মণিপুরী (সাহিত্য)
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বাংলাদেশের মণিপুরী সাহিত্য
মৈতৈ ও বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী উভয় ভাষারই লিখিত সাহিত্য এবং সাহিত্যের চর্চ্চা রয়েছে। মণিপুরীদের প্রাচীন বর্ণমালা থাকলেও বর্তমানে মুদ্রন ও প্রকাশনার কাজে তারা বাংলা এবং অসমীয়া অক্ষর ব্যবহার করে থাকে।
সূচিপত্র |
[সম্পাদনা] মৈতৈ ও বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী ভাষায় যৌথ সাহিত্য
বাংলাদেশে মণিপুরী সাহিত্যের যাত্রা শুরু হয় ১৯২৫ সনে শ্রীফাল্গুনী সিংহ সম্পাদিত মৈতৈ ও বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী ভাষার দ্বিভাষিক সাময়িকী ”জাগরন” প্রকাশনার মাধ্যমে। এ সময়কালে আরো কয়েকটি দ্বিভাষিক পত্রিকা প্রকাশিত হয়। এগুলোর মধ্যে অন্যতম ”মেখলী”(১৯৩৩), ”মণিপুরী” (১৯৩৮), ক্ষত্রিয়জ্যোতি (১৯৪৪) ইত্যদি।
[সম্পাদনা] মণিপুরী মৈতৈ ভাষার সাহিত্য
বাংলাদেশে মণিপুরী মৈতৈ সাহিত্যের যাত্রা ১৯৭৫ সনে দীপান্বিতা নামের সাহিত্য ম্যাগজিনের মাধ্যমে। এরপর মৈরা, ঈপোম, শজিবু, মিটতাপথোকপা ইত্যাদি নামে কয়েকটি অনিয়মিত সাহিত্যপত্রিকা বের হয়। বাংলাদেশে মণিপুরী মৈতৈ ভাষায় প্রকাশিত গ্রস্থের সংখ্যা নগন্য হলেও মানের দিক থেকে উন্নত। এদের মধ্যে “বসন্ত কুন্নীপালগী লেইবাং”, “মেঙ মাপেই মারাকটা”, “ওয়াখালসি” ইত্যাদি কাব্যগ্রন্থের নাম উল্লেখযোগ্য।
[সম্পাদনা] মণিপুরী বিষ্ণুপ্রিয়া ভাষায় সাহিত্য
[সম্পাদনা] পত্রপত্রিকা
অপরপক্ষে ১৯৭২ সনে প্রকাশিত ”খঙচেল” স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের মণিপুরী বিষ্ণুপ্রিয়া সাহিত্যের প্রথম প্রকাশনা। এরপর কালক্রমে ইমার ঠার (১৯৭৭), সত্যম(১৯৮৫), মিঙাল(১৯৮৮), মণিপুরীর সাহিত্য (১৯৮৯), পৌরি (১৯৮৯), জাগরন(১৯৯০), যেবাকা যেদিন(১৯৯১), ইথাক(১৯৯৪), তেইপাঙ(১৯৯৮), গাওরাপা(১৯৯৯), মণিপুরী থিয়েটারর পত্রিকা(২০০৩), কুমেই(২০০৪) পৌরি পত্রিকা(২০০৫) ইত্যাদি সাহিত্য পত্রিকার প্রকাশনা বাংলাদেশের বিষ্ণুপ্রিয়া মনিপুরী সাহিত্যে নতুন মাত্রা এনে দিয়েছে।
[সম্পাদনা] কবিতা
গোপীচান সিংহের লেখা “বঙ্গবন্ধু বারো বাংলাদেশ” এবং রনজিত সিংহের লেখা “স্বাধীনতা সংগ্রামে মণিপুরি সমাজ” মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বই। বাংলাদেশের মণিপুরী(বিষ্ণুপ্রিয়া) কবিতার বইয়ের মধ্যে বাংলাদেশ মণিপুরী সাহিত্য পরিষদ প্রকাশিত “থাম্পাল”, ‘নিয়োতি”, “চিকারী বাগেয়া”, ”কনাক কেথক” ইত্যাদি, মণিপুরি তথ্য ও গবেষনা কেন্দ্র (পৌরি) প্রকাশিত “রসমানজুরি”, “জীর মেরিক”, “তোর নিংসিঙে”, “ছেয়াঠইগীর যাদু”, “তানকালেই” ইত্যাদি এবং মণিপুরি থিয়েটার প্রকাশিত “সেনাতম্বীর আমুনিগৎত সেম্পাকহান পড়িল অদিন”এবং মণিপুরী(বিষ্ণুপ্রিয়া), চাকমা ও মান্দি ভাষার কবিতা সংকলন “রৌদ্রজলের পংক্তিমালা” উল্লেখযোগ্য।
[সম্পাদনা] গবেষনা
গবেষনা গ্রন্থের মধ্যে “বিষ্ণুপ্রিয়া মনিপুরী ছন্দ পরিচয়”, “ভানুবিল কৃষক প্রজা আন্দোলন বারোহ বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী সমাজ” উল্লেখযোগ্য।
[সম্পাদনা] অনুবাদ সাহিত্য
বাংলাদেশের আধুনিক মণিপুরী বিষ্ণুপ্রিয়া সাহিত্য নাটক, কবিতা, ছোটগল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, ভ্রমন কাহিনীর পথ পেরিয়ে অনুবাদ সাহিত্যের মাধ্যমে দ্রুত বিকশিত হচ্ছে। বিশ্বের নানান ভাষার সাহিত্য বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী ভাষায় অনুদিত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য,বঙ্কিমমসাহিত্য, শরৎসাহিত্য, কালিদাসের মেঘদুতম, ইষোপনিষদ, শ্রীমদভাগবতগীতা, বাইবেল, রুবাইয়াত-ই-ওমর খৈয়াম, সফোকিসের আন্তিগোনে, উইলিয়াম শেক্সপীয়রের নাটক, জাপানী হাইকু কবিতা বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী ভাষায় অনুদিত হয়েছে। অনুদিত হয়েছে বেরতোল্ড ব্রেশ্ট, বোদলেয়ার, লোরকা, পলএল্যুয়ার, মালার্মে, এজরা পাউন্ড, রিলকে,বোর্হেসের লেখা। মণিপুরী বিষ্ণুপ্রিয়া ভাষার অনেক সাহিত্যও বাংলা, অসমীয়া, ককবরক,হিন্দী, ইংরেজী ভাষায় অনুদিত হয়েছে।
পৌরি প্রকাশিত “কুরৌ আহান রবীন্দ্রনাথ” বাংলাদেশের মণিপুরী সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথের কবিতার প্রথম অনুবাদ গ্রন্থ। রবীন্দ্রনাথের “রুদ্রচন্দ্র” নাটকটি বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী অনুদিত হয়েছে। এছাড়া সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে বিশ্বের প্রায় ষাটটি ভাষার অনুবাদ কবিতার সংকলন “অনুবাদকল্প” ১ম ও ২য় খন্ড।
[সম্পাদনা] আরও পড়ুন
- মণিপুরী (জাতি), বাংলাদেশের অন্যতম ক্ষুদ্র জাতিসত্তা।
- মণিপুরী (নৃত্য), শাস্ত্রীয় নৃত্যের একটি ধারা।
- বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী, বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী ভাষা