রোসা লুক্সেমবুর্গ
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
রোসা লুক্সেমবুর্গ (জন্ম মার্চ ৫, ১৮৭০/৭১, মৃত্যু জানুয়ারী ১৫, ১৯১৯) ছিলেন জন্মসূত্রে পোলিশ মার্কসবাদী তাত্তিক, সমাজ দার্শনিক ও বিপ্লবী । তিনি পোল্যান্ড সোশাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির তাত্তিক ছিলেন । পরে তিনি জার্মান সোশাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (এসপিডি)সাথে জড়িয়ে পড়েন । ১৯১৮ সালের নভেম্বরে তিনি ডি রোটে ফাহরে (বাংলা: লাল পতাকা) পত্রিকা চালু করেন । এসপিডি প্রথম বিশ্বযুদ্ধে সমর্থন দেবার পর তিনি কার্ল লিবটকেনেখট-এর সাথে স্পার্টাসিস্ট লীগ (জার্মান : স্পার্টাকুসবুন্ড ) নামক এক বিপ্লবী দল গঠন করেন যেটা পরে কমিউনিস্ট পার্টি অফ জার্মানী নামে পরিচিতি লাভ করে । লুক্সেমবার্গ ১৯১৯ সালের জানুয়ারী মাসে এক ব্যর্থ অভ্যুথানের নেতৃত্ব দেন । অভ্যুথান ব্যর্থ হবার পর রোজা লুক্সেমবুর্গ, কার্ল লিবটকেনেখট সহ হাজার হাজার বিপ্লবী ধরা পড়েন ও তাদের হাতে নির্যাতিত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন ।
[সম্পাদনা] সংক্ষিপ্ত জীবনী
রোসা লুক্সেমবুর্গ ১৮৭০/৭১ সালে রাশিয়া নিয়ন্ত্রিত পোল্যান্ডের সামোসক নামক স্থানে এক ইহুদী পরিবারে জন্মগ্রহন করেন । জন্মের পর তার নাম রাখা হয়েছিলো রোজালিয়া লুক্সেবুর্গ । রোসা লুক্সেমবুর্গ ঠিক কত সালে জন্মেছিলেন তা নিয়ে একটা বিভ্রান্তি রয়েছে । পুরনো নথীপত্র থেকে এর পেছনে যে কারনটা পাওয়া যায় সেটা হলো তিনি তার স্কুলের সার্টিফিকেট ও জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ফর্মে দু'টি ভিন্ন তারিখ লিখেছিলেন । এই মহিয়সী নারী শারীরিক প্রতিবন্ধী হিসেবে জন্মালেও সেটা তার জীবনে কোন প্রতিবন্ধক হিসেবে দাড়াতে পারেনি ।
রোসা লুক্সেমবুর্গের পরিবার তার ৯/১০ বছর বয়সে ওয়ারশ'তে স্থায়ী হন । সেখানেই মাত্র ১৫-১৬ বছর বয়সেই তিনি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন । নিষিদ্ধ ঘোষিত বামপন্থি দল প্রোলেতারিয়েতে যোগ দেন তিনি ।এরপর বছর দুই পর গ্রেফতার এড়াতে তিনি সুইজারল্যান্ড পাড়ি জমান । সেখানে রোজা জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন ।
[সম্পাদনা] রাজনৈতিক জীবন ও দর্শন
দর্শনগত দিক থেকে রোজা বৈপ্লবিক মার্ক্সবাদী চিন্তাধারায় বিশ্বাসী ছিলেন । প্রথম জীবনে তিনি এসপিডির রাজনৈতিক চিন্তাধারায় বিশ্বাসী থাকলেও ১৮৯০ সালে বিসমার্ক যখন রাজনৈতিক কর্মকান্ডের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন তখন থেকে এসপিডি আস্তে আস্তে ক্ষমতাকেন্দ্রীক রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ায় আলাদা রাজনৈতিক প্লাটফর্মের কথা চিন্তা করতে থাকেন তিনি । এরই মধ্যে ১৮৯৮ সালে রোজা জার্মান নাগরিকত্ব পান গুস্তাভ লোয়েবেক নামের একজনকে বিয়ে করে । এর পরপরই মধ্যে রাজনৈতিক কর্মপন্থা নিয়ে এসপিডির উচ্চপর্যায়ের সাথে সরাসরি বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন । বিতর্ক বিরোধীতায় রূপ নেয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবার পর । যুদ্ধের অর্থসংস্থানে এসপিডি ক্ষমতাসীনদের সমর্থন দিলে রোজা ও তার সঙ্গীরা দলত্যাগ করেন । বিরুদ্ধ আচরনের দায়ে এরপর তাকে আড়াই বছরের কারাবাস দেয়া হয় । জেলে বসেই তিনি কলম চালাতে থাকেন যুদ্ধরত সরকারের বিপক্ষে । এসময়ই তিনি কিভাবে একটি বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র একনায়কতন্ত্র হয়ে বসে সেটার একটা তাত্তিক কাঠামো দাড় করান । যেটার বাস্তব রূপ পরে হিটলারের উথথানের মধ্য দিয়ে আমরা দেখতে পাওয়া যায় ।
রোসার জেল মেয়াদ শেষ হবার সময় জার্মানীর উত্তরের শহর কিল - এ এক গণআন্দোলন দানা বেধে ওঠে । ৪ নভেম্বর ১৯১৮ তারিখে জার্মানীর উত্তরানচল ৪০হাজার সৈন্য ও আন্দোলনরত জনতারা দখল করে ফেলে । এরকম একটা উত্তাল সময়ে ৮ নভেম্বর জেল থেকে ছাড়া পান রোজা । বের হয়েই আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়েন তিনি । সমমনা সকল বামপন্থী দলগুলো নিয়ে গঠন করেন কমিউনিস্ট পার্টি অব জার্মানী । অধিকৃত অনচলে ততকালীন সোভিয়েত আদলে রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তুলতে কাজ শুরু করেন তারা । এদিকে সরকার বিদ্রোহীদের দমন করতে কঠোর ব্যবস্থা নেয় । ফ্রাইকর্প নামে পরিচিত কট্টর জাতীয়তাবাদী মিলিশিয়াদের লেলিয়ে দেয় তারা । তাদেরই হাতে ১৫ জানুয়ারী ১৯১৯ সালে সপরিবারে রোজা লুক্সেমবার্গ নিহত হন । তার মৃতদেহ পরে নদীতে ফেলে দেয়া হয় ।
[সম্পাদনা] বর্তমান রাজনীতিতে প্রভাব
বিপ্লব ব্যর্থ হলেও জার্মানী তথা সারা বিশ্বের বাম রাজনীতিতে রোসা লুক্সেমবার্গ একটি স্মরনীয় নাম । জার্মানীর বার্লিন শহরে তার একাধিক স্মৃতিসোধ ও রাজপথের নামকরন করা হয়েছে । এছাড়াও শহরের প্রানকেন্দ্রে একটি উ-বান (পাতাল রেল) স্টেশন তার নামে নামকরণ করা হয়েছে ।