ইসলামের পয়গম্বর
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
|
|
ইসলামের পয়গম্বর আহলুল বাইত সাহাবা |
ইসলামের পয়গম্বর হলেন সেই সকল ব্যক্তিত্ব যাদেরকে মুসলিমগণ স্রষ্টা কর্তৃক মানুষের দিক নির্দেশনা প্রদানের জন্য মনোনীত হিসাবে বিবেচনা করে। ইসলামী পরিভাষায় একে বলা হয় নাবী (বহু. আনবিয়া)।
ইসলামী ঐতিয্য মতে ঈশ্বর প্রত্যেক জাতির নিকট পয়গম্বরগণকে প্ররণ করেছেন। ইসলাম অনুযায়ী একমাত্র মুহাম্মদই ঈশ্বরের বার্তা সমগ্র মানবজাতির নিকট পৌছানোর জন্য প্ররিত হয়েছিলেন, যেখানে অন্যান্য পয়গম্বরগণ একটি নির্দিষ্ট গোত্র বা জাতির নিকট প্রেরিত হয়েছিলেন।
ইহুদি ও খ্রীষ্টধর্মের বিপরীতে, ইসলাম ঈশ্বরের বার্তবাহক এবং পয়গম্বরের মধ্যে পার্থক্য করে। উভয়ই “ঐশ্বরিক অনুপ্রেরণা”র দ্বারা ঈশ্বরের প্রত্যাদেশ প্রাপ্ত। তদুপরি, বার্তাবাহকগণ গ্রন্থ আকারে একটি সম্প্রদায়ের জন্য ঐশ্বরিক বার্তা প্রদান করেন এবং পয়গম্বরগণের বিপরীতে ঈশ্বর কর্তৃক সাফল্যের নিশ্চয়তা প্রাপ্ত ব্যক্তি। যেমন: মুসলিমদের ধর্মগ্রন্থ কুরআনে বলা হয়েছে,
“ |
যদিও সকল "রাসুল" গণই "নবী", কিন্তু সকল "নবী" গণ "রাসুল" নন। [১] [২] [৩] [৪] |
” |
সকল বার্তাবাহক এবং কজন পয়গম্বরের নাম কুরআনে উল্লেখিত আছে। মুসলিমগণ বিশ্বাস করে আদম হলেন প্রথম পয়গম্বর, পক্ষান্তরে শেষ পয়গম্বর হলেন মুহাম্মদ, তাই তাঁর উপাধি, নবীদের সিলমোহর। খ্রীষ্টধর্মের মতই ইসলামেও ঈসার (যেসাস) জন্ম কৌমারিকেয় জন্মের ফসল এবং তিনি নবী হিসাবে বিবেচিত হন কারণ ঈশ্বরের নিকট হতে তিনি ওহী প্রাপ্ত। যেসাস একজন বার্তাবাহক হিসেবেও বিবেচিত হন কারণ ঈশ্বর তাঁর নিকট সুসমাচার প্রকাশ করছিলেন।.[৫] অবশ্য, খ্রীষ্টধর্মের বিপরীতে, ইসলাম ধর্মে, ঈশ্বরের পুত্র দাবি করা ধর্ম বিরোধী এবং যেসাস একজন মানুষ হিসাবেই বিবেচিত হন।
[সম্পাদনা] কুরআনে উল্লেখ
সকল রাসুল(বার্তাবাহক) নবী(পয়গম্বর) কিন্তু সকল নবী(পয়গম্বর) রাসুল(বার্তাবাহক) নন। মুসলিমরা বিশ্বাস করে আল্লাহ্ কর্তৃক প্রেরিত সকল পয়গম্বর সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। যদিও অনেক পয়গম্বরের জীবনের ঘটনা কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে, কিন্তু পাঁচজন প্রধান পয়গম্বরের প্রথম চারজনের জীবনায়নের বিশেষ বর্ণনা ও অলঙ্কারপূর্ণ গুরুত্বের প্রতি তা বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। মুহাম্মদের পূর্বের সকল ব্যক্তিত্বের মধ্যে, মোযেস সবচেয়ে বেশী বার কোরানে উল্লেখিত হয়েছেন। (পঞ্চমজন অর্থাৎ মুহাম্মদের ক্ষেত্রে, কুরআন তাঁকে সরাসরি সম্বোধন করেছে, এবং এটি প্রায়ই তাঁর অপ্রত্যাশিত সংকট উত্তরণের উপায় আলোচনা করেছে। যদিও গ্রন্থে সারসরি তাঁর নামের ব্যবহার খুব কম।)
নিম্নপ্রদত্ব ছকে কুরআন বর্ণিত পয়গম্বরগণের তালিকা দেওয়া হয়েছে। প্রযোয্য স্থানে নামের বাইবেলীয় অনুবাদ দেওয়া হয়েছে। অধিকন্তু, কুরআনে স্পষ্ট উল্লেখ আছে যে এই তালিকা সম্পূর্ণ নয়।
“ |
অবশ্যই আমরা তোমাদের নিকট রাসুলগণকে প্ররণ করেছি: তাদের মধ্যে অনেকের সম্বন্ধেই আমরা তোমাদেরকে অবগত করেছি এবং আরও অনেকের সম্বন্ধে উল্লেখ করি নাই..” -কোরআন ৪০:৭৮ |
” |
নাম (আরবি অনু.) | নাম (বাইবেলীয়) | প্রধান নিবন্ধ(সমুহ) | উল্লেখিত পংক্তি সমূহের সংখ্যা |
---|---|---|---|
আদম | এ্যাডাম | এই বিষয়ে মূল নিবন্ধের জন্য দেখুন: এ্যাডাম সম্বন্ধে ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি , এ্যাডাম , এবং এ্যাডাম ও ইভ | ৭৭ |
" আদম ইসলামের প্রথম নবী এবং প্রথম মানব। ঈশ্বর তাকে সৃষ্ট করে চল্লিশ দিন শুকনো দেহে রাখার পরে জীবণ দান করেন”। ইহুদী এবং খ্রীষ্টিয় রীতিতেও তিনি একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। তিনি এ্যাডাম ও ইভ কাহিনীর জন্য বিখ্যাত। . |
|||
ইদ্রিস | ইনখ | এই বিষয়ে মূল নিবন্ধের জন্য দেখুন: ইদ্রিস | ২ |
ইদ্রিস-এর সময় ঈশ্বর পৃথিবীতে মানুষকে শাস্তি হিসাবে আনাবৃষ্টি দিয়েছিলেন, কারণ তারা তাঁকে ভুলে গিয়েছিল। পাপ হতে উদ্ধার ও কষ্ট হতে পরিত্রাণ পাবার জন্য ইদ্রিস ঈশ্বরের নিকট প্রার্থনা করেছিলেন এবং তাতে পৃথিবীতে বৃষ্টি হয়েছিল। |
|||
নূহ | নোয়া | এই বিষয়ে মূল নিবন্ধের জন্য দেখুন: নূহ | ৪৭ |
যদিও মহাপ্লাবনের জন্য তিনি সর্বাপেক্ষা পরিচিত, নূহ্ তাঁর কালের একজন প্রধান একেশ্বরবাদী প্রচারক। মুসলিমরা বিশ্বাস করে ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাসই তাঁকে নৌকা তৈরীর সিদ্ধান্তে সাহায্য করেছিল। খ্রীষ্টিয় ও ইহুদি ঐতিয্য অনুসারে মহাপ্লাবন ছিল বিশ্বব্যাপী ঘটনা, যার বিপরীতে ইসলামে কিছু ভিন্ন মত আছে, যেখানে নূহের মহাপ্লাবন ছিল আঞ্চলিক বা বিশ্বব্যাপী। |
|||
হুদ | ইবার | এই বিষয়ে মূল নিবন্ধের জন্য দেখুন: হুদ | ৮ |
হুদ একজন নবী যার নামানুসারে কোরানের একাদশ পরিচ্ছেদের নামকরন হয়েছে। মুসলিমরা বিশ্বাস করে তিনি ছিলেন ঈশ্বরদ্বারা প্ররিত ভয়াবহ এক ঝড়ের হাত থেকে বেঁচে যাওয়া অল্প কিছু লোকদের ভেতর একজন। এই দৈবদূর্বিপাক হয়েছিল মহাপ্লাবনের পাঁচ পুরুষ পরে, ‘আদ জাতিকে শাস্তি দিতে, যারা ঈশ্বরকে ভুলে গিয়ে পাপে নিমজ্জিত ছিল। বাইবেলের পুরাতন নিয়মে হুদের কোন উল্লেখ নাই। |
|||
সালিহ্ | শালহ | এই বিষয়ে মূল নিবন্ধের জন্য দেখুন: সালিহ্ | |
কোরান অনুসারে ঈশ্বর সালিহ্-কে তাঁর জাতি সামুদকে পরিত্যাগ করতে আদেশ দেন, যখন তারা ঈশ্বরের প্রতি অবিশ্বাস ও আদেশ অমান্য করেছিল। ঈশ্বর তাদেরকে আদেশ করেছিলে একটি বিশেষ উটকে যত্ন করতে, কিন্তু তারা ঐ উটকে হত্যা করে। সালিহ্ ও তাঁর সহোযোগীগণের (বিশ্বাসীগণ) অনুপস্থিতিতে ঈশ্বর আকাশ হতে এক ভয়ঙ্কর আওয়াজের মাধ্যমে ঐ লোকদেরকে তৎখনাত মেরে ফেলেন। দ্রষ্টব্য যে পুরাতন নিয়ম বর্ণিত শেলাহ সালিহ্ নন। |
|||
ইব্রাহিম | আব্রাহাম | এই বিষয়ে মূল নিবন্ধের জন্য দেখুন: ইব্রাহিম | ৭১ |
মক্কার কাবা পুনঃনির্ণমানের জন্য মুসলিমরা ইব্রাহিমকে একজন অন্যতম নবী হিসাবে বিবেচনা করে। পুত্র ইসমাইলসহ তাঁর পরিবারকে, মক্কার চারপাশে সভ্যতা গড়ে তোলায় সাহায্য করার স্বীকৃতি দেওয়া হয় যা পরবর্তিতে ইসলামের শেষ নবী মুহাম্মদের জন্ম দেয়। ইব্রাহিম তাঁর পুত্র ইসমাইলকে আল্লাহর উদ্দেশ্য প্রায় উৎসর্গ করার ঘটনার জন্যও বিখ্যাত যা বর্তমানে ঈদ উল-আজহার মাধ্যমে প্রতিবছর স্বরণ করা হয়। তিনিই প্রথম নবী যিনি বিশ্বাসীদেরকে “মুসলিম” বলে অভিহিত করেছেন যার অর্থ “আল্লাহর নিকট পূর্ণ আত্মসমর্পন করা”। |
|||
লুত | লুট | এই বিষয়ে মূল নিবন্ধের জন্য দেখুন: লুত | ২৯ |
লুত ইসলামে সবচেয়ে আলোচিত তাঁর সডোম ও গোমরাহয় সমকামিতার বিরুদ্ধে প্রচারনা এবং সাথে সাথে আল্লাহর একত্বে বিশ্বাস স্থাপনের জন্য জনগণকে আহ্ববান করার জন্য। যা তাঁকে ঐ স্থানের লোকদের দ্বারা উপেক্ষা ও তামাসার পাত্রে পরিনত করে। ইসলাম লুতের প্রতি আরোপিত কিছু ঘটনাকে অস্বীকার করে যা পুরাতন নিয়মে বর্ণিত আছে, যেমন মদ্যপান এবং মদ্যপ অবস্থায় তাঁর দুই কন্যার সঙ্গে সহবাস ও তাদেরকে গর্ভবতী করা। |
|||
ইসমাইল | ইশ্মায়েল | এই বিষয়ে মূল নিবন্ধের জন্য দেখুন: ইসমাইল | ১২ |
ইসমাইল, ইব্রাহিমের প্রথম পুত্র, তাঁর প্রায়-উৎসর্গ হওয়ার ঘটনার জন্য ইসলামে উল্লখযোগ্য একজন নবী। শৈশবে তিনি ও তাঁর মা হাজেরার মক্কায় পানি খোঁজার চেষ্টার কারণে আল্লাহ জমজম কুপ প্রকাশিত করেন, যা আজও বহমান। |
|||
ইসহাক | আইজেক | এই বিষয়ে মূল নিবন্ধের জন্য দেখুন: ইসহাক | ১৬ |
ইসলামী ঐতিয্যানুসারে, ইসহাক, ইব্রাহিমের দ্বিতীয় পুত্র, কেনানে নবী হন। তিনি ও তাঁর ভাই ইসমাইল ইসলামের নবী হিসাবে ইব্রাহিমের উত্তরাধিকারী। |
|||
ইয়াকুব | জেকব | এই বিষয়ে মূল নিবন্ধের জন্য দেখুন: ইয়াকুব | ১৯ |
কোরান অনুযায়ী ইয়াকুব ছিলেন “মনোনীত ও সৎ সাহচর্য” [৬] এবং তিনি তাঁর পিতা ইসহাক ও পিতামহ ইব্রাহিমের ঐতিহ্য বহন করেছিলেন। পূর্বপূরুষদের অনুরূপ তিনিও আল্লাহর আরাধনায় আত্মনিয়গ করেছিলেন। |
|||
ইউসুফ | যোসেফ | এই বিষয়ে মূল নিবন্ধের জন্য দেখুন: ইউসুফ | ৩৭ |
ইউসুফ, (ইয়াকুবের) পুত্র এবং ইব্রাহিমের পৌত্র, মিসরের রাজার গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শদাতায় পরিতন হন যখন থেকে রাজা একটি সপ্ন দেখেন, যা মিসরের অর্থনৈতিক অবস্থার পূর্বাভাস হিসাবে ইউসুফ ব্যাক্ষা করেন। তার এগারো ভাই হতে তিনি জীবনের একটি বড় অংশ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় অতিবাহিত করেন, যারা ইউসুফের প্রতি ঈর্ষাপরায়ণ ছিল কারণ তাদের পিতা তার প্রতি পক্ষপাতিত্ব করতেন। একদিন তারা তাকে নিয়ে গেলো, তাদের পিতাকে বললো যে তারা খেলতে ও মজা করতে যাচ্ছে, কিন্তু তাদের পরিকলপনা ছিল তাকে হত্যা করার। কিন্তু তার বদলে, তারা তাকে একটি কুপের ভেতরে ফেলে দিয়েছিল এবং তাদের পিতাকে বলেছিল যে ইউসুফকে একটা নেকড়ে খেয়ে ফেলেছে। ইসলামী মতে ইউসুফকে মানবজাতির ৫০ শতাংশ সৌন্দয্য দ্বারা পুরষ্কৃত করা হয়েছিল। |
|||
আইউব | জব | এই বিষয়ে মূল নিবন্ধের জন্য দেখুন: আইউব এবং জব (বাইবেলীয় চরিত্র) | ৪ |
ইসলামী ঐতিয্য আনুযায়ী, আল মাজদাল এর বাইরে তার নিজ এলাকায় ঈশ্বরের সেবা করার কারণে, আইউব তারুণ্যের ঝর্না দ্বারা পুরষ্কৃত হয়েছিলেন, যা মৃত্যু ছাড়া সকল জরাব্যাধি দূর করেছিল। বিশ্বাস করা হয় যে, আইউব ধর্য্য ধারন করার পরীক্ষা হিসাবে ১৮ বছর ঈশ্বর কর্তৃক প্রেরিত একটি ব্যাধিতে কষ্ট পান। |
|||
শয়াইব | জেথ্র | এই বিষয়ে মূল নিবন্ধের জন্য দেখুন: শয়াইব এবং জেথ্র | |
জেথ্র ছিলেন ইব্রাহিমের সরাসরি বংশধর। ইসলাম আনুযায়ী, তিনি ঈশ্বর কর্তৃক নিয়োজিত ছিলেন মাদিয়ান এবং আয়কাহর মানুষদেরকে সৎ পথে পরিচালিত করার জন্য, যারা সিনাই পর্বতের নিকট বাস করত। যখন ঐ এলাকার মানুষেরা তাঁর নিষেধ অমান্য করেছিল, তখন ঈশ্বর অবিশ্বাসীদের গ্রামকে ধ্বংশ করে দিয়েছিলেন। যদিও এটি কোরানে উল্লেখ আছে, এবং পয়গম্বর মুহাম্মদের বাণীতে উধৃত হয়েছে যে মুসা শয়াইবের একজন কন্যাকে বিয়ে করে ছিলেন, এবং একই বিষয়ে পুরাতন নিয়মে জেথ্র নামক ব্যক্তির কথা বর্ণিত আছে। তবে কিছু বিষেশজ্ঞ বিশ্বাস করেন যে পুরাতন নিয়মে বর্নিত জেথ্র আর কোরানের শয়াইব এক ব্যাক্তি নন। |
|||