Web - Amazon

We provide Linux to the World

ON AMAZON:


We support WINRAR [What is this] - [Download .exe file(s) for Windows]

CLASSICISTRANIERI HOME PAGE - YOUTUBE CHANNEL
SITEMAP
Audiobooks by Valerio Di Stefano: Single Download - Complete Download [TAR] [WIM] [ZIP] [RAR] - Alphabetical Download  [TAR] [WIM] [ZIP] [RAR] - Download Instructions

Make a donation: IBAN: IT36M0708677020000000008016 - BIC/SWIFT:  ICRAITRRU60 - VALERIO DI STEFANO or
Privacy Policy Cookie Policy Terms and Conditions
এইচএমএস বিগ্‌লের দ্বিতীয় সমুদ্রযাত্রা - উইকিপিডিয়া

এইচএমএস বিগ্‌লের দ্বিতীয় সমুদ্রযাত্রা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

এইচএমএস বিগ্‌লের দ্বিতীয় সমুদ্রযাত্রা পরিচালিত হয় ইংরেজ ক্যাপ্টেন রবার্ট ফিট্‌জ্‌রয় এর নেতৃত্বে। ১৮৩১ সালের ২৭শে ডিসেম্বর ইংল্যান্ডের ডেভেনপোর্ট থেকে যাত্রা শুরু করে ১৮৩৬ সালের ২রা অক্টোবর ফালমাউথ বন্দরে ফিরে আসে এইচএমএস বিগ্‌ল। এটিই দ্বিতীয় সমুদ্রযাত্রা। প্রথম সমুদ্রযাত্রারও নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ফিট্‌জ্‌রয়। দ্বিতীয় যাত্রায় নিসর্গী তথা প্রকৃতিবিদ হিসেবে অংশ নিয়েছিলেন তরুণ চার্লস ডারউইন। এই যাত্রায়ই তিনি বিবর্তনবাদের ভিত রচনা করেন। যাত্রার বর্ণনা এবং অববজজঞতা নিয়ে একটি বই লিখেন ডারউইন যার নাম দ্য ভয়েজ অফ দ্য বিগ্‌ল[১]

সূচিপত্র

[সম্পাদনা] যাত্রার প্রস্তুতি ও ডারউইনের অন্তর্ভুক্তি

ডারউইন ১৮২৮ সাল থেকে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করছিলেন। এই শিক্ষায়তনেই তার সাথে ভূতাত্ত্বিক অ্যাডাম সেজউইক এবং উদ্ভিদবিজ্ঞানী স্টিভেন হেন্‌স্লোর সক্ষ্যতা গড়ে উঠে। হেন্‌স্লোর সুবাদেই তিনি পাকাপোক্ত উদ্ভিদবিজ্ঞানী হয়ে উঠেন এবং তার মাধ্যমেই প্রথম বিগ্‌ল জাহাজের যাত্রা সম্বন্ধে জানতে পারেন। ১৮৩১ সালে তিনি কেমব্রিজ থেকে পাশ করে গীর্জায় চাকরি করার পরিবর্তে ভূতত্ত্ব বিষয়ক কাজ শুরু করেছিলেন। এ সময় অধ্যাপক সেজউইকের সাথে উত্তর ওয়েল্‌সে এক নীরিক্ষা সফরে যান। ২৪শে আগস্ট বাড়ি ফিরে এসে হেন্‌স্লোর চিঠি পান। জানতে পারেন, রাজকীয় নৌবাহিনীর জাহাজ তিন বছরের জন্য উত্তর আমেরিকার উপকূল জরিপে যাচ্ছে এবং হেন্‌স্লো সে জাহাজের নিসর্গী হিসেবে তার নাম সুপারিশ করেছেন। তিনি অত্যন্ত আনন্দের সাথে রাজি হয় যান, কিন্তু তার বাবা প্রথমে বেঁকে বসেন। মূলত জাহাজের নিরাপত্তা নিয়ে তিনি শংকিত ছিলেন, যে জাহাজে ডারউনের মত একজন নবিশের স্থান হয়ে যায় তার নিরাপত্তা নিয়ে শংকার যুক্তিযুক্ত কারণও অবশ্য ছিল। অগত্যা ডারউইন তার মামা জোসায়া ওয়েজউডের শরণাপন্ন হন। মামার মধ্যস্থতায় তার বাবা অবশেষে রাজি হন। ডারউইন প্রস্তুতি নেয়া শুরু করেন।

এদিকে নৌবাহিনীর জাহাজ বিগ্‌ল যাত্রার জন্য প্রস্তুত হতে থাকে। জাহাজের ক্যাপ্টেন রবার্ট ফিট্‌জ্‌রয় লন্ডনে যাত্রার প্রস্তুতি নিতে থাকেন। ডারউইন ক্যাপ্টেনের সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য লন্ডনে যান। ফিট্‌জ্‌রয় বয়সে তার চেয়ে মাত্র চার বছরের বড়, অত্যন্ত কর্মদক্ষ কিন্তু অসহিষ্ণু ও বদমেজাজি। অপরদিকে ডারউইন নম্র, ভদ্র এবং খুব একটা স্মার্ট নন। নিসর্গী হিসেবে তাই অনেকটাই আনাড়ি তিনি। তবে এক বিষয়ে দুজনায় মিল হয়ে যায়, দুজনেই বেশ ধার্মিক এবং বাইবেলে বর্ণীত সৃষ্টিতত্ত্বে বিশ্বাসী। ফিট্‌জ্‌রয়কে দেখেই ডারউইন মুগ্ধ হন, কিন্তু ডারউইনকে খুব একটা সুবিধার মনে হয় না ফিট্‌জ্‌রয়ের। সন্দেহ থাকলেও অবশেষে ডারউইনকে মনোনীত করেন ক্যাপ্টেন। জাহাজের প্রস্তুতি প্রায় শেষ হয়ে যায়। এটি ছিল ১০-কামানের একটি ২৪২ টন ভারবহনে সক্ষম জাহাজ। লম্বায় ৯০ ফুট এবং পুরোটাই শক্ত মেহগনি কাঠের তৈরী। সর্বমোট ৭৪ জন লোক ধরে তাতে। ডারউইন এবং ক্যাপ্টেন ছাড়া অন্যান্য যাত্রীরা হলেন: ১২ অফিসার, ১ চিত্রশিল্পী, ২ চিকিৎসক, ৩৪ খালাসি, কিছু নৌসেনা ও অন্যান্য কর্মী, তিনজন ফুয়িজীয় অধিবাসী এবং একজন পাদ্রী- সব মিলিয়ে ৭২ জন। জেমি বাটন, ইয়র্কমিনিস্টার এবং ফুজিয়া বাসকেট- এই তিনজন ফুয়িজীয়কে এর আগের সফরে ফিট্‌জ্‌রয় দক্ষিণ আমেরিকার দক্ষিণ বিন্দু থেকে নিয়ে এসেছিলেন। এখন ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, এর মধ্যে তাদেরকে লেখাপড়া শিখিয়েছেন এবং খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত করেছেন। পাদ্রি রিচার্ড ম্যাথু যাচ্ছিলেন দক্ষিণ আমেরিকার অধিবাসীদের মধ্যে ধর্ম প্রচার করতে। এছাড়াও এ জাহাজের উদ্দেশ্যের মধ্যে ছিল: দক্ষিণ আমেরিকার অজানা অঞ্চলগুলোর সঠিক দ্রাঘিমা নির্ণয়, বন্দর নির্মাণের জন্য উপযুক্ত স্থান নির্বাচন, ব্যাপক জরিপ পরিচালনা এবং অদ্যাবধি অজ্ঞাত জলভাগ ও উপকূলের মানচিত্র তৈরী। ডারউইন এ জাহাজের অবৈতনিক নিসর্গী ছিলেন। স্থলভাগে তার ব্যায়ভার বহনের দায়িত্ব নিয়েছিলেন তার বাবা। ডারউইন তার সঙ্গে নিয়েছিলেন একটি দুরবিন, একটি অণুবীক্ষণ যন্ত্র, বিবর্ধক কাঁচ, সংগৃহীত জৈব নমুনা সংরক্ষণের জন্য স্পিরিট, অনেকগুলো বোতল, তীরে আত্মরক্ষার জন্য কয়েকটি পিস্তল, শিকারের জন্য বন্দুক ও রাইফেল, বইয়ের মধ্যে জন মিল্টনের প্যারাডাইজ লস্ট, হামবোল্ডের পার্সোনাল ন্যারেটিভ ও লায়েলের, প্রিন্সিপ্‌ল্‌স অফ জিওলজি, ১ম খণ্ড। ভূবিদ্যার এই বইটি যাত্রা শুরুর ঠিক আগে হেন্‌স্লো তাকে জোগাড় করে দেন। এ বই পড়ে এবং মাঠ পর্যায়ে ব্যাপক অনুসন্ধান চালিয়ে যাত্রার মধ্যেই ডারউইন পাকা ভূবিজ্ঞানী হয়ে উঠেন।

নম্বরগুলো দ্বারা বিভিন্ন স্থান বোঝানো হয়েছে। স্থানগুলো হচ্ছে: ১ প্লাইমাউথ - ২ টেনেরিফ - ৩ কেপ ভার্দে - ৪ বাইয়া - ৫ রিউ দি জানেইরু - ৬ মোন্তেবিদেও - ৭ ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জ - ৮ ভালাপারাইজো - ৯ কলাও/লিমা - ১০ গালাপাগোস - ১১ তাহিতি - ১২ নিউজিল্যান্ড - ১৩ সিডনি - ১৪ হোবার্ট - ১৫ কিং জর্জস্‌ সাউন্ড - ১৬ কোকোস দ্বীপপুঞ্জ - ১৭ মরিশাস - ১৮ কেপ টাউন - ১৯ বাইয়া - ২০ আজোরেস
নম্বরগুলো দ্বারা বিভিন্ন স্থান বোঝানো হয়েছে। স্থানগুলো হচ্ছে: ১ প্লাইমাউথ - ২ টেনেরিফ - ৩ কেপ ভার্দে - ৪ বাইয়া - ৫ রিউ দি জানেইরু - ৬ মোন্তেবিদেও - ৭ ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জ - ৮ ভালাপারাইজো - ৯ কলাও/লিমা - ১০ গালাপাগোস - ১১ তাহিতি - ১২ নিউজিল্যান্ড - ১৩ সিডনি - ১৪ হোবার্ট - ১৫ কিং জর্জস্‌ সাউন্ড - ১৬ কোকোস দ্বীপপুঞ্জ - ১৭ মরিশাস - ১৮ কেপ টাউন - ১৯ বাইয়া - ২০ আজোরেস

[সম্পাদনা] ব্রাজিলের পথে যাত্রারম্ভ

১৮৩১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বিগ্‌ল ইংল্যান্ডের প্লাইমাউথ বন্দর থেকে যাত্রা শুরু করে। কিন্তু কিছুদূর গিয়েই ঝড়ের সম্মুখীন হয়, অগত্য ফিরে আসতে হয় বন্দরে। ২১শে ডিসেম্বর আবারও যাত্রা করে, এবারও শীতের মৌসুমী ঝড় ফিরিয়ে দেয় তাকে। অবশেষে ২৭শে ডিসেম্বর ডেভেনপোর্ট থেকে যাত্রা শুরু করে সে, এবার আর বাঁধা পেতে হয়নি। দীর্ঘ পাঁচ বছরের যাত্রার শুরু হয় এ সময় থেকেই। যাত্রার শুরুতেই ডারউন সমুদ্রপীড়ার শিকার হন। পরবর্তী বন্দর থেকে তাকে দেশে ফেরত পাঠানো হতে পারে, এই ভয়ে অসুস্থতা লুকিয়ে রাখেন। এ অবস্থা সম্বন্ধে বোনকে চিঠিতে লিখেছিলেন, "সমুদ্রপীড়ার যন্ত্রণা কল্পনাতীত ছিল... চরম ক্লান্তিতে জ্ঞান হারানোর এক অসহ্য অনুভূতি... শুধুই হ্যামকে শুয়ে থাকি, কিন্তু কোনই লাভ হয়না।" এরই মধ্যে ১৮৩২ সালের প্রথম দিন তথা ইংরেজি নববর্ষ উদ্‌যাপিত হয়, খুবই সামান্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে। ৬ই জানুয়ারি বিগ্‌ল টেনেরিফ দ্বীপে পৌঁছায়। সবাই নামতে চাইলেও লন্ডনে কলেরার মহামারি থাকায় দুই সপ্তাহের মধ্যে কাউকে নামতে নিষেধ করা হয়। অগত্যা জাহাজ আবার নোঙর তুলে। সকালে সূর্য উঠার পর ক্যানারি দ্বীপের পর্বতমালায় যে আলোর খেলা চলেছিল, তা দেখে ডারউইন নিরক্ষীয় প্রকৃতির প্রথম পরিচয় পান। এই সৌন্দর্য্যের চমক তিনি কখনই ভুলতে পারেননি।

১৫ই জানুয়ারি বিগ্‌ল কেপ ভের্দি দ্বীপপুঞ্জের প্রায় বন্দরে ভীড়ে এবং ২৩ দিন এখানেই অবস্থান করে। ক্যাপ্টেন এই দ্বীপপুঞ্জের দ্রাঘিমা নির্ণয়ে ব্যস্ত থাকেন, আর ডারউইন ঘুরে বেড়াতে থাকেন দ্বীপের আনাচে কানাচে। সেখানকার গাছপালা ও প্রাণী পর্যবেক্ষণ করেন। সেখানের প্রাণী প্রজাতিগুলো ইংল্যান্ডের মত রঙচঙা ছিলনা। ধূলিপাতের কারণে দ্বীপে সবসময় একটা ধোঁয়াটে ভাব লেগে থাকত। প্রায়া বন্দরে পৌঁছার আগের দিন ডারউইন জাহাজের ডেক থেকে বাদামি রঙের বালুর নমুনা তুলে রেখেছিলেন যাতে পাথরকণা, জীবাণু এবং বীজকণার সন্ধান পান। এগুলো আফ্রিকা, আমেরিকা বা অন্য কোথা থেকে আসে তা ভেবে বিস্মিত হচ্ছিলেন তখন। তার বিস্ময়ের মূলে ছিল দেশ থেকে দেশান্তরে প্রাণের বিসরণ। দ্বীপের ভূতত্ত্বেও তিনি আকৃষ্ট হন। এ সম্বন্ধে জানার জন্য খুলে বসেন লায়েলের বইটি, অবশ্য প্রথম দেখা এই আগ্নেয় দ্বীপের ভূতত্ত্বের কোন হদিস সে বইয়ে পাননি। কিন্তু সে মুহূর্ত তার জন্য স্মরণীয় ছিল, কারণ আগ্নেয় দ্বীপের ভূতত্ত্ব নিয়ে ভাবার সাথে সাথে তিনি বিচিত্র সব জীবের সান্নিধ্য লাভ করছিলেন। এখান থেকেই তিনি প্রাণী সংগ্রহ শুরু করেন। এই দ্বীপ থেকে যেসব প্রাণী তার স্পিরিটের বোতলে স্থান পায় তার মধ্যে ছিল খোলহীন শামুক (শ্লাগ), অক্টোপাস ও ক্যাট্‌ল মাছ।

কেপ ভের্দ ছেড়ে ব্রাজিলের পথে যাত্রা করে বিগ্‌ল, ১৬ই ফেব্রুয়ারি সেন্ট পল্‌স নামক শিলাদ্বীপে পৌঁছে। দ্বীপের মূল আকর্ষণ ছিল অসংখ্য পাখি ও মাছ। নিরিহ বোকা পাখিরা শয়ে শয়ে খালাসিদের হাতে ধরা পড়লো আর সামুদ্রিক মাছ দিয়ে ভুরি-ভোজন চলল বেশ কটি দিন। এখানকার পাথর পরীক্ষা করে ডারউইন এক বিশেষ ধরণের জীববস্তু পান যার ওপরটা পাখির বিষ্ঠা এবং নিচে ডালওয়ালা চুনে কাঠামো। দেখে মনে হয়, চুন ভরা এক জাতের শৈবাল। তিনি ভাবলেন, হয়তো কোন জাতের শিলাগঠনে সামুদ্রিক জীবের খোল, হাড় ও আগাছার ভূমিকা থাকে। দ্বীপে থাকত দুই জাতের সামুদ্রিক পাখি- ববি ও নডি। এদের জীবনাচার দেখেই অস্তিত্বের সংগ্রামের বিষয়টি বোঝা যায়। তাদের প্রতিটি বাসার পাশে একটি করে উড়ুক্কু মাছ, মা পাখিরা বাসা ছেড়ে গেলেই পাশ থেকে কাঁকড়া এসে মাছ খেয়ে ফেলে। এখান থেকে ডারউইন সংগ্রহ করলেন: ববির ওপর পরজীবী এক জাতের মাছি, তদনুরূপ একটি এটেল, পাখির পালকভুক মথ, বিটল তথা বর্মপোকা, কাঠখোর উকুন এবং দুই জাতের মাকড়সা। সে দ্বীপে কোন উদ্ভিদ ছিলনা, ডারউইন বলেন, "সামুদ্রিক দ্বীপের প্রথম বাসিন্দা হওয়ার দাবি তো কেবল পালকখোর বিষ্ঠাভুক কীটপতঙ্গ ও মাকড়সারই।" দ্বীপ ছেড়ে ব্রাজিলের পথে যাত্রা করলো বিগ্‌ল। ৪ ফিট লম্বা টানাজাল বানিয়ে মাছ ধরা শুরু করলেন ডারউইন, অফিসারদের কাছে প্রাজ্ঞ দার্শনিক আর খালাসিদের কাছে পোকাশিকারি খেতাব পেলেন, সাথে পেলেন সবার সহযোগিতা ও ভালোবাসা। জাহাজের খাবার ছিল এরকম: সকাল আটটায় প্রাতঃরাশ, দুপুড়ের খাবার একটায় (ভাত, সবজি, মটরশুঁটি ও রুটি), বিকেল পাঁচটায় সান্ধ্যভোজ (মাংস, স্কার্ভিরোধী ভিটামিন সি যুক্ত আচার, আপেল এবং লেবুর রস)। ক্যাপ্টেন ফিট্‌সরয় অল্প বয়সেই বিশেষ খ্যাতি করেছিলেন। নাবিক হিসেবে অতি দক্ষ, খুব জেদি এবং মেজাজি। সকাল বেলা মেজাজ চড়ে থাকে, তারপর কয়েক ঘন্টা চুপচাপ মুখ গোমড়া করে থাকেন; যেন কোন বংশগত রোগ।

[সম্পাদনা] ব্রাজিলে

১৮৩২ সালের ২৯শে ফেব্রুয়ারি ব্রাজিলের সালভাদোর বন্দরে ভিড়ে বিগ্‌ল। অবশেষে নিরক্ষীয় অরণ্যের দ্বীপে পৌঁছান ডারউইন, তার স্বপ্ন বাস্তবায়ন শুরু এখান থেকেই। ১৮ই মার্চ বাহিবা ছেড়ে ব্রাজিলের রাজধানীর উদ্দেশ্যে যাত্রা করে বিগ্‌ল। এই যাত্রাপথেই প্রথমবারের মত সমুদ্র থেকে ট্রাইকোডেসমিয়াম এরিথ্রিয়াম (বিখ্যাত সামুদ্রিক শৈবাল) তুলে এনে পরীক্ষা করেন, অনেকটা রঙিন চাপড়ার মত। পরে এগুলো আরও অনেক দেখেছেন যাদের মধ্যে আবার সূক্ষ্ণ জীবকণার সন্ধান পেয়েছেন। অসংখ্যা অণুজীবের সম্মিলনের এই রহস্য নিয়ে তিনি অনেক ভেবেছেন। ৪ঠা এপ্রিল ব্রাজিলের রাজধানী রিউ দি জানেইরু পৌঁছায় জাহাজ। এই শহরে তিন আস থাকতে হবে। বিগ্‌লের লোকজন ব্যস্ত থাকবে জরিপ কাজে, ডারউইন করবেন তার কাজ। বাড়ি ভাড়া করার ব্যাপারে মনস্থির করলেন। ৮ই এপ্রিল তার সাথে আয়ারল্যান্ডীয় খামার মালিক "প্যাট্রিক লেননের" দেখা হয়। তার বাড়িতেই থাকবেন বলে স্থির করেন। ৭ জনের একটি দল তিনদিন যাত্রা করার পর লেননের বাসস্থানে পৌঁছায়। সাথে বেশ কয়েকটি ঘোড়া ছিল। তিনদিনের যাত্রাপথে পড়েছে গভীর বন, বিস্তীর্ণ প্রান্তর, বালুভরা মাঠ, কৃষ্ণাঙ্গদের বাসস্থান, সমুদ্র ও লেগুনের মাঝে দুর্গম পথ, অসংখ্য ঝিল আর বিস্তীর্ণ বাথান। ঝিলগুলোর কোনটা মিঠাপানির আবার কোনটা ছিল লবণাক্ত। ডারউইন উভয় ধরণের ঝিলেই জীবকূলের বিস্তার লক্ষ্য করেন। ভাবেন লবণাক্ততার সাথে কিভাবে খাপ খাওয়ায় তারা, মিঠাপানির জীব ও লবণাক্ত পানির জীব কি একসাথে বাস করতে পারে? পথে এক ধরণের রক্তচোষা চামচিকা (Desinodes d, orbignyi) সংগ্রহ করে বোতলে ভরে রাখেন।

লেননে বাড়ি যে জায়াগায় সেটি বেশ অদ্ভুত ঠেকে ডারউইনের কাছে। অতিথি এলে ঘন্টা বাজিয়ে, কামান দাগিয়ে অভ্যর্থনা জানানো হয় সেথায়, ভোজনের আয়োজন খুব বেশী: আস্ত আস্ত টার্কি ও গোটা একটা শূকরের রোস্ট, সাথে কাসাভার ময়দা দিয়ে তৈরী রুটি। এখানে বেশ কিছুদিন থাকেন তিনি। বিভিন্ন রকমের গাছ দেখেন: শিমুল, পাম, ফার্ন আর বাবলা। সবচেয়ে চমকপ্রদ লেগেছিল ক্যাবেজ পাম। জীবজন্তু সংগ্রহের জন্য সেখানে লোক রাখেন, নিজেও শিকার করেন কিছু। এখানেই তার প্রকৃতি প্রেমের পরিচয় পাওয়া যায়,

বনের বর্ণনা সম্ভব, তবে বিস্ময়, চমক আর ভালোলাগার অনুভব বর্ণনাতীত।.... আমি নীরবে এই ঐকতান (ঝিঁঝি, ঘুর্ঘুরেপোকা ও ব্যঙের) শুনি যদি-না কোনো পতঙ্গ আমার নিবিড় মনোযোগ ভাঙে।

এখানে একদিন কুমরেপোকা ও মাকড়সার লড়াই দেখেন। প্রকৃতির নিয়ম ভেঙে মরণাপন্ন মাকড়সাটিকে বাঁচান। আরেকদিন দেখেন কালো পিঁপড়ার দল টিকটিকি, আরশোলা আর মাকড়সাকে আক্রমণ করছে। জীবজগতে বিদ্যমান অস্তিত্বের সংগ্রাম ধীরে ধীরে বুঝতে শুরু করেন তিনি। লক্ষ্য করেন, দুর্বলের টিকে থাকার জন্য দরকার ছদ্মবেশের। কিছু পতঙ্গ দেখতে কাঠির মত- গাছের সাথে লেগে থাকলে মনে হয় মরা ডাল, পাখির চোখ এড়ানোর জন্য কোন কোন বর্মপোকার আকৃতি বিষাক্ত ফলের মতো, নিরীহ মথকে আবার দেখায় ভয়ঙ্কর কাঁকড়াবিছার মত। এসবই তো ছদ্মবেশ। জন্তুদের মধ্যে দুর্বলের উপর সবলের অত্যাচারের এই বিষয়টি মানুষের মধ্যেও লক্ষ্য করেন এখানে। ক্রীতদাসদের উপর মালিকের অত্যাচার ছিল অবর্ণনীয়। তার গৃহকর্তা প্যাট্রিক লেনন দরদী মালিক হওয়া সত্ত্বেও একবার এক ক্রীতদাস পরিবারের সবাইকে আলাদা আলাদা বিক্রির হুকুম দিয়েছিলেন। শেষে তা কার্যকর হয়নি, কিন্তু অন্যত্র এমনটি হরহামেশাই হয়।

রিউ দি জানেইরু ফিরে এসে ডারউইন নতুন বাসা নেন। তার সাথে থাকেন বিগ্‌লের চিত্রশিল্পী অগাস্টাস অ্যার্লে। অ্যার্লে বনের ছবি আঁকতেন। ডারউইনের কাজের সাথে তাই তার একটি সমন্বয় ঘটে। কোন কোন জৈব নমুনার ছবি আঁকার দায়িত্ব পালন করেন অ্যার্লে। তাদের সাথে সখ্যতা গড়ে উঠে এক পর্তুগীজ পাদ্রির। তিনজন একসাথে শিকারে যেতেন। পাদ্রি একবার দুটি দাড়িওয়ালা বানর শিকার করে। একটি বানর মরার পরও লেজ দিয়ে গাছের ডাল আঁকড়ে ঝুলে ছিল। অবশেষে গাছ কেটে তাকে নামাতে হয়। শিকার করেন সবুজ টিয়া ও টুকান। শিকারের পাশাপাশি কিছু পরীক্ষাও করেন, জানালার কাঁচের উপর ব্যাঙ হাটানো, বর্মপোকা কতোটা লাফাতে পারে তা দেখা ইত্যাদি। এসময় প্ল্যানেরিয়া নামের অদ্ভুত প্রাণীটি তার নজর কাড়ে। একে মাঝখান থেকে দুভাগ করলেও কিছুদিনের মধ্যে প্রতিটি খণ্ড আলাদা প্রাণী হয়ে উঠে। এদের কয়েকটি দুই মাস ধরে পোষেন। এক ধরণের প্রজাপতির সন্ধান পান যারা মাটির উপর দৌড়াতে পারে। স্থানীয় বোটানিক্যাল গার্ডেন পরিদর্শনে যান। সেখান থেকে পাহাড়ের উপর উঠে এক অদ্ভুত ছত্রাকের দেখা পান যার প্রতি আকৃষ্ট থাকে এক ধরণের বর্মপোকা। তখন তার মনে পড়ে, এ ধরণের ছত্রাক ইংল্যান্ডেও আছে। এতো দূরের দুটি প্রজাতিতে মিল দেখে ধাঁধার মধ্যে পড়েন। যে বাড়িতে ভাড়া থাকতেন তার আশেপাশে অনেক কুমরেপোকা। এগুলো আধমরা পোকামাকড় ধরে এনে সেগুলোর উপর ডিম পাড়ে, যেন ডিম ফুটে বেরুনো শূককীটরা তাজা মাংস খেয়ে জীবন ধারণ করতে পারে। সন্তানদের জন্য এভাবে খাবার সংগ্রহের উপায় কিভাবে শিখলো তারা? এ নিয়ে চিন্তায় পড়ে যান ডারউইন।

[সম্পাদনা] উরুগুয়ের পথে

৫ই জুলাই রিউ দি জানেইরু থেকে উরুগুয়ের রাজধানী মোন্তেবিদেওর উদ্দেশ্যে নোঙর তুলে বিগ্‌ল। এই যাত্রা পথে শৈত্য আবহাওয়া ডারউইন সমুদ্রপীড়ার শিকার হন। ২৬শে জুলাই মোন্তেবিদেওতে পৌঁছায় জাহাজ। প্রথম ক'দিন জাহাজেই কাটে ডারউইনের। মঝখানে একদিন উপকূলে ভূতাত্ত্বিক জরিপ চালাতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে শীতের প্রকোপে পড়েন। এরপর বন্দর থেকে কিছুদূরে মালাদানাদোয় বাড়ি ভাড়া নেন তিনি। তিনি বাড়িতে থেকেই পশাপাথি নিয়ে গবেষণায় মত্ত থাকেন আর বিগ্‌ল জরিপকাজে বিভিন্ন স্থান প্রদক্ষিণ করে বেড়ায়। ক্যাপ্টেন জাহাজের খালাসি সিম্‌স কভিংটনকে ডারউইনের সাথে থাকার জন্য নিযুক্ত করে। ছোকড়া হিসেবে কভিংটন বেয়াড়া হলেও দুজনের ভালই কেটে যায়। বিগ্‌ল অভিযান শেষেও কভিংটন কিছুকাল ডারউইনের সাথে থেকেছিল। এখানে থেকেই ডারউনের মন থেকে পাদ্রি হবার বাসনা অন্তর্হিত হয়, সে স্থান দখল করে নেয় প্রকৃতিবিজ্ঞান। ক্যারোলিনকে তখন লিখেছিলেন,

ভূতত্ত্বের তুলনা নেই। প্রথম পাখি শিকারের ফূর্তির তুলনায় একগুচ্ছ জীবাশ্ম পাওয়ার আনন্দ অনেক বেশি, তারা নীরবে তাদের কালের কথা শোনায়, কী রোমাঞ্চকর... নাগালে পাওয়া সব ধরণের জীবজন্তুই ধরছি।

এই স্থানে তিনি আড়াই মাস থেকেছিলেন। প্রথমে ৭০ মাইল উত্তরে পালান্‌কো নদীর পথে যাত্রা করেন। সাথে দু'জন সহকারী ও কয়েকটি ঘোড়া ছিল। প্রথম রাত এক স্পেনীয় খামারবাড়িতে কাটান। পরদিন ছোট শহর মিনাসে পৌঁছান। এই শহরের এক পানশালায় প্রথম গাউচ (স্পেনীয়-রেড ইন্ডিয়ান সংকর) দেখেন। তৃতীয় দিনে রাস্তায় দেখেন অসংখ্য উটপাখি। ডারউইনের মূল লক্ষ্যই ছিল এসব প্রাণী ও জীবকূলের দিকে। তাই রাস্তায় যা পড়ত তা-ই মনোযোগ দিয়ে লক্ষ্য করতেন। সে অঞ্চলের অতিথিকরণ প্রথাটি ছিল এরকম: কোন বাড়িতে গিয়ে "আভে মারিয়া" বলে ঘোড়ার বসে থাকতে হয়, কেউ না আসা পর্যন্ত। কেউ আসলে কুশল বিনিময় করতে হয়। প্রথমেই থাকার অনুমতি চাইতে হয় না। এক্ষেত্রে গৃহকর্তা অতিথির ব্যক্তিগত কিছু জিজ্ঞাস করে না, উত্তমাশা অন্তরীপে যা সহসাই করা হয়। গাউচরা সেখানে ঘোড়ায় চড়ে বোলাস ছুড়ে শিকার করতো। তাদের ধারণা, তারা মৃত রেড ইন্ডিয়ান, আকাশগঙ্গা এক প্রাচীন প্রান্তর যেখানে এক সময় তারা উটপাখি শিকার করতো, আর ম্যগেলান মেঘপুঞ্জ হল শিকার করা উটপাখির ছড়ানো পালক। আরও দু'তিন দিন পর গন্তব্যে পৌঁছান তারা, ফেরার সময় অন্য পথ অনুসরণ করেন। এই যাত্রায় তেমন কোন জীবজন্তু সংগহ করতে পারেন নি। দেখেছেন, দখলদারী স্পেনীয় অধীনে কিভাবে দিনাতিপাত করছে স্থানীয় রেড ইন্ডিয়ানরা।

মালদানাদোয় আড়াই মাসে সংগ্রহ করেন: বিভিন্ন জাতের চতুষ্পদ, ৮ রকমের পাখি, ৯ জাতের সাপ, অনেকগুলো ইঁদুর যার মধ্যে খাঁটি জাতের ৮টি। একদিন ১০০ পাউন্ড ওজনের একটি উদ্‌বিড়াল শিকার করেন। চলে যাওয়ার আগে এক লোক ডারউইনকে দুটি টুকোটুকো (Clenonomys brasiliemsis) ধরিয়ে দেয়। এই প্রাণী বেশ মজার, ছুঁচোর মত, খুব চালাক, নিশাচর, গর্তবাসী, শিকড়বাকড় খায়, বাস করে মাটির ঢিপি বানিয়ে। গর্তে থেকে সারাদিন টুকটুক করে বলেই এর নাম টুকোটুকো। এই মালদানাদো থেকে ডারউইন লন্ডনে পার্সেল করে ১৫২৯টি নমুনা পাঠান। সেখানকার নমুনাগুলো একে ছিল নিখুঁত, তার উপর স্থানীয় লোকদের একটি দল জুটে গিয়েছিল যারা এগুলো সংগ্রহ করে এনে দিত। এতোসব নমুনা নিয়ে হিমশিম খাচ্ছিলেন হেন্‌স্লো। তিনি চিঠিতে লিখেন, "হাঁ ঈশ্বর, ২৩৩নং জিনিসটা কি? মনে হচ্ছে কোন বৈজ্ঞানিক বিস্ফোরণের ধ্বংসাবশেষ, একতাড়া ঝুলকালি। নিশ্চয়ই আজব কিছু।"

সেখানে ডারউইন বিস্মিত হয়েছিলেন বিভিন্ন জাতের পাখি দেখে। বেশির ভাগ পাখিই ছিল স্টার্লিং গোষ্ঠীর। Molothrus niger নামের একটি প্রজাতির পাখিরা দল বেঁধে ঘোড়া বা গরুর পিঠে বসে, ঝোপ থেকে শিস দেয়, স্থানীয় চড়ুইয়ের (Zonotricha matuiana) বাসায় ডিম পাড়ে। ডারউইন অবাক হয়ে লক্ষ্য করেন উত্তর আমেরিকায় Molothrus pecoris নামক একটি প্রজাতির পাখির স্বভাবও এই রকম। এ নিয়ে বেশ খানিকটা ভেবেছিলেন, এতো দূরের দুটি দেশের পাখির স্বভাব এক হয় কিভাবে?

[সম্পাদনা] তথ্যসূত্র

  • ডারউইনঃ বিগ্‌ল্‌-যাত্রীর ভ্রমণকথা - দ্বিজেন শর্মা। প্রথম প্রকাশ: ডিসেম্বর ১৯৯৯, সাহিত্য প্রকাশ। এই বই থেকে তথ্য নিয়েই পুরো নিবন্ধটি লেখা হয়েছে। তাই তথ্য অনুযায়ী পৃথক তথ্যসূত্রের দরকার নেই। নিবন্ধের কোন তথ্যই বইয়ের বাইরে নেই। যদি থাকে তবে সে অংশটুকুর আলাদা তথ্যসূত্র পাদটিকা অংশে দেয়া হবে।

[সম্পাদনা] পাদটিকা

  1. Second voyage of HMS Beagle - ইংরেজি উইকিপিডিয়া। ভূমিকা অংশ

[সম্পাদনা] বহিঃসংযোগ

Static Wikipedia 2008 (March - no images)

aa - ab - als - am - an - ang - ar - arc - as - bar - bat_smg - bi - bug - bxr - cho - co - cr - csb - cv - cy - eo - es - et - eu - fa - ff - fi - fiu_vro - fj - fo - frp - fur - fy - ga - gd - gl - glk - gn - got - gu - gv - ha - hak - haw - he - ho - hr - hsb - ht - hu - hy - hz - ia - id - ie - ig - ii - ik - ilo - io - is - it - iu - jbo - jv - ka - kab - kg - ki - kj - kk - kl - km - kn - ko - kr - ks - ksh - ku - kv - kw - ky - la - lad - lb - lbe - lg - li - lij - lmo - ln - lo - lt - lv - map_bms - mg - mh - mi - mk - ml - mn - mo - mr - ms - mt - mus - my - mzn - na - nah - nap - nds - nds_nl - ne - new - ng - nn - -

Static Wikipedia 2007 (no images)

aa - ab - af - ak - als - am - an - ang - ar - arc - as - ast - av - ay - az - ba - bar - bat_smg - bcl - be - be_x_old - bg - bh - bi - bm - bn - bo - bpy - br - bs - bug - bxr - ca - cbk_zam - cdo - ce - ceb - ch - cho - chr - chy - co - cr - crh - cs - csb - cu - cv - cy - da - de - diq - dsb - dv - dz - ee - el - eml - en - eo - es - et - eu - ext - fa - ff - fi - fiu_vro - fj - fo - fr - frp - fur - fy - ga - gan - gd - gl - glk - gn - got - gu - gv - ha - hak - haw - he - hi - hif - ho - hr - hsb - ht - hu - hy - hz - ia - id - ie - ig - ii - ik - ilo - io - is - it - iu - ja - jbo - jv - ka - kaa - kab - kg - ki - kj - kk - kl - km - kn - ko - kr - ks - ksh - ku - kv - kw - ky - la - lad - lb - lbe - lg - li - lij - lmo - ln - lo - lt - lv - map_bms - mdf - mg - mh - mi - mk - ml - mn - mo - mr - mt - mus - my - myv - mzn - na - nah - nap - nds - nds_nl - ne - new - ng - nl - nn - no - nov - nrm - nv - ny - oc - om - or - os - pa - pag - pam - pap - pdc - pi - pih - pl - pms - ps - pt - qu - quality - rm - rmy - rn - ro - roa_rup - roa_tara - ru - rw - sa - sah - sc - scn - sco - sd - se - sg - sh - si - simple - sk - sl - sm - sn - so - sr - srn - ss - st - stq - su - sv - sw - szl - ta - te - tet - tg - th - ti - tk - tl - tlh - tn - to - tpi - tr - ts - tt - tum - tw - ty - udm - ug - uk - ur - uz - ve - vec - vi - vls - vo - wa - war - wo - wuu - xal - xh - yi - yo - za - zea - zh - zh_classical - zh_min_nan - zh_yue - zu -
https://www.classicistranieri.it - https://www.ebooksgratis.com - https://www.gutenbergaustralia.com - https://www.englishwikipedia.com - https://www.wikipediazim.com - https://www.wikisourcezim.com - https://www.projectgutenberg.net - https://www.projectgutenberg.es - https://www.radioascolto.com - https://www.debitoformativo.it - https://www.wikipediaforschools.org - https://www.projectgutenbergzim.com