Web Analytics

See also ebooksgratis.com: no banners, no cookies, totally FREE.

CLASSICISTRANIERI HOME PAGE - YOUTUBE CHANNEL
Privacy Policy Cookie Policy Terms and Conditions
সুন্দরবন - উইকিপিডিয়া

সুন্দরবন

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

সুন্দরবন*
ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান
River in Sunderbans
স্টেট পার্টি বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গ
ধরণ প্রাকৃতিক
মাপকাঠি ix, x
তথ্যসূত্র ৭৯৮
অঞ্চল এশিয়া-প্যাসিফিক
অভিলিখনের ইতিহাস
অভিলিখন ১৯৯৭  (২১তম সেশন)
* Name as inscribed on World Heritage List.
Region as classified by UNESCO.

সুন্দরবন সমুদ্র উপকূলবর্তী নোনা পরিবেশের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বনভূমি হিসেবে অখন্ড বন যা বিশ্বে সর্ববৃহৎ[১]। অববাহিকার সমুদ্রমূখী সীমানা এই বনভূমি গঙ্গাব্রহ্মপুত্রের মোহনায় অবস্থিত এবং বাংলাদেশভারতের পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে বিস্তৃত । ১০,০০০ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে গড়ে ওঠা সুন্দরবনের প্রায় ৬,০০০ বর্গ কিলোমিটার রয়েছে বাংলাদেশে[২]। সুন্দরবন ১৯৯৭ সালে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃতি পায়। এর বাংলাদেশ ও ভারতীয় অংশ একই নিরবচ্ছিন্ন ভূমিরূপের অংশ হলেও ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের সূচিতে ভিন্ন ভিন্ন নামে সূচিবদ্ধ হয়েছে যথাক্রমে সুন্দরবন ও সুন্দরবন জাতীয় পার্ক নামে। সুন্দরবনকে জালের মত জড়িয়ে রয়েছে সামুদ্রিক স্রোতধারা, কাদা চর এবং ম্যানগ্রোভ বনভূমির লবণাক্ততাসহ ছোট ছোট দ্বীপ । বনভূমিটি, স্বনামে বিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার ছাড়াও নানান ধরণের পাখি, চিত্রা হরিণ, কুমির ও সাপ সহ অসংখ্য প্রজাতির প্রাণীর আবাসস্থল হিসেবে পরিচিত। জরিপ মোতাবেক ৫০০ বাঘ ও ৩০,০০০ চিত্রা হরিণ রয়েছে এখন সুন্দরবন এলাকায়। ১৯৯২ সালের ২১শে মে সুন্দরবন রামসার স্থান হিসেবে স্বীকৃতি পায়।

সূচিপত্র

[সম্পাদনা] নামকরণ

বাংলায় “সুন্দরবন” -এর আক্ষরিক অর্থ “সুন্দর জঙ্গল” বা “সুন্দর বনভূমি”। সুন্দরী গাছ থেকে সুন্দর বনের নামকরণ হয়ে থাকতে পারে, যা সেখানে প্রচুর জন্মায়। অন্যান্য সম্ভাব্য ব্যাখ্যা এরকম হতে পারে যে এর নামকরণ হয়তো হয়েছে ‘সমুদ্র বন” বা “চন্দ্র-বান্ধে (বাঁধে)” (প্রাচীন আদিবাসী) থেকে। তবে সাধারণভাবে ধরে নেয়া হয় যে সুন্দরী গাছ থেকেই সুন্দরবনের নামকরণ হয়েছে[১]

[সম্পাদনা] ইতিহাস

মুঘল আমলে (১২০৩-১৫৩৮) স্থানীয় এক রাজা পুরো সুন্দরবনের ইজারা নেন। ঐতিহাসিক আইনী পরিবর্তনগুলোয় কাঙ্খিত যেসব মৌলিক পরিবর্তন হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে বিশ্বের প্রথম ম্যানগ্রোভ বন হিসেবে স্বীকৃতি পেয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক তত্বাবধানের অধীনে আসা। ১৭৫৭ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কর্তৃক মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় আলমগীর এর কাছ থেকে স্বত্বাধিকার পাওয়ার পরপরই সুন্দরবন এলাকার মানচিত্র তৈরী করা হয়। বনাঞ্চলটি সাংগঠনিক ব্যবস্থাপনার আওতায় আসে ১৮৬০ এর দিকে ভারতের তৎকালীন বাংলা প্রদেশে বন বিভাগ স্থাপনের পর থেকে।

সুন্দরবনের উপর প্রথম বন ব্যবস্থাপনা বিভাগের আইনগত অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৬৯ সালে। ১৯৬৫ সালের বন আইন (ধারা ৮) মোতাবেক, সুন্দরবনের একটি বড় অংশকে সংরক্ষিত বনভূমি হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয় ১৮৭৫-৭৬ সালে। পরবর্তী বছরের মধ্যেই বাকি অংশও সংরক্ষিত বনভূমির স্বীকৃতি পায়। এর ফলে দূরবর্তী বেসামরিক জেলা প্রশাসনের কর্তৃত্ব থেকে তা চলে যায় বন বিভাগের নিয়ন্ত্রণে। পরবর্তীতে ১৮৭৯ সালে বন ব্যবস্থাপনার জন্য প্রশাসনিক একক হিসেবে বন বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয়, যার সদর দপ্তর ছিল খুলনায়। সুন্দরবনের জন্য ১৮৯৩-৯৮ সময়কালে প্রথম বন ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা প্রণিত হয়[৩][৪]

১৯১১ সালে সুন্দরবনকে ট্র্যাক্ট আফ ওয়াস্ট ল্যান্ড হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়, যা না তো কখনো জরিপ করা হয়েছে আর না তো কোনদিন শুমারীর আধীনে এসেছে। তখন হুগলী নদীর মোহনা থেকে মেঘনা নদীর মোহনা পর্যন্ত প্রায় ১৬৫ মাইল (২৬৬ কি.মি.) এলাকা জুড়ে এর সীমানা নির্ধারিত হয়। একই সাথে চব্বিশ পরগনা , খুলনা ও বাকেরগঞ্জ এই তিনটি জেলা অনুযায়ী এর আন্তঃসীমা নির্ধারণ করা হয়। জলাধারসহ পুরো এলাকার আয়তন হিসেব করা হয় ৬,৫২৬ বর্গমাইল (১৬,৯০২ কি.মি)। জলবহুল সুন্দর বন ছিল বাঘ ও অন্যান্য বন্য জন্তুতে পরিপূর্ণ। ফলে জরিপ করার প্রচেষ্টা খুব একটা সফল হতে পারেনি। সুন্দরবনের নামকরণ হয়েছে খুব সম্ভবত এর প্রধাণ বিশেষ গাছ সুন্দরীর (Heritiera littoralis) নাম থেকেই। এ থেকে পাওয়া শক্ত কাঠ নৌকা, আসবাবপত্র সহ বিভিন্ন জিনিস তৈরীতে ব্যবহৃত হয়। সুন্দরবন সর্বত্রই নদী, খাল, ও খাঁড়ি দ্বারা বিভক্ত, যাদের মধ্যে কয়েকটি স্টিমার ও স্থানীয় নৌকা উভয়ের চলাচল উপযোগী নৌপথ হিসেবে ব্যবহৃত হত কলকাতা ও ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার মধ্যে যোগাযোগের জন্য।

[সম্পাদনা] ভৌগলিক গঠন

উপগ্রহ থেকে তোলা ছবিতে বনের সংরক্ষিত এলাকা দেখা যাচ্ছে। গাড় সবুজ রঙে সুন্দরবন দেখা যাচ্ছে যার উত্তর দিকে ঘিরে আছে হালকা সবুজ রঙের কৃষি জমি, তামাটে রঙে দেখা যাচ্ছে শহর এবং নদীগুলো নীল রঙের।
উপগ্রহ থেকে তোলা ছবিতে বনের সংরক্ষিত এলাকা দেখা যাচ্ছে। গাড় সবুজ রঙে সুন্দরবন দেখা যাচ্ছে যার উত্তর দিকে ঘিরে আছে হালকা সবুজ রঙের কৃষি জমি, তামাটে রঙে দেখা যাচ্ছে শহর এবং নদীগুলো নীল রঙের।

পুরো পৃথিবীর মধ্যে সর্ববৃহৎ তিনটি ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের একটি হিসেবে গঙ্গা অববাহিকায় অবস্থিত সুন্দরবনের বাস্তুসংস্থান যথেস্ট জটিল। দুই প্রতিবেশি দেশ বাংলাদেশ এবং ভারত জুড়ে বিস্তৃত সুন্দরবনের বৃহত্তর অংশটি ( ৬২% ) বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে অবস্থিত। দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর; পূর্বে বালেশ্বর নদী আর উত্তরে বেশি চাষ ঘনত্বের জমি বরাবর সীমানা। উঁচু এলাকায় নদীর প্রধাণ শাখাগুলো ছাড়া অন্যান্য জলধারাগুলো সর্বত্রই বেড়িবাঁধ ও নিচু জমি দ্বারা বহুলাংশে বাঁধাপ্রাপ্ত। প্রকৃতপক্ষে সুন্দরবনের আয়তন হওয়ার কথা ছিলো প্রায় ১৬,৭০০ বর্গ কি.মি. (২০০ বছর আগের হিসাবে)। কমতে কমতে এর বর্তমান আয়তন হয়েছে পূর্বের প্রায় এক-তৃতীয়াংশের সমান। বর্তমানে মোট ভূমির আয়তন ৪,১৪৩ বর্গ কি.মি. (বালুতট ৪২ বর্গ কি.মি. -এর আয়তনসহ) এবং নদী, খাঁড়ি ও খালসহ বাকি জলধারার আয়তন ১,৮৭৪ বর্গ কি.মি. । সুন্দরবনের নদীগুলো নোনা পানি ও মিঠা পানি মিলন স্থান। সুতরাং গঙ্গা থেকে আসা নদীর মিঠা পানির, বঙ্গপোসাগরের নোনা পানি হয়ে ওঠার মধ্যবর্তী স্থান হল এ এলাকাটি।

হাজার বছর ধরে বঙ্গোপসাগর বরাবর আন্তঃস্রোতীয় প্রবাহের দরুন প্রাকৃতিকভাবে উপরিস্রোত থেকে পৃথক হওয়া পলি সঞ্চিত হয়ে গড়ে উঠেছে সুন্দরবন। এর ভৌগলিক গঠন ব-দ্বীপীয় যার উপরিতলে রয়েছে অসংখ্য জলধারা এবং জলতলে ছড়িয়ে আছে মাটির দেয়াল ও কাদা চর। এতে আরো রয়েছে সমুদ্র সমতলের গড় উচ্চতার চেয়ে উঁচুতে থাকা প্রান্তীয় তৃণভূমি, বালুতট এবং দ্বীপ, যেগুলো জুড়ে জালের মত জড়িয়ে আছে খাল, জলতলের মাটির দেয়াল, আদি ব-দ্বীপীয় কাদা ও সঞ্চিত পলি। সমুদ্রসমতল থেকে সুন্দরবনের উচ্চতা স্থানভেদে ০.৯ মিটার থেকে ২.১১ মিটার[৫]

জৈবিক উপাদানগুলো এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে সামুদ্রিক বিষয়ের গঠন প্রক্রিয়া ও প্রাণী বৈচিত্রের ক্ষেত্রে। সৈকত, মোহনা, স্থায়ী ও ক্ষণস্থায়ী জলাভূমি, কাদা চর, খাঁড়ি, বালিয়াড়ি, মাটির স্তূপের মত বৈচিত্রময় অংশ গঠিত হয়েছে এখানে। ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ জগৎ নিজেই নতুন ভূমি গঠনে ভূমিকা রাখে। আবার আন্ত:স্রোতীয় উদ্ভিদ জগৎ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে জলে অঙ্গসংস্থান প্রক্রিয়ায়। ম্যানগ্রোভ প্রাণীজগৎ এর উপস্থিতি আন্তঃস্রোতীয় কাদা চরে ব্যষ্টিক অঙ্গসংস্থানিক পরিবেশ তৈরী করে। এটি পলিকে ধরে রাখে বীজের জন্য আনুভূমিক উপশিলাস্তর সৃষ্টির জন্য। অনন্ত বালিয়াড়ির সংগঠন ও বিবর্তন প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রিত হয় প্রচুর পরিমাণে থাকা xerophytic ও halophytic গাছ দ্বারা। লতা-পাতা, ঘাস ও হোগলা বালিয়াড়ি ও অসংগঠিত পলিস্তরের গঠনকে স্থিতিশীল করে।


[সম্পাদনা] জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব

উপকূল বরাবর সুন্দরবনের গঠন প্রকৃতি বহুমাত্রিক উপাদানসমূহ দ্বারা প্রাভাবিত, যাদের মধ্যে রয়েছে স্রোতের গতি, ব্যষ্টিক ও সামষ্টিক স্রোত চক্র এবং সমুদ্র উপকূলবর্তী দীর্ঘ সমুদ্রতটের স্রোত। বিভিন্ন মৌসুমে সমুদ্রতটের স্রোত যথেস্ট পরিবর্তনশীল। এরা ঘূর্ণীঝড়ের কারণেও পরিবর্তিত হয়।

এসবের মধ্য দিয়ে যে ক্ষয় ও সঞ্চয় হয়, যদিও এখনো সঠিকভাবে পরিমাপ করা সম্ভব হয়নি, তা ভূ-প্রকৃতির পরিবর্তনে মাত্রাগত পার্থক্য তৈরী করে। অবশ্য ম্যানগ্রোভ বনটি নিজেই এর পুরো ব্যবস্থার স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে যথেষ্ট ভূমিকা রাখে। প্রত্যেক মৌসুমী বৃষ্টিপাতের ঋতুতে বঙ্গীয় ব-দ্বীপের পুরোটিই পানিতে ডুবে যায় , যার অধিকাংশই ডুবে থাকে বছরের প্রায় অর্ধেক সময় জুড়ে। অববাহিকার নিম্নানঞ্চলের পলি প্রাথমিকভাবে আসে মৌসুমী বৃষ্টিপাতকালীন সময় সমুদ্রের চরিত্র এবং ঘূর্ণিঝড়ের মত ঘটনাগুলোর ফলে। অনাগত বছরগুলোতে গঙ্গা অববাহিকায় বসবাসকারীদের সবচেয়ে বড় যে সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে তা হলো সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি ।

উঁচু অঞ্চলে সাদুপানির গতিপথ পরিবর্তনের কারণে ভারতীয় ম্যানগ্রোভ আর্দ্রভূমিগুলোর অনেকগুলোতে সাদুপানির প্রাবাহ ১৯ শতকের শেষের দিক থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গিয়েছে। একই সাথে নিও-টেকটনিক গতির কারণে বেঙ্গল বেসিনও পূর্বের দিকে সামান্য ঢালু হয়ে গিয়েছে, যার ফলে সাদু পানির বৃহত্তর অংশ চলে আসছে বাংলাদেশ অংশের সুন্দরবনে। ফলশ্রতিতে বাংলাদেশ অংশের সুন্দরবনে লবণাক্ততার পরিমাণ ভারতীয় অংশের তুলনায় অনেক কম। ১৯৯০ সালের এক গবেষণা পত্রে বলা হয়েছে , “হিমালয়ের প্রাকৃতিক পরিবেশের অবনতি বা “গ্রিন হাউস” এর কারণে সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়ে বাংলাদেশের বন্যা পরিস্থিতিকে আশঙ্কাজনক করে তুলেছে এমন কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। যাদিও, ২০০৭ সালে -“ জলবায়ুর পরিবর্তন ও বিশ্ব ঐতিহ্যের পাঠ” শীর্ষক ইউনেস্কোর রিপোর্টে বলা হয়েছে যে মনুষ্যসৃষ্ট অন্যান্য কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের যে ৪৫ সে.মি. উচ্চতা বৃদ্ধি হয়েছে, তা সহ মনুষ্যসৃষ্ট আরও নানাবিধ কারণে সুন্দরবনের ৭৫ শতাংশ ধংস হয়ে যেতে পারে (জলবায়ু পরিবর্তনের উপর আলোচনায় প্রাকাশিত আন্তঃসরকার পরিষদের মত অনুযায়ী ২১ শতকের মধ্যেই)[[৬]

[সম্পাদনা] সুন্দরবনের উদ্ভিদ জগৎ

সুন্দরী গাছ
সুন্দরী গাছ

সুন্দরবনের প্রধান বনজ বৈচিত্রের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে সুন্দরী (Heritiera fomes), গেওয়া (Excoecaria agallocha), গরান (Ceriops decandra) এবং কেওড়া (Sonneratia apetala) । ১৯০৩ সালে প্রকাশিত প্রেইন এর হিসেব মতে সর্বমোট ২৪৫টি শ্রেণী এবং ৩৩৪টি প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে সেখানে[৭]। প্রেইন এর প্রতিবেদনের পর সেখানে বিভিন্ন ম্যানগ্রোভ প্রজাতি ও তাদের শ্রেণীকরণের এর উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে[৮]। বনজ প্রকৃতিতে খুব কমই আনুসন্ধান করা হয়েছে এসব পরিবর্তনের হিসেব রাখার জন্য । পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলের বেশির ভাগ ম্যানগ্রোভে Rhizophoraceae, Avicenneaceae বা Laganculariaceae শ্রেনীর গাছের প্রাধাণ্য থাকলেও বাংলাদেশের ম্যানগ্রোভে প্রাধাণ্য Sterculiaceae এবং Euphorbiaceae শ্রেণীর গাছের[৩]

ব-দ্বীপিয় নয় এমন অন্যান্য উপকূলীয় ম্যানগ্রোভ বনভূমি এবং উচ্চভূমির বনাঞ্চলের তুলনায় বাংলাদেশের ম্যানগ্রোভ বনভূমিতে উদ্ভিদ জীবনপ্রবাহের ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে। পূর্ববর্তীটির তুলনায় Rhizophoraceae এর গুরুত্ব কম। উদ্ভিদ জীবনচক্রের ভিন্নতা ব্যাখ্যা করা হয়েছে উত্তর-পূর্বে বিশুদ্ধ পানি ও নিম্ন লবণাক্ততার প্রভাব এবং পানি নিষ্কাশন ও পলি সঞ্চয়ের ভিত্তিতে।

সুন্দরবনকে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে একটি আর্দ্র গ্রীষ্মমন্ডলীয় বনভূমি হিসেবে যা গড়ে উঠেছে সুগঠিত সৈকতে কেওড়া (Sonneratia apetala) ও অন্যান্য সামুদ্র উপকূলবর্তী বৃক্ষ প্রধাণ বনাঞ্চলে। ঐতিহাসিকভাবে সুন্দরবনে প্রধাণ তিন প্রকারের উদ্ভিদ রয়েছে যাদের চিহ্ণিত করা হয়েছে পানিতে লবণাক্ততার মাত্রা, সাদু পানি প্রবাহের মাত্রা ও ভূপ্রকৃতির মাত্রার সাথে সম্পর্কের গভীরতার উপর ভিত্তি করে।

অঞ্চল জুড়ে সুন্দরী ও গেওয়া এর প্রাধাণ্যের পাশাপাশি বিক্ষিপ্তভাবে রয়েছে ধুন্দল (Xylocarpus granatum) এবং কেওড়া (Sonneratia apetala)। ঘাস ও গুল্মের মধ্যে Poresia coaractata, Myriostachya wightiana, শন (Imperata cylindrical)], নল খাগড়া (Phragmites karka), গোলপাতা (Nypa fruticans) রয়েছে সুবিন্যস্তভাবে। কেওড়া নতুন তৈরী হওয়া পলিভূমিকে নির্দেশ করে এবং এই প্রজাতিটি বন্যপ্রাণীর জন্য জরুরী , বিশেষ করে চিত্রা হরিণের (Axis axis) জন্য । বনভূমির পাশাপাশি সুন্দরবনের বিশাল এলাকা জুড়ে রয়েছে নোনতা ও মিঠা পানির জলাধার, আন্তঃস্রোতীয় পলিভূমি, , বালুচর, বালিয়াড়ি, বেলেমাটিতে উন্মুক্ত তৃণভূমি এবং গাছ ও গুল্মের এলাকা।

পরম্পরা বলতে সাধারণত বোঝানো হয় বিভিন্ন প্রজাতির গাছ দ্বারা কোন একটি এলাকার অনুক্রমিক অধিগ্রহণ[৯]। কোন একটা জমে উঠতে থাকা কাদা চরে, আদি প্রাজাতি ক্রমে বাইরে থেকে আসা নতুন প্রজাতি দ্বারা ধাপে ধাপে প্রতিস্থাপিত হতে থাকে। সর্বশেষে ঐ আবহাওয়ায় উপযুক্ত, এমন বিভিন্ন প্রাজাতির গাছের এক স্থানীয় শ্রেণী তৈরী হয[১০]। ট্রুপের মতে অনুক্রমিকতা সধারণত শুরু হয় নতুন পলি থেকে তৈরী হওয়া ভূমিতেref>Troup, R.S. 1921. The Silviculture of Indian Trees. Clarendon Press, Oxford. 1195 p.</ref>। নতুন গড়ে ওঠা এই ভূমিতে প্রথম পত্তন হয় গেওয়ার এবং এর সাথে Avicennia এবং গোল পাতা। পলি জমতে জমতে ভূমি যখন উঁচু হতে থাকে তখন সেখানে আসে অন্যান্য প্রজাতির গাছ। সবচেয়ে পরিচিত হলেও দেরীতে আসা প্রজাতিগুলোর মধ্যে একটি হল গেওয়া (Excoecaria agallocha) । উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে মাঝে মাঝে স্রোতে ভেসে যাওয়া ভূমিটিতে এরপর আসা শুরু করে সুন্দরী (Heritiera fomes)।

[সম্পাদনা] সুন্দরবনের প্রাণী জগৎ

সুন্দরবনে চিত্রা হরিণ অনেক দেখা যায়
সুন্দরবনে চিত্রা হরিণ অনেক দেখা যায়

সুন্দরবনে ব্যাপক প্রাণী বৈচিত্র বিদ্যমান। প্রাণী বৈচিত্র সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনা সুন্দরবনের কিছু কিছু এলাকায় শিকার নিষিদ্ধ করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ অভয়ারণ্যের মত, যেখানে শর্তহীনভাবে বনজ সম্পদ সংগ্রহ করা যায়না এবং বন্য প্রাণীর জীবনে সামান্যই ব্যাঘাত ঘটে। যদিও এটা স্পষ্ট যে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের প্রানী সম্পদ হ্রাস পেয়েছে[৩]এবং সুন্দরবনও এর বাইরে নয় । তারপরও সুন্দরবন বেশ অনেকগুলি প্রাণী প্রাজাতি ও তাদের সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য প্রজাতিদের টিকিয়ে রেখেছে। এদের মধ্যে বাঘ ও শুশুককে প্রাধাণ্য দিয়ে পরিকল্পনা করা হচ্ছে প্রানী বৈচিত্র সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনা ও পর্যটন উন্নয়নের। ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় সম্পূর্ণ বিপরীত পরিবেশে থাকা এ দুইটির অবস্থা এবং সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনা সামগ্রিক প্রাণী বৈচিত্র এবং সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনার শক্তিশালী সূচক। ২০০৪ সালের হিসেব মতে সুন্দরবন ৫০০ রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আবাসস্থল যা পৃথিবীতে বাঘের একক বৃহত্তম অংশ[১১]

সুন্দরবনে নীল ঘাড় ওয়ালা মাছরাঙারও দেখা মিলে।
সুন্দরবনে নীল ঘাড় ওয়ালা মাছরাঙারও দেখা মিলে।

সুন্দরবনের বাস্তুসংস্থান মৌলিক প্রকৃতির এবং যা বন্য প্রাণীর বিশাল আবসস্থল। বন্য প্রাণীর সংখ্যা এবং এর লালনক্ষেত্রের উপর মানুষের সম্পদ সংগ্রহ ও বন ব্যবস্থাপনার প্রভাব অনেক। কচ্ছপ (River terrapin - Betagur baska, Indian flap-shelled turtle - Lissemys punctata এবং Peacock soft-shelled turtle - Trionyx hurum), গিরগিটি Yellow monitor - Varanus flavescens ও Water monitor - Varanus salvator), অজগর (Python molurus) এবং রয়েল বেঙ্গল টাইগার (Panthera tigris tigris) সুন্দরবনের স্থানীয় প্রজাতিগুলোর মধ্যে অন্যতম।

সুন্দরবনের একটি কুমির।
সুন্দরবনের একটি কুমির।

এদের মধ্যে কিছু প্রজাতি সংরক্ষিত, বিশেষ করে বাংলাদেশ বন্যপ্রানী সংরক্ষণ আইন, ১৯৭৩ (P.O. 23 of 1973) দ্বারা। বিভিন্ন প্রজাতির হরিণ (Hog deer - Axis procinus ও Swamp deer - Cervus duvauceli), মহিষ (Bubalis bubalis), গন্ডার(Javan rhinoceros - Rhiniceros sondaicus ও Single horned rhinoceros - Rhinoceros unicornis) এবং কুমিরের (Mugger crocodile - Crocodylus palustris) এর মত কিছু কিছু প্রজাতি সুন্দরবনে বিরল হয়ে উঠেছে ২১ শতকের শুরু থেকে[১২]

সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে বিচিত্র জীব বৈচিত্রের আধার বাংলাদেশের সুন্দরবন বাণিজ্যিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ ১২০ প্রজাতির মাছ, ২৭০ প্রাজাতির পাখি, ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৩৫ সরীসৃপ এবং ৮ টি উভচর প্রাজাতির আবাসস্থল। এ থেকে বোঝা যায় যে বাংলাদেশের সুন্দরবনে বিভিন্ন প্রজাতির একটি বড় অংশ বিদ্যমান ( যেমন - ৩০ শতাংশ সরীসৃপ, ৩৭ শতাংশ পাখি ও ৩৭ শতাংশ স্তন্যপায়ী) এবং এদের একটি বড় অংশ দেশের অন্যান্য অংশে বিরল[১৩] Of these wildlife, Sarker has noted that two amphibians, 14 reptiles, 25 aves and five mammals are presently endangered.[১২]। সরকারের মতে এই প্রানী বৈচিত্রের মধ্যে ২ প্রজাতির উভচর, ১৪ প্রজাতির সরীসৃপ, ২৫ প্রজাতির পাখি এবং ৫ প্রজাতির স্তনপায়ী বর্তমানে হুমকির মুখে[১৩]। পাখি বিষয়ক পর্যবেক্ষণ, পাঠ ও গবেষণার ক্ষেত্রে পাখিবিজ্ঞানীদের জন্য সুন্দরবন এক স্বর্গ[১৪]

[সম্পাদনা] মানুষ খেকো বাঘ

২০০৪ সালের হিসেব মতে, সুন্দরবন প্রায় ৫০০ রয়েল বেঙ্গল টাইগার বাঘের আবাসস্থল যা বাঘের একক বৃহত্তম অংশ[১৫]। এসব বাঘ উল্ল্যেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ, গড়ে প্রতি বছরে প্রায় ১০০ থেকে ২৫০ জন, মেরে ফেলার কারণে ব্যপকভাবে পরিচিত। মানুষের বাসস্থানের সীমানার কাছাকাছি থাকা একমাত্র বাঘ নয় এরা। বাঘের অভায়ারণ্যে চারপাশ ঘেরা বান্ধবগড়ে , মানুষের উপর এমন আক্রমন বিরল। নিরাপত্তার জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা নেয়ায় ভারতীয় অংশের সুন্দরবনে বাঘের আক্রমণে একটিও মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি।

স্থানীয় লোকজন ও সরকারীভাবে দ্বায়িত্বপ্রাপ্তরা বাঘের আক্রমণ ঠেকানোর জন্য বিভিন্ন নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিয়ে থাকেন। স্থানীয় জেলেরা বনদেবী বনবিবির প্রার্থণা ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন করে যাত্রা শুরুর আগে। বাঘের দেবতার (Dakshin Ray) প্রার্থণা করাও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর কাছে জরুরি সুন্দরবনে নিরাপদ বিচরণের জন্য। বাঘ যেহেতু সবসময় পেছন থেকে আক্রমণ করে সেহেতু জেলে এবং কাঠুরেরা মাথার পেছনে মুখোশ পরে। এ ব্যবস্থা স্বল্প সময়ের জন্য কাজ করলেও পরে বাঘ এ কৌশল বুঝে ফেলে এবং আবারও আক্রমণ হতে থাকে।সরকারী কর্মকর্তারা আমেরিকান ফুটবল খেলোয়াড়দের প্যাডের মত শক্ত প্যাড পরেন যা গলার পেছনের অংশ ঢেকে রাখে। এ ব্যবস্থা করা হয় শিরদাঁড়ায় বাঘের কামড় প্রতিরোধ করার জন্য যা তাদের পছন্দের আক্রমণ কৌশল।

এসব বাঘ কেন মানুষকে আক্রমণ করে তার কিছু অনুমিত কারণ এরকমঃ

  • যেহেতু সুন্দরবন সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায় অবস্থিত সেহেতু তুলনামূলকভাবে এখানকার পানি নোনতা।এখানকার অন্যান্য প্রাণীদের মধ্যে বাঘই মিঠাপানি খায়। কেউ কেউ মনে করে পেয়পানির এই লবণাক্ততার কারণে বাঘ সার্বক্ষণ অস্বস্তিকর অবস্থায় থাকে যা তাদের ব্যপকভাবে আগ্রাসী করে তোলে। কৃত্তিম মিঠাপানির হ্রদ তৈরী করে দিয়েও এর কোন সমাধান হয়নি।
  • উঁচু ঢেউ এর কারণে বাঘের গায়ের গন্ধ মুছে যায় যা প্রকৃতপক্ষে বাঘের বিচরণ এলাকার সীমানা চিহ্ণ হিসেবে কাজ করে। ফলে নিজের এলাকা রক্ষায় বাঘের জন্য উপায় একটাই , আর তা হল যা কিছু অনুপ্রবেশ করে তা বাঁধা দেয়া।


  • অন্য একটি সম্ভাবন এমন যে আবহাওয়ার কারণে এরা মানুষের মাংশে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশ ও ভারতের এ অঞ্চলে জলোচ্ছ্বাসে হাজার হাজার মানুষ মারা যায়। আর স্রোতের টানে ভেসে যাওয়া এসব গলিত মৃতদেহ বাঘ খায়।
  • আর একটি সম্ভাবনা হল এরকম যে, নিয়মিত উঁচু নিচু স্রোতের কারণে marsh-like এবং পিচ্ছিল হয়ে ওঠা এলাকায় বাঘের পশু শিকার করার কঠিন হয়ে যায়। আবার নৌকায় চড়ে সুন্দরবন জুড়ে মাছ ও মধু সংগ্রহকারী মানুষ বাঘের সহজ শিকার হয়ে ওঠে। এরকমও বিশ্বাস করা হয় যে মানুষ যখন কাজ বন্ধ করে বসে থাকে তখন বাঘ তাকে পশু ভেবে আক্রমণ করে।
  • এছাড়াও মনে করা হয় যে আবাসস্থলের বিচ্ছিন্নতার কারণে এই অঞ্চলের বাঘ তাদের শিকার করার বৈশিষ্ট্য বদলে ফেলেছে যা ২০ শতক জুড়ে ঘটেছে। এশিয়ার বাকি অংশে বাঘের মানুষভীতি বাড়লেও সুন্দরবনের বাঘ মানুষকে শিকার বানানো বন্ধ করবেনা হয়তো।

[সম্পাদনা] অর্থনীতি

সুন্দরবনের মাছ ধরার নৌকা
সুন্দরবনের মাছ ধরার নৌকা

সুন্দরবনের জনসংখ্যা ৪ মিলিয়নের বেশি[১৬] কিন্তু এর বেশির ভাগই স্থায়ী জনসংখ্যা নয়।

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনীতিতে যেমন, ঠিক তেমন জাতীয় অর্থনীতিতেও সুন্দরবনের গুরুত্বপূর্ণ রয়েছে ভূমিকা । এটি দেশের বনজ সম্পদের একক বৃহত্তম উৎস। এই বন কাঠের উপর নির্ভরশীল শিল্পে কাঁচামাল জোগান দেয়। এছাড়াও কাঠ, জ্বালানী ও মন্ডের মত প্রাথাগত বনজ সম্পদের পাশাপাশি এ বন থেকে নিয়মিত ব্যপকভাবে আহরণ করা হয় ঘর ছাওয়ার পাতা, মধু, মৌচাকের মোম, মাছ, কাঁকড়া এবং শামুক-ঝিনুক। বৃক্ষপূর্ণ সুন্দরবনের এই ভূমি একই সাথে প্রয়োজনীয় আবাসস্থল, পুষ্টি উৎপাদক, পানি বিশুদ্ধকারক, পলি সঞ্চয়কারী, ঝড় প্রতিরোধক, উপকূল স্থিতিকারী, শক্তি সম্পদের আধার এবং পর্যটন কেন্দ্র।

এই বন প্রচুর প্রতিরোধমূলক ও উৎপাদমূলক ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ৫১ শতাংশ জুড়ে সুন্দরবনের, বন থেকে আসা মোট আয়ে অবদান প্রায় ৪১ শতাংশ এবং কাঠ ও জ্বালনী উৎপাদনে অবদান প্রায় ৪৫ শতাংশ ( বিশ্ব খাদ্য সংস্থা, ১৯৯৫ )। অনেকগুলি শিল্প ( যেমনঃ নিউজপ্রিন্ট, দেয়াশলাই, হার্ডবোর্ড, নৌকা, আসবাবপত্র) সুন্দরবন থেকে আহরিত কাঁচামালের উপর নির্ভরশীল। বিভিন্ন অকাঠজাত সম্পদ এবং বনায়ন কমপক্ষে আধা মিলিয়ন উপকূলবর্তী জনসংখার জন্য উল্ল্যেখযোগ্য পরিমাণে কর্মসংস্থান ও আয়ের সুযোগ সৃস্টি করেছে । উৎপাদনমূখী ভূমিকার পাশাপাশি সুন্দরবন, ঘূর্ণিঝড়প্রবণ বাংলাদেশের উপকূলবর্তী জনসংখ্যা ও তাদের সম্পদের প্রাকৃতিক নিরাপত্তাবলয় হিসেবে ভূমিকা রাখে।


মানুষের বসবাস ও অর্থনৈতিক কাজে ব্যপক ব্যবহার হওয়া সত্ত্বেও এখনো সুন্দরবনের ৭০ শতাংশের কাছাকাছি পরিমাণ বনভূমি টিকে আছে, ১৯৮৫ সালে এমন মত জানায় যুক্তরাজ্যের ওভারসিজ ডেভেলপমেন্ট এডমিনিস্ট্রেশন (ও ডি এ) ।

১৯৫৯ সাল থেকে ১৯৮৩ সালের মধ্যে বনজ সম্পদের স্থিতির পরিমান হ্রাস পেয়েছে প্রধাণত দুইটি ম্যানগ্রোভ প্রাজাতির ক্ষেত্রে - সুন্দরী (Heritiera fomes) এবং গেওয়া। এই হ্রাসের পরিমাণযথাক্রমে ৪০ শতাংশ ও ৪৫ শতাংশ (ফরেস্টাল ১৯৬০ এবং ও ডি এ ১৯৮৫)। তাছাড়া, মাছ ও কিছু অমেরুদন্ডী প্রাণী ব্যতীত অন্যান্য বন্যপশু শিকারের ব্যপারে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও সেখানে জীব বৈচিত্র হ্রাসের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে ( এ শতকে উল্ল্যেখযোগ্য হল কমপক্ষে ৬ প্রজাতির স্তন্যপায়ী ও ১ প্রজাতির সরীসৃপ) এবং ফলশ্রুতিতে বাস্তুসংস্থানের মান হ্রাস পাচ্ছে (আই ইউ সি এন ১৯৯৪) ।

[সম্পাদনা] বাংলাদেশের অভয়ারণ্য

বাংলাদেশ অংশের সুন্দরবনের আয়তন প্রায় ৪,১১০ বর্গ কি.মি. । এর মধ্যে নদী, খাল ও খাঁড়ি রয়েছে প্রায় ১,৭০০ বর্গ কি.মি. যাদের প্রশস্ততা কয়েক মিটার থেকে শুরু করে কয়েক কি.মি. পর্যন্ত। জালের মত পরস্পর যুক্ত নৌপথের কারণে সুন্দরবনের প্রায় সব জায়গাতেই সহজে নৌকায় করে যাওয়া যায়। সুন্দরবনের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে ২টি বনবিভাগ, ৪টি প্রশাসনিক রেঞ্জ - চাঁদপাই, শরণখোলা, খুলনা ও বুড়িগোয়ালিনি এবং ১৬টি বন স্টেশন। বনটি আবার ৫৫ কম্পার্টমেন্ট এবং ৯টি ব্লকে বিভক্ত[১]। ১৯৯৩ সালে নতুন করে খুলনা বন সার্কেল গঠন করা হয়েছে বন সংরক্ষণের জন্য এবং তাতে একটি সংরক্ষক পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। বনবিভাগের প্রশাসনিক প্রধাণের পদটি খুলনাকেন্দ্রিক । প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপনা ও প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য বিভাগীয় বন কর্মকর্তার অধীনে রয়েছে বহু সংখ্যক পেশাদার, অপেশাদের ও সহায়ক জনবল। ব্যবস্থাপনার কেন্দ্রীয় একক হল কম্পার্টমেন্ট। চারটি বন রেঞ্জের অধীনে থাকা ৫৫টি কম্পার্টমেন্ট স্পস্টতই নদী, খাল, খাঁড়ির মত প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট অনুযায়ী বিভক্ত।

বাংলাদেশে অভয়ারণ্য তিনটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন, ১৯৭৩ (P.O. 23 of 1973) দ্বারা। এগুলো হলোঃ

১. পূর্বাঞ্চলীয় সুন্দরবন অভয়ারণ্যঃ আয়তন প্রায় ৩১,২২৭ হেক্টর। মিঠাপানি ও সুন্দরী গাছের (Heritiera fomes) প্রাধাণ্যের সাথে সাথে গেওয়া (Excoecaria agallocha), পশুর (Xylocarpus mekongensis) ও কেওড়া (Bruguiera gymnorrhiza) রয়েছে বন্যাপ্রবণ এলাকাটি জুড়ে। সিংড়া (Cynometra ramiflora) হয় অপেক্ষাকৃত শুষ্ক মাটিতে, আমুর (Amoora cucullata) হয় জলপ্রধাণ এলাকায়, গরান (Ceriops decandra) হয় নোনা এলাকায় এবং গোল পাতা (Nypa fruticans) জলধারা বরাবর হয়।


২. দক্ষীণাঞ্চলীয় সুন্দরবন অভয়ারণ্যঃ বিস্তৃত ৩৬,৯৭০ হেক্টর এলাকা জুড়ে। এলাকাটিতে লবণাক্ততার বিশাল মৌসুমী তারতম্যের প্রমাণ রয়েছে। তুলনামূলকভাবে দীর্ঘকালীন লবণাক্ততাপ্রবণ এলাকাটির প্রধাণ বৃক্ষ প্রজাতির মধ্যে রয়েছে গেওয়া। এটি প্রায়ই সেসব স্থানে জন্মায় যেখানে সুন্দরী অত সফলভাবে বংশ বিস্তার করতে পারেনা।


৩. পশ্চিমাঞ্চলীয় সুন্দরবন অভয়ারণ্যঃ ৭১,৫০২ হেক্টর এলাকা জুড়ে অবস্থিত। এ এলাকার তুলনামূলকভাবে শুষ্ক ভূমি ও নদীর তীরে গেওয়া, গরান ও হন্তাল জন্মে।

[সম্পাদনা] জনপ্রিয় মাধ্যমে সুন্দরবনের উপস্থিতি

  • ২০০৪ সালে প্রকাশিত পুরস্কার বিজয়ী নৃতাত্ত্বিক অমিতাভ ঘোষের “দ্যা হাঙ্গরি টাইড” উপন্যাসের অধিকাংশ কাহিনী সুন্দরবনকেন্দ্রিক।
  • সালমান রুশদির বুকার পুরস্কার বিজয়ী উপন্যাস “মিডনাইটস চিলড্রেন” এর কাহিনীর অংশ বিশেষও সুন্দরবনকেন্দ্রিক।


[সম্পাদনা] বিস্তারিত তথ্যের জন্য আরো দেখুন এখানে

[সম্পাদনা] টীকা এবং তথ্যসূত্র

  1. ১.০ ১.১ ১.২ Pasha, Mostafa Kamal & Neaz Ahmad Siddiqui (2003), "Sundarbans", in Islam, Sirajul, Banglapedia: national encyclopedia of Bangladesh, Dhaka: Asiatic Society of Bangladesh, ISBN 9843205766 
  2. Sundarbans Tiger Project
  3. ৩.০ ৩.১ ৩.২ Hussain, Z. and G. Acharya, 1994. (Eds.) Mangroves of the Sundarbans. Volume two : Bangladesh. IUCN, Bangkok, Thailand. 257 p.
  4. UNDP, 1998. Integrated resource development of the Sundarbans Reserved Forests, Bangladesh. Volume I Project BGD/84/056, United Nations Development Programme, Food and Agriculture Organization of the United Nations, Dhaka, The People’s Republic of Bangladesh. 323 p.
  5. Katebi, M.N.A. and M.G. Habib, 1987. Sundarbans and Forestry in Coastal Area Resource Development and Management Part II, BRAC Printers, Dhaka, Bangladesh. 107 p.
  6. Case Studies of Climate Change, UNESCO, 2007
  7. Prain, D. 1903. The flora of Sundarbans. Records of the Botanical Survey of India. 114: 231-272.
  8. Khatun, B.M.R. and M.K. Alam, 1987. Taxonomic studies in the genus Avicennia Linn. from Bangladesh. Bangladesh J. Bot. 16(1): 39-44.
  9. Weaver, J.E. and F.E. Clements, 1938. Plant Ecology. McGraw-Hill Book Company, Inc. New York. 601 p.
  10. Watson, J.G. 1928. Mangrove swamps of the Malayan peninsula. Malayan Forest Records 6:1-275.
  11. www.bforest.gov.bd/highlights.php
  12. ১২.০ ১২.১ Sarker, S.U. 1993. Ecology of Wildlife UNDP/FAO/BGD/85/011. Field Document N. 50 Institute of Forestry and Environmental Sciences. Chittagong, Bangladesh. 251 p.
  13. Scott, D.A. 1991. Asia and the Middle East Wetlands. M. Finlayson and M. Moser (eds.). Oxford: 151-178.
  14. Habib, M.G. 1999. Message In: Nuruzzaman, M., I.U. Ahmed and H. Banik (eds.). The Sundarbans world heritage site: an introduction, Forest Department, Ministry of Environment and Forest, Government of the People’s Republic of Bangladesh. 12 p.
  15. www.bforest.gov.bd/highlights.php
  16. Subir Bhaumik, Fears rise for sinking Sundarbans, BBC News, 2003-09-15


এই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সমৃদ্ধ করতে পারেন

Static Wikipedia (no images)

aa - ab - af - ak - als - am - an - ang - ar - arc - as - ast - av - ay - az - ba - bar - bat_smg - bcl - be - be_x_old - bg - bh - bi - bm - bn - bo - bpy - br - bs - bug - bxr - ca - cbk_zam - cdo - ce - ceb - ch - cho - chr - chy - co - cr - crh - cs - csb - cu - cv - cy - da - de - diq - dsb - dv - dz - ee - el - eml - en - eo - es - et - eu - ext - fa - ff - fi - fiu_vro - fj - fo - fr - frp - fur - fy - ga - gan - gd - gl - glk - gn - got - gu - gv - ha - hak - haw - he - hi - hif - ho - hr - hsb - ht - hu - hy - hz - ia - id - ie - ig - ii - ik - ilo - io - is - it - iu - ja - jbo - jv - ka - kaa - kab - kg - ki - kj - kk - kl - km - kn - ko - kr - ks - ksh - ku - kv - kw - ky - la - lad - lb - lbe - lg - li - lij - lmo - ln - lo - lt - lv - map_bms - mdf - mg - mh - mi - mk - ml - mn - mo - mr - mt - mus - my - myv - mzn - na - nah - nap - nds - nds_nl - ne - new - ng - nl - nn - no - nov - nrm - nv - ny - oc - om - or - os - pa - pag - pam - pap - pdc - pi - pih - pl - pms - ps - pt - qu - quality - rm - rmy - rn - ro - roa_rup - roa_tara - ru - rw - sa - sah - sc - scn - sco - sd - se - sg - sh - si - simple - sk - sl - sm - sn - so - sr - srn - ss - st - stq - su - sv - sw - szl - ta - te - tet - tg - th - ti - tk - tl - tlh - tn - to - tpi - tr - ts - tt - tum - tw - ty - udm - ug - uk - ur - uz - ve - vec - vi - vls - vo - wa - war - wo - wuu - xal - xh - yi - yo - za - zea - zh - zh_classical - zh_min_nan - zh_yue - zu -

Static Wikipedia 2007 (no images)

aa - ab - af - ak - als - am - an - ang - ar - arc - as - ast - av - ay - az - ba - bar - bat_smg - bcl - be - be_x_old - bg - bh - bi - bm - bn - bo - bpy - br - bs - bug - bxr - ca - cbk_zam - cdo - ce - ceb - ch - cho - chr - chy - co - cr - crh - cs - csb - cu - cv - cy - da - de - diq - dsb - dv - dz - ee - el - eml - en - eo - es - et - eu - ext - fa - ff - fi - fiu_vro - fj - fo - fr - frp - fur - fy - ga - gan - gd - gl - glk - gn - got - gu - gv - ha - hak - haw - he - hi - hif - ho - hr - hsb - ht - hu - hy - hz - ia - id - ie - ig - ii - ik - ilo - io - is - it - iu - ja - jbo - jv - ka - kaa - kab - kg - ki - kj - kk - kl - km - kn - ko - kr - ks - ksh - ku - kv - kw - ky - la - lad - lb - lbe - lg - li - lij - lmo - ln - lo - lt - lv - map_bms - mdf - mg - mh - mi - mk - ml - mn - mo - mr - mt - mus - my - myv - mzn - na - nah - nap - nds - nds_nl - ne - new - ng - nl - nn - no - nov - nrm - nv - ny - oc - om - or - os - pa - pag - pam - pap - pdc - pi - pih - pl - pms - ps - pt - qu - quality - rm - rmy - rn - ro - roa_rup - roa_tara - ru - rw - sa - sah - sc - scn - sco - sd - se - sg - sh - si - simple - sk - sl - sm - sn - so - sr - srn - ss - st - stq - su - sv - sw - szl - ta - te - tet - tg - th - ti - tk - tl - tlh - tn - to - tpi - tr - ts - tt - tum - tw - ty - udm - ug - uk - ur - uz - ve - vec - vi - vls - vo - wa - war - wo - wuu - xal - xh - yi - yo - za - zea - zh - zh_classical - zh_min_nan - zh_yue - zu -

Static Wikipedia 2006 (no images)

aa - ab - af - ak - als - am - an - ang - ar - arc - as - ast - av - ay - az - ba - bar - bat_smg - bcl - be - be_x_old - bg - bh - bi - bm - bn - bo - bpy - br - bs - bug - bxr - ca - cbk_zam - cdo - ce - ceb - ch - cho - chr - chy - co - cr - crh - cs - csb - cu - cv - cy - da - de - diq - dsb - dv - dz - ee - el - eml - eo - es - et - eu - ext - fa - ff - fi - fiu_vro - fj - fo - fr - frp - fur - fy - ga - gan - gd - gl - glk - gn - got - gu - gv - ha - hak - haw - he - hi - hif - ho - hr - hsb - ht - hu - hy - hz - ia - id - ie - ig - ii - ik - ilo - io - is - it - iu - ja - jbo - jv - ka - kaa - kab - kg - ki - kj - kk - kl - km - kn - ko - kr - ks - ksh - ku - kv - kw - ky - la - lad - lb - lbe - lg - li - lij - lmo - ln - lo - lt - lv - map_bms - mdf - mg - mh - mi - mk - ml - mn - mo - mr - mt - mus - my - myv - mzn - na - nah - nap - nds - nds_nl - ne - new - ng - nl - nn - no - nov - nrm - nv - ny - oc - om - or - os - pa - pag - pam - pap - pdc - pi - pih - pl - pms - ps - pt - qu - quality - rm - rmy - rn - ro - roa_rup - roa_tara - ru - rw - sa - sah - sc - scn - sco - sd - se - sg - sh - si - simple - sk - sl - sm - sn - so - sr - srn - ss - st - stq - su - sv - sw - szl - ta - te - tet - tg - th - ti - tk - tl - tlh - tn - to - tpi - tr - ts - tt - tum - tw - ty - udm - ug - uk - ur - uz - ve - vec - vi - vls - vo - wa - war - wo - wuu - xal - xh - yi - yo - za - zea - zh - zh_classical - zh_min_nan - zh_yue - zu

Static Wikipedia February 2008 (no images)

aa - ab - af - ak - als - am - an - ang - ar - arc - as - ast - av - ay - az - ba - bar - bat_smg - bcl - be - be_x_old - bg - bh - bi - bm - bn - bo - bpy - br - bs - bug - bxr - ca - cbk_zam - cdo - ce - ceb - ch - cho - chr - chy - co - cr - crh - cs - csb - cu - cv - cy - da - de - diq - dsb - dv - dz - ee - el - eml - en - eo - es - et - eu - ext - fa - ff - fi - fiu_vro - fj - fo - fr - frp - fur - fy - ga - gan - gd - gl - glk - gn - got - gu - gv - ha - hak - haw - he - hi - hif - ho - hr - hsb - ht - hu - hy - hz - ia - id - ie - ig - ii - ik - ilo - io - is - it - iu - ja - jbo - jv - ka - kaa - kab - kg - ki - kj - kk - kl - km - kn - ko - kr - ks - ksh - ku - kv - kw - ky - la - lad - lb - lbe - lg - li - lij - lmo - ln - lo - lt - lv - map_bms - mdf - mg - mh - mi - mk - ml - mn - mo - mr - mt - mus - my - myv - mzn - na - nah - nap - nds - nds_nl - ne - new - ng - nl - nn - no - nov - nrm - nv - ny - oc - om - or - os - pa - pag - pam - pap - pdc - pi - pih - pl - pms - ps - pt - qu - quality - rm - rmy - rn - ro - roa_rup - roa_tara - ru - rw - sa - sah - sc - scn - sco - sd - se - sg - sh - si - simple - sk - sl - sm - sn - so - sr - srn - ss - st - stq - su - sv - sw - szl - ta - te - tet - tg - th - ti - tk - tl - tlh - tn - to - tpi - tr - ts - tt - tum - tw - ty - udm - ug - uk - ur - uz - ve - vec - vi - vls - vo - wa - war - wo - wuu - xal - xh - yi - yo - za - zea - zh - zh_classical - zh_min_nan - zh_yue - zu