বার্লিন প্রাচীর
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বার্লিন প্রাচীর(জার্মান: Berliner Mauer) ইতিহাসে পরিচিত হয়ে আছে পশ্চিম ও পূর্ব বার্লিনের সীমানা প্রাচীর হিসেবে । ১৩ আগস্ট ,১৯৬১ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত সুদীর্ঘ
২৮ বছর এটি পশ্চিম বার্লিন থেকে পূর্ব বার্লিন এবং পূর্ব জার্মানির অন্যান্য অংশকে পৃথক করে রেখেছিল ।
সরকারী হিসাব অনুযায়ী এ সময়কালে প্রাচীর টপকে পশ্চিম বার্লিন যাবার চেষ্টাকালে ১২৫ জন প্রাণ হারান [১]। বেসরকারী হিসাবে এ সংখ্যা প্রায় ২০০[২]। সদ্য প্রকাশিত দলিলে দেখা যায় কমিউনিস্ট সরকার পক্ষত্যাগকারীদের গুলি করার নির্দেশ দিয়ে রেখেছিল । যদিও পূর্ব জার্মান সরকার সবসময় এটা অস্বীকার করে আসছিল [৩]।
কয়েক সপ্তাহের জনঅসন্তোষের পর ৯ নভেম্বর , ১৯৮৯ পূর্ব জার্মান সরকার পশ্চিম বার্লিনে যাবার অনুমতি দেবার সিদ্ধান্ত নেয় । হাজার হাজার উৎসুক জনতা প্রাচীর টপকে পশ্চিম পাশে যেতে থাকে । পশ্চিম প্রান্তে উৎসবমুখর পরিবেশে তাদের স্বাগত জানানো হয় । কয়েক সপ্তাহের মধ্যে স্যুভেনির সংগ্রাহকরা প্রাচীরটির কিছু অংশ ভেঙ্গে ফেলে । পরে আনুষ্ঠানিকভাবে পুরো প্রাচীর সরিয়ে নেয়া হয় ।
বার্লিন প্রাচীর খুলে দেয়ার ঘটনা দুই জার্মানির পুনঃএকত্রিকরণের পথ প্রশস্থ করে দেয় , যার আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়ে ১৯৯০ সালের ৩ অক্টোবর।
সূচিপত্র |
[সম্পাদনা] পটভূমি
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরিসমাপ্তির পর জার্মানি কার্যত চারটি অংশে বিভক্ত হয়ে পড়ে । চারটি অংশের শাসনভার ন্যস্ত ছিল মিত্রশক্তির চার পরাশক্তি
- যুক্তরাষ্ট্র , ফ্রান্স , ব্রিটেন এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের উপর । বার্লিন শহরটি সোভিয়েত অংশের অন্তর্গত হলেও এটিও চার অংশে বিভক্ত করা হয় । দখলদার রাষ্ট্রগুলো উদ্দেশ্য জার্মানি শাসন হলেও শীতল যুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে ফ্রান্স, ব্রিটেন এবং যুক্তরাষ্ট্র অধিকৃত অংশ নিয়ে গঠন করা হয় ফেডারেল রিপাবলিক অব জার্মানি । এর বিপরীতে সোভিয়েত অধিকৃত অংশে গঠিত হয় ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব জার্মানি ।
[সম্পাদনা] দুই জার্মানির ভিন্নতা
সামাজিক বাজার ব্যবস্থায় পশ্চিম জার্মানি পরিণত হয় একটি পুঁজিবাদী রাষ্ট্রে । ৫০ এর দশক থেকে শুরু করে পরবর্তী ৩০ বছর দেশটি বিপুল প্রবৃদ্ধি অর্জন করে । অন্যদিকে পূর্ব জার্মানির অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ছিল সোভিয়েত অনুকরণে সাজানো সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি । এর ফলে দেশটি সোভিয়েত ব্লকের অন্যান্য দেশের তুলনায় সম্পদশালী হয়ে উঠলেও , পশ্চিম জার্মানির চাইতে অনেক পিছিয়ে ছিল । পশ্চিম জার্মানির অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধায় আকৃষ্ট হয়ে অনেক পূর্ব জার্মান নাগরিক পশ্চিমাংশে চলে যেতে শুরু করে । বিপুল পরিমাণ অভিবাসন ঠেকাতে পূর্ব জার্মান সরকার সিদ্ধান্ত নেয় বার্লিনের পশ্চিমাংশ ও পূর্বাংশের মাঝে একটি দেয়াল তুলে দেয়া হবে[৪]।
[সম্পাদনা] প্রস্তাবিত প্রাচীর
১লা এপ্রিল , ১৯৫২ পূর্ব জার্মান নেতৃবৃন্দ স্ট্যালিনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভয়েসলাভ মতোলোভ এর সাথে আলোচনায় বসেন । এর ফলে সিদ্ধান্ত হয় পশ্চিমাংশের নাগরিকরা বিশেষ পাশ সংগ্রহ করে পূর্বাংশে আসতে পারবেন । স্ট্যালিন দুই জার্মানির সীমান্তকে বিপদজনক উল্লেখ করে এর দুই স্তরের পাহাড়ার প্রস্তাব করেন , যার প্রথম স্তরে থাকবে পূর্ব জার্মান সীমান্তপ্রহরী এবং দ্বিতীয়াংশে থাকবে সোভিয়েত সেনা [৫]।পূর্ব জার্মান প্রধানমন্ত্রী ওয়াল্টার উলবিকট এ ব্যাপারে ত্বরিত পদক্ষেপ নেন । প্রস্তাবটি সোভিয়েত প্রধানমন্ত্রী নিকিতা ক্রুশ্চেভ অনুমোদন করেন । প্রথমে প্রস্তাব করা হয় দুই অংশের মাঝে পৃথককারী তারকাটার বেড়া দেয়া হবে
[সম্পাদনা] নির্মাণ কাজের সূচনা , ১৯৬১
প্রাচীরের নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার দু'মাস পূর্বে ১৫ জুন ,১৯৬১ ওয়াল্টার উলবিকট এক সাংবাদিক সম্মেলনে উল্লেখ করেন Niemand hat die Absicht, eine Mauer zu errichten! (No one has the intention to erect a wall).প্রথমবারের মত 'প্রাচীর' শব্দটির ব্যবহার প্রাচীর ধারণার জন্ম দেয় । ১২ আগস্ট,১৯৬১ পূর্ব জার্মান নেতৃবৃন্দ ডলসি উদ্যান(Döllnsee) আলোচনায় মিলিত হন । ১৩ আগস্ট , রবিবার প্রথম প্রহরে নির্মানকাজ শুরু হয় । পশ্চিম বার্লিনের চারপাশে ১৫৬ কিমি দীর্ঘ এ দেয়ালের ৪৩ কিমি সরাসরি দু'অংশকে পৃথক করে । নির্মানকাজের সময় কেউ পশ্চিমাংশে চলে যেতে এই আশংকায় পূর্ব জার্মান সেনাবাহিনী এবং আধাসামরিক বাহিনী দেয়ালের সামনে সশস্ত্র অবস্থান নেয় । নির্মাণকাজে কোন সোভিয়েত সৈন্যের অংশগ্রহন ছিল না । পশ্চিম বার্লিনের কোন অংশ যেন পূর্বাংশের মধ্যে চলে না আসে , সেজন্য পূর্ব বার্লিনের খানিকটা ভেতরে প্রাচীর নির্মিত হয় ।
[সম্পাদনা] তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া
পূর্ব এবং পশ্চিম জার্মানির মাঝে প্রকৃত সীমারেখাও কাটাতারের বেড়া , দেয়াল , মাইনক্ষেত্র এবং অন্যান্য স্থাপনা দিয়ে পৃথক করে দেয়া হয় প্রাচীরের কারণে বহু পরিবারের সদস্যরা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় , পশ্চিম বার্লিন পরিণত হয় পূর্ব জার্মানীর একটি ছিটমহলে । মেয়র উইলি ব্রান্টের নেতৃত্বে পশ্চিম বার্লিনবাসী যুক্তরাষ্ট্রের নীরব ভূমিকার তীব্র প্রতিবাদ জানায় ।
১৯৬৩]]
২৫ জুলাই , ১৯৬১ মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি জানান , যুক্তরাষ্ট্র কেবল পশ্চিম জার্মানি এবং পশ্চিম বার্লিনের নাগরিকদের নিরাপত্তার ব্যাপারে ভূমিকা রাখতে পারে । পূর্ব বার্লিনের ব্যাপারে কোন হস্তক্ষেপ পরিস্থিতিকে উত্তপ্ত করে তুলতে পারে । যুক্তরাষ্ট্র কেবল কূটনৈতিক পর্যায়ে মৃদু প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে । এর কয়েকমাস পর যুক্তরাষ্ট্র সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছে প্রাচীর নির্মাণের অধিকারকে আন্তর্জাতিক অধিকারের আওতাভুক্ত বলে স্বীকার করে নেয়।
পূর্ব জার্মান সরকার একে পশ্চিমা আক্রমণ এবং ফ্যাসিজম বিরোধী প্রাচীর("antifaschistischer Schutzwall") হিসেবে উল্লেখ করে[২] । কিন্তু এ ধারণার সত্যতা নিয়ে পূর্ব জার্মানিতেও বিপুল সন্দেহ ছিল । প্রাচীর নির্মাণের ফলে পূর্ব বার্লিনবাসীদের অবর্ননীয় ভোগান্তির শিকার হতে হয় ।
এ প্রাচীরের মূল উদ্দেশ্য পূর্ব জার্মানি থেকে শরণার্থীদের স্রোতে বাধা প্রদান , পাশাপাশি আরও কয়েকটা ব্যাপার গুরুত্বপূর্ন ছিল । সোভিয়েত দাবী অনুযায়ী এ প্রাচীরের মাধ্যমে পূর্ব জার্মানি এবং ওয়ারশ ব্লক ভুক্ত রাষ্ট্রগুলোতে পশ্চিমা গুপ্তচরদের অনুপ্রবেশ রোধ করা হয় ।শীতল যুদ্ধের পটভূমিতে এ প্রাচীর অগ্রণী ভূমিকা পালন করে । পূর্ব জার্মানি এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন পশ্চিম জার্মানিকে একটি পুতুল রাষ্ট্র হিসেবেই গণ্য করতো । পুঁজিবাদী বিশ্ব , ইউরো ডলার , এবং পশ্চিম জার্মানিতে মেধাপাচার রোধের বিরুদ্ধে এ প্রাচীরের ছিল শক্তিশালী ভূমিকা
[সম্পাদনা] প্রাচীরের কাঠামো এবং পরিবর্তনসমূহ
১৫৫ কিমি প্রাচীরটি গড়ে তোলা হয় পূর্ব জার্মানীর ১০০ গজ ভেতরে । এই ১০০ গজের মধ্যে থাকা বাড়িঘর এবং স্থাপনা ধ্বংস করে একটি নোম্যান্সল্যান্ড তৈরি করা হয় । এখানকার অধিবাসীদের অন্যত্র স্থানান্তর করা হয় । ১০০ গজের এই নিরপেক্ষ এলাকাটি পরিচিত ছিল মৃত্যু ফাঁদ হিসেবে।পায়ের চিহ্ন সহজে চিহ্নিত করার জনউ এ অংশটি নুড়ি এবং বালু দিয়ে ভরে দেয়া হয় । স্থাপন করা হয় স্বয়ংক্রিয় ফাঁদ , যেগুলো কারও পায়ের স্পর্শে সচল হয়ে উঠবে।স্পষ্ট দৃষ্টি সীমার মধ্যে থাকায় প্রহরীদের গুলি চালানোর জন্য সুবিধাজনক এলাকা হিসেবে এ অংশটি আরও গুরুত্বপূর্ন হয়ে উঠে ।
প্রাচীরটিতে যেসব পরিবর্তন আনা হয় সেগুলোকে মোটামুটি ৪ টি ভাগে ভাগ করা যায় :
- কাঁটাতারের প্রাথমিক বেড়া (১৯৬১-৬২)
- কাঁটাতারের উন্নত বেড়া (১৯৬২-৬৫)
- কনক্রিটের দেয়াল(১৯৬৫-৭৫)
- Grenzmauer 75 (সীমানা প্রাচীর৭৫) (১৯৭৫-৮৯)
চতুর্থ পর্যায়ের দেয়ালটি ছিল সবচেয়ে আধুনিক । এর নামকরণ করা হয় "Stützwandelement UL 12.11" ।এটির নির্মাণকাজ শুরু হয় ১৯৭৫ সালে [৬], এবং শেষ হয় ১৯৮০ সালে [৭]। এতে ৪৫০০০ পৃথক কনক্রিট স্ল্যাব ছিল । প্রতিটি স্ল্যাবের দৈর্ঘ্য ১২ ফিট এবং প্রস্থ ৪ ফিট । এতে খরচ হয় ১৬১৫৫০০০ পূর্ব জার্মান মার্ক [৮] ।এটির পাশে স্থাপন করা হয় ১১৬ টি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার , এবং ২০ টি বাংকার[৯] । বর্তমানে অবশিষ্ট থাকা দেয়ালের অংশবিশেষ চতুর্থ পর্যায়ের দেয়ালের স্মারক ।
[সম্পাদনা] প্রাচীর দু'প্রান্তের মধ্যে পাড়াপাড়ের অফিসিয়াল চেকপয়েন্টসমূহ
পূর্ব এবং পশ্চিম বার্লিনের মাঝে যাতায়াতের জন্য আটটি আনুষ্ঠানিক পথ রাখা হয় । পশ্চিম বার্লিনবাসী,পশ্চিম জার্মান নাগরিক , পশ্চিমা বিশ্বের নাগরিক ,অন্যান্য দেশের নাগরিক, অনুমতিপ্রাপ্ত পূর্ব বার্লিনবাসীরা এ পথগুলো ব্যবহার করতেন পশ্চিম বার্লিন এবং একে ঘিরে থাকা পূর্ব জার্মানির অন্য অংশগুলোর মাঝেও কয়েকটি যাতায়াতের পথ ছিল । পশ্চিম বার্লিনবাসীরা পূর্ব জার্মানি , পশ্চিম জার্মানি এবং অন্যান্য দেশ(ডেনমার্ক , চেকোস্লাভাকিয়া) তে যাওয়ার জন্য , এবং পূর্ব জার্মানদের পশ্চিম বার্লিনে প্রবেশের জন্য এগুলো ব্যবহৃত হতো । ১৯৭২ এর চুক্তি অনুযায়ী এ পথগুলো দিয়ে পশ্চিম বার্লিনের বর্জ্ পূর্ব জার্মানির ভাগাড়গুলোতে ফেলার অনুমতি দেয়া হয়।
পূর্ব জার্মানির অভ্যন্তরে Steinstücken ছিটমহলের সাথে পশ্চিম বার্লিনের যোগাযোগের জন্যও এ পথগুলো ব্যবহার করা হত । ৪ টি প্রধান শক্তির চুক্তির অংশ হিসেবে প্রাচীরের ইতিহাসে অধিকাংশ সময় জুড়ে মিত্রপক্ষের এবং সেনা , কর্মকর্তা এবং কূটনীতিবিদগণ বার্লিনের উভয় অংশের মধ্যে বেশ সহজে চলাচল করতে পারতেন । পশ্চিম বার্লিনবাসীদের ক্ষেত্রে বেশ কঠোরতা অবলম্বন করা হয় ।২৬ আগস্ট ১৯৬১ থেকে ১৭ ডিসেম্বর ১৯৬৩ পর্যন্ত পশ্চিম বার্লিনবাসীদের জন্য সবগুলো পথ বন্ধ ছিল । ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বরে চুক্তির মাধ্যমে এটি শিথিল করা হয়। পশ্চিম জার্মানির সাথে পশ্চিম জার্মানির সড়ক যোগাযোগের চারটি পথ ছিল । এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল বার্লিনের দক্ষিন পশ্চিমের Berlin -Helmstedt autobahn । এটি বার্লিনের চেকপয়েন্ট ব্রাভো(Checkpoint Bravo)র মধ্য দিয়ে পূর্ব জার্মানির Helmstedt শহরের সাথে সংযুক্ত ছিল । পশ্চিম বার্লিন প্রবেশের জন্য ৪ টি রেলপথ ছিল । নৌকায় করে খাল অতিক্রম করেও প্রবেশ করা যেত।
বিদেশি নাগরিকগণ বেশ সহজে দুই বার্লিনের মধ্যে যাতায়াত করতে পারতেন । পূর্ব বার্লিনবাসীদের জন্য প্রক্রিয়াটা ছিল অনেক কঠিন ।অবশ্য পেনশনভোগীরা তেমন কোন বাধার সম্মুখীন হতেন না।মোটরযানের নিচের অংশ আঁকড়ে ধরে কেউ পালিয়ে যাচ্ছে কিনা সেটা পরীক্ষার জন্য পূর্ব বার্লিন ত্যাগকারী মোটরযানগুলো নিচে আয়না দিয়ে পরীক্ষা করা হত।প্রাচীরের পোস্টডাম(Potsdam) অংশে মার্কিন পাইলট গ্যারি পাওয়ারস এর সাথে সোভিয়েত গুপ্তচর রুডলফ আবেল এর বিনিময় হওয়ার ঘটনাটি ঘটেছিল। পশ্চিম বার্লিনবাসি ফ্রেডরিখস্ট্রস স্টেশন এবং চেকপয়েন্ট চার্লি দিয়ে পূর্বাংশে যাতায়াত করতে পারতো । প্রাচীর নির্মাণের ফলে বার্লিনের পরিবহন ব্যবস্থা(S-Bahn and U-Bahn) দু'টি অংশে ভাগ হয়ে পড়ে [১০]। অনেকগুলো স্টেশন বন্ধ হয়ে যায় । পশ্চিমাংশের তিনটি রেলপথ পূর্বাংশের স্টেশনের মধ্য দিয়া না থেমে অতিক্রম করতো ।এগুলোকে ভূতুড়ে স্টেশন(called Geisterbahnhöfe, or ghost stations) বলা হতো ।
[সম্পাদনা] পলায়ন প্রচেষ্টা
বার্লিন প্রাচীরের ২৮ বছর ইতিহাসে প্রাচীর অতিক্রম করে পশ্চিম বার্লিনে যাবার প্রায় ৫০০০ টি ঘটনা ঘটে । প্রাচীর অতিক্রমের ঘটনায় ঠিক কতজন মৃত্যুবরণ করেছিল তা নিয়ে বিতর্ক আছে ।চেকপয়েন্ট চার্লি মিউজিয়ামের ডিরেক্টর আলেকজান্ড্রা হিলডেব্রান্ড(Alexandra Hildebrandt) এর মতে মৃতের সংখ্যা ২০০ ।তবে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর কনটেম্পরারি হিস্টরিকাল রিসার্চ (ZZF) এর মতে মৃতের সংখ্যা ১৩৩। পূর্ব জার্মান কর্তৃপক্ষ প্রাচীর অতিক্রমের চেষ্টাকারী যে কাউকে দেখামাত্র গুলি করার জন্য সীমান্ত প্রহরীদের নির্দেশ প্রদান করে । নারী ও শিশুদের ক্ষেত্রেও এ আদেশ পালনে কোন ধরণের শৈথিল্যের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ হুশিয়ার করে দেয় ।
প্রথম দিকে কাটাতারের বেড়ার উপর দিয়ে লাফিয়ে পড়ে বা দেয়ালের পাশের কোন অ্যাপার্টমেন্ট থেকে লাফিয়ে পড়ে সীমান্ত পাড়ি দেবার ঘটনা ঘটে । তবে সময়ের সাথে সাথে উন্নততর প্রাচীর নির্মিত হলে এভাবে পক্ষত্যাগ করা সম্ভবপর হয়নি ।
১৫ আগস্ট , ১৯৬১ কোনার্ড শুম্যান নামে এক পূর্ব জার্মান সীমান্ত প্রহরী সর্বপ্রথম কাঁটাতারের বেড়ার উপর দিয়ে লাফিয়ে পশ্চিমাংশে চলে আসেন। পরবর্তীতে মাটির নিচে টানেল খুঁড়ে , ঝোড়ো বাতাসের সাহায্য নিয়ে লাফিয়ে পড়ে , তার বেয়ে , বেলুনে চেপে , স্পোর্টসকার চালিয়ে চেকপোস্টের দরজা ভেঙ্গে প্রাচীর অতিক্রমের ঘটনা ঘটে । এসব ঘটনা এড়াতে চেকপোস্ট ধাতব বার স্থাপন করা হয় , যাতে মোটরগাড়ি এতে বাধাপ্রাপ্ত হয় । এরপরও চেষ্টা থেমে থাকেনি । ৪ জন আরোহী বিশেষভাবে তৈরি স্পোর্টকার চালিয়ে বারের নিচ দিয়ে প্রাচীরের দ্বার ভেঙ্গে পশ্চিম পাশে যাবার ঘটনা ঘটে । এটি প্রতিরোধের জন্য পরবর্তীতে সীমান্তচৌকিগুলোর কাছাকাছি রাস্তা আঁকাবাকা করে দেয়া হয়।
অন্য এক ঘটনায় থমাস ক্রুগার নামে একজন পক্ষত্যাগকারী হালকা প্রশিক্ষণ বিমান চালিয়ে পশ্চিম পাশে অবতরণ করেন ।খালি বিমানটির গায়ে নানা বিদ্রুপাত্মক কথা লিখে , সড়কপথে পূর্বাংশে ফেরত পাঠানো হয় ।
প্রাচীর অতিক্রমের চেষ্টায় গুলিতে আহত হয়ে কেউ দুই বার্লিনের মাঝে নিরপেক্ষ অংশে পড়ে থাকলেও পশ্চিম জার্মানদের পক্ষে তাকে উদ্ধার করা সম্ভবপর হতো না । নিরপেক্ষ অংশের সাথে পশ্চিম বার্লিনের কেবল কাঁটাতারের বেড়া থাকলেও নিরপেক্ষ অংশটি পূর্ব জার্মানির অংশ ছিল । ফলে উদ্ধার প্রচেষ্টা চললে পূর্ব জার্মান সীমানা প্রহরীদের কাছ থেকে গুলিবর্ষণের আশংকা থাকতো । এরকম ঘটনাগুলোর প্রথমটি ঘটে ১৯৬২ সালের ১৭ আগস্ট । পিটার ফ্লেচার নামে ১৮ বছরের এক তরুণ গুলিবিদ্ধ হয়ে দীর্ঘ সময় পশ্চিমাংশে পড়ে থাকেন ।পশ্চিমা মিডিয়ার সাংবাদিকদের উপস্থিতিতেই রক্তক্ষরণের কারণে ধীরে ধীরে তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন । সর্বশেষ মৃত্যুর ঘটনা ঘটে ১৯৮৯ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ।
[সম্পাদনা] পতন , ১৯৮৯
২৩ আগস্ট , ১৯৮৯ হাঙ্গেরি সরকার অস্ট্রিয়ার সাথে সীমান্তে কড়াকড়ি প্রত্যাহার করে । সেপ্টেম্বর মাসে প্রায় ১৩০০০ পূর্ব জার্মান পর্যটক পশ্চিম জার্মানি যাবার জন্য হাঙ্গেরি হয়ে অস্ট্রিয়ায় প্রবেশ করে ।
অক্টোবর মাসে পূর্ব জার্মানিতে বিক্ষোভ শুরু হয় । ১৮ অক্টোবর দীর্ঘদিন পূর্ব জার্মানি শাসনকারী এরিক হোনেকার পদত্যাগ করেন । তার স্থলাভিষিক্ত হন এগোন ক্রেনজ । এর আগে ১৯৮৯ সালের জানুয়ারি মাসে হোনেকার আরও এক শতাব্দী প্রাচীর টিকে থাকার ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন ।
সেপ্টেম্বর মাসে শুরু হওয়া বিক্ষোভের প্রথমদিকে স্লোগান ছিল আমরা বাইরে(পশ্চিম জার্মানি) যেতে চাই(Wir wollen raus!) । এটির বদলে নতুন স্লোগান শুরু হয় আমরা এখানেই থাকবো(Wir bleiben hier) , যেটি জার্মান ঐক্যের পক্ষে আন্দোলনের ইংগিত দেয় ।নভেম্বরের ৪ তারিখ পূর্ব বার্লিনের Alexanderplatz এ ১০ লাখ বিক্ষোভকারী সমবেত হয় ।
ক্রেনজ সরকারের সহনশীল নীতি এবং কমিউনিস্ট চেকোস্লাভ সরকারের সাথে চুক্তি অনুযায়ী পূর্ব জার্মান শরনার্থীরা চেকোস্লাভাকিয়া হয়ে পশ্চিম জার্মানি যাওয়ার সুযোগ পায় । ক্রমবর্ধমান শরনার্থীর চাপ থেকাতে ৯ নভেম্বর , ১৯৮৯ ক্রেনজের নেতৃত্বে পার্টি পলিটব্যুরো সিদ্ধান্ত নেয় পূর্ব এবং পশ্চিম জার্মানীর মধ্যে সীমান্ত চৌকি দিয়ে সরাসরি শরনার্থীদের যাবার অনুমতি প্রদান করা হবে ।পূর্ব জার্মান সীমান্ত রক্ষীদেরকে সিদ্ধান্তটি জানানোর জন্য ১ দিন সময় নিয়ে ১০ নভেম্বর থেকে এটি কার্যকর করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় । পূর্ব জার্মান প্রচারমন্ত্রী গুন্টার সাবোয়স্কিকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণাটি দেয়ার দায়িত্ব দেয়া হয় ।৯ নভেম্বরের পূর্বে সাবোয়স্কি ছুটিতে থাকায় , এ সিদ্ধান্ত সম্পর্কে তিনি অবগত ছিলেন না । একই দিনে একটি সংবাদ সম্মেলনের পূর্বে তাকে ঘোষণাপত্রটি ধরিয়ে দেয়া হয় , কিন্তু কবে থেকে এটি কার্যকর করা হবে , সে বিষয়ে কোন দিকনির্দেশনা ছিল না । সাংবাদিক সম্মেলনে ঘোষণাটি দেয়ার পর এটি কবে কার্যকর হবে এ বিষয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান যতদূর জানি , এই মুহুর্ত থেকেই কার্যকর হবে ।
পূর্ব জার্মান টেলিভিশনে এ ঘোষণা শোনার সাথে সাথে হাজার হাজার পূর্ব বার্লিন বাসী প্রাচীরের কাছে সমবেত হয়ে পশ্চিম বার্লিনে যেতে দেবার দাবী জানাতে থাকে । আগে থেকে কোন নির্দেশ না থাকায় সীমান্ত রক্ষীরা জনস্রোত দেখে হতোদ্যম হয়ে পড়ে ।উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে টেলিফোনে যোগাযোগ করে করণীয় জানতে চাইলে , শক্তি প্রয়োগের মত সিদ্ধান্ত দিতে সবাই অপারগতা প্রকাশ করে । এ অবস্থায় গণদাবীর মুখে সীমান্তরক্ষীরা দ্বার উন্মুক্ত করে দেয় । অপর পাশে হাজার হাজার পশ্চিম বার্লিনবাসী উৎসবমুখর পরিবেশে তাদের স্বাগত জানায় ।এভাবে ৯ নভেম্বর , ১৯৮৯ অনানুষ্ঠানিকভাবে প্রাচীরের পতন হয় ।
পূর্ব জার্মান সরকার ঘোষণা করে প্রাচীরে আরও নতুন দশটি চলাচলের পথ খুলে দেয়া হবে । ১৯৯০ সালের গ্রীষ্ম পর্যন্ত পুরনো বার্লিনের এসব পথ খুলে দেয়া হতে থাকে । বুলডোজার দিয়ে দেয়াল ধ্বংস করে নতুন প্রবেশদ্বার তৈরির এসব ভিডিও চিত্রকে অনেক দেশের মিডিয়ায় এখনও "প্রাচীর ধ্বংস" করা হিসেবে ভুলভাবে অভিহিত করা হয় ।১৯৮৯ সালের ২২ ডিসেম্বর খুলে দেয়া হয় বিখ্যাত "ব্রান্ডেনবুর্গ গেইট"।
সে বছর ২৩ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয় দুই বার্লিনের মধ্যে ভিসামুক্ত চলাচল। ৯ নভেম্বরের পর পূর্ব জার্মান কর্তৃপক্ষ দেয়ালের ক্ষতিগ্রস্থ অংশ মেরামতের উদ্যোগ নেয় । কিন্তু স্যুভেনির সংগ্রাহকদের উপর্যুপরি ক্ষতিসাধনে শেষ পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ হাত গুটিয়ে নেয়। ১৩ জুন,১৯৯০ থেকে পূর্ব জার্মান সামরিক ইউনিটগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে দেয়াল ভেঙ্গে ফেলতে শুরু করে এবং ১৯৯১ সালের নভেম্বর মাস পর্যন্ত এটা চলতে থাকে। ১ লা জুলাই , ১৯৯০ পূর্ব জার্মানিতে পশ্চিম জার্মানির মুদ্রা চালু হয় ।
বর্তমানে কয়েকটি জায়গায় প্রাচীরটির কিছু অংশটি স্মারক হিসেবে সংরক্ষিত আছে । বার্লিন প্রাচীরের পতন ৩ নভেম্বর,১৯৯০ এ জার্মান পুনঃএকত্রীকরণে মুখ্য ভূমিকা পালন করে ।
[সম্পাদনা] উৎসব
২৫ ডিসেম্বর , ১৯৮৯ লিওনিদ বার্নেস্টাইন বার্লিন দেয়ালের কাছে প্রাচীরের পতন উপলক্ষে কনসার্ট আয়োজন করেন । Beethoven's 9th symphony (Ode to Joy) এর কথায় পরিবর্তন এনে "Joy" (Freude) শব্দটির বদলে "Freedom" (Freiheit) শব্দটি ব্যবহার করে গাওয়া হয় ।
২১ জুলাই , ১৯৯০ বার্লিনে আরেকটি কনসার্টে রজার ওয়াটার্স পিংক ফ্লয়েডের অ্যালবাম দি ওয়াল পরিবেশন করেন ।স্করপিয়নস, ব্রায়ান অ্যাডামস, শন ও'কনোর , থমাস ডলবি , জনি মিশেল , মারিয়ান ফেইথফুল , ফন মরিসন এই কনসার্ট অংশগ্রহন করেন ।বার্লিন প্রাচীরের উপরে দাঁড়িয়ে ডেভিড হ্যাসেলহফের "Looking for Freedom" গানটি সেসময় জার্মানিতে বিপুল জনপ্রিয়তা পায়।
[সম্পাদনা] পরবর্তী প্রভাব
প্রাচীরটির সামান্য অংশই বর্তমানে অবশিষ্ট আছে ।এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য তিনটির প্রথমটি Potsdamer Platz এর কাছে । এটির দৈর্ঘ্য ৮০ মিটার ।Oberbaumbrücke এর নিকট Spree River এর তীরবর্তী অংশটি ইস্ট সাইড গ্যালারি নামে ডাকা হয়। তৃতীয় অংশটি আছে উত্তর দিকে Bernauer Straße এর কাছে ।১৯৯৯ সালে এটিকে বার্লিন প্রাচীরের স্মারক হিসেবে সংরক্ষণ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় । এদের মধ্যে কোনটিই মূল বার্লিন প্রাচীরের অবিকৃত অংশ নয় । স্যুভেনির সংগ্রাহকরা প্রত্যেকটি অংশে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করেছে । দেয়ালের পূর্বাংশে বর্তমানে দেয়াল চিত্র আঁকা আছে ।প্রাচীরের পতনের পূর্বে কেবল পশ্চিমাংশে দেয়ালচিত্র ছিল পূর্ব জার্মান প্রহরীদের প্রহরায় থাকা পূর্বাংশ কোন দেয়ালচিত্র ছিল না ।
[সম্পাদনা] জাদুঘর
প্রাচীর পতনের ১৫ বছর পর চেকপয়েন্ট চার্লির কাছে একটি বেসরকারী উদ্যোগে স্মৃতিসৌধ গড়ে তোলা হয় । প্রাচীর অতিক্রম করতে গিয়ে মৃতদের স্মরণে ১০০০ এর বেশি ক্রুশ এবং দেয়ালের অংশবিশেষ দিয়ে গড়া অপর একটি স্মৃতিসৌধ স্থাপন করা হয় ২০০৪ সালের অক্টোবর মাসে । ২০০৫ সালের জুলাই মাসে এটি বন্ধ করে দেয়া হয় ।
[সম্পাদনা] সাংস্কৃতিক বিভেদ
প্রাচীর পতনের পর দেড়যুগ পেরিয়ে গেলেও বার্লিনের দু'অংশের লোকজনের মনস্তাত্ত্বিক পার্থক্য এখনও ধরা পড়ে । জার্মান ভাষায় একে যথাক্রমে Ossis এবং Wessis শব্দ দিয়ে প্রকাশ করা হয় । আরও বলা হয়ে থাকে , মানসিক প্রাচীর এখনও রয়ে গেছে "Mauer im Kopf" ("The wall in the head"). ২০০৪ সালের সেপ্টম্বর মাসে এক জরিপে দেখা যায় শতকরা ২৫ ভাগ পশ্চিম বার্লিনবাসী এবং ১২ ভাগ পূর্ব জার্মানবাসী প্রাচীরের অস্তিত্ব কামনা করেন । এ সংখ্যাটি সত্যি আশংকাজনক।
[সম্পাদনা] তথ্যসূত্র
- ↑ [1]
- ↑ ২.০ ২.১ http://www.goethe.de/ges/ztg/thm/ddg/en1748571.htm
- ↑ E German 'licence to kill' found. BBC (2007-08-12). Retrieved on 2007-08-12. “সদ্য প্রকাশিত দলিলে দেখা যায় কমিউনিস্ট সরকার পক্ষত্যাগকারীদের গুলি করার নির্দেশ দিয়ে রেখেছিল”
- ↑ [2]
- ↑ Hope Millard Harrison, Driving the Soviets Up the Wall: Soviet-East German Relations, 1953–1961, footnote p. 240. Princeton University Press, 2003
- ↑ http://www.dailysoft.com/berlinwall/history/facts.htm
- ↑ http://www.wall-berlin.org/gb/mur.htm
- ↑ http://www.dailysoft.com/berlinwall/history/facts_02.htm
- ↑ http://www.die-berliner-mauer.de/en/fakten.html
- ↑ http://www.wall-berlin.org/gb/mur.htm
[সম্পাদনা] বহিঃসংযোগ
- বার্লিন প্রাচীর এবং পূর্ব বার্লিন সংক্রান্ত তথ্য (জার্মান ভাষায়)
- ফিরে দেখা বার্লিন প্রাচীর
- Bernauer Straße মেমোরিয়াল ওয়েবসাইট
- পূর্ব জার্মান সীমান্ত সিস্টেম (জার্মান ভাষায়)
- বার্লিনে মিত্রপক্ষের সেনাদল (বার্লিন ব্রিগেড)
- প্রাচীরের পতন থেকে শুরু করে বর্তমান পরিবর্তিত অবস্থার ছবি
- Reports on reinforcements to Berlin Brigade
- JFK speech clarifying limits of American protection
- "Berlin 1969" includes sections on Helmstedt-Berlin rail operations.
- Includes articles on rail transport for Berlin during the Cold War. (large files)
- Berlin 1983: Berlin and the Wall in the early 1980s
- Berlin Life: A concise but thorough history of the wall
- Berlin Wall: Past and Present
- The Lives of Others official website
- Important Berlin Wall Dates