাড়াও তিনি রাডার এবং বিমানচালনা বিদ্যা বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তিনি এমন একটি পদ্ধতির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন যার সাহায্যে অস্পষ্ট স্থানে নিরাপদে বিমান অবতরণ করানো যায়। বোমা নিক্ষেপক এবং বাণিজ্যিক বিমান ব্যবসায়ী সবার জন্যই এটি কাজে এসেছে। যুদ্ধের পর তিনি [সিনক্রোটন] উদ্ভাবনের কাজে আত্মনিয়োগ করেন।
১৯৮০ সালে আলভারেজ নিজের ছেলে ওয়াল্টার আলভারেজের সাথে যৌথভাবে, কে-টি বিলুপ্তি সীমানার ইরিডিয়াম ব্যত্যয়ের বিষয়টি ব্যাখ্যা করার জন্য গ্রহাণু-সংঘর্ষ তত্ত্ব প্রস্তাব করেন। তখন এই সময়ের মধ্যে ইরিডিয়ামের প্রাচুর্যের বৃদ্ধি ঘটতে দেখা গিয়েছিল যা এই তত্ত্বের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা যায়। এএ ১০ বছর পরে পর্যবেক্ষণে দেখতে পাওয়া যায়, চিকশুলুব নামক সংঘর্ষ খাদ ছিল প্রকৃতপক্ষে কে-টি সীমানার একটি "স্মোকিং গান"। বহির্জাগতিক বস্তু কর্তৃক সৃষ্ট এই খাদটিকেই ডাইনোসরদের বিলুপ্তির কারণ হিসেবে বর্তমানে আখ্যায়িত করা হয়।
এছাড়া আলভারেজ মার্কিন রাষ্ট্রপতি জন এফ কেনেডি হত্যা বিষয়ে একটি জেট-রিকয়েল তত্ত্ব দেন। তিনি ব্যাখ্যা করেন, কেনেডির প্রকৃত খুনী যদি লি হার্ভে অসওয়াল্ড হয়ে থাকে এবং সে পিছন থেকে গুলি করে থাকে, তাহলে কেনেডির মাথা সামনের দিকে হেলে না পড়ে পিছন দিকে নিক্ষিপ্ত হয়েছিল কেন।
[সম্পাদনা] পুরস্কার ও সম্মাননা
- ১৯৭৮ - ন্যাশনাল ইনভেন্টর্স হল অফ ফেইম
- ১৯৪৫ - কলিয়ার ট্রফি। গ্রাউন্ড কন্ট্রোল অ্যাপ্রোচ সিস্টেম তথা জিসিএ উন্নয়নের জন্য। খারাপ আবহাওয়া অবতরণের জন্য এটি ব্যবহৃত হয়। রাষ্ট্রপতি হ্যারি ট্রুম্যান এটি প্রদান করেন।
- ১৯৬৮ - পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার।
[সম্পাদনা] তথ্যসূত্র
- Alvarez, Luis W. Alvarez: Adventures of a Physicist, New York: Basic Books, 1987, ISBN 0465001157