ফজিলতুন্নেসা
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ফজিলতুন্নেসা জোহা (জন্ম: ১৯০৫; মৃত্যু:২১ অক্টোবর, ১৯৭৬) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মুসলমান ছাত্রী ও ঢাকা ইডেন কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন (১৯৫১-৫২)[১]। তিনিই প্রথম বাঙালি মুসলমান ছাত্রী যিনি উচ্চ শিক্ষার্থে স্কলারশিপ নিয়ে বিদেশে যান। ফজিলতুন্নেসা সম্পর্কে পরিচয় পাওয়া যায় কাজী মোতাহার হোসেনের লেখা থেকে,
“ | ফজিলতুন্নেসা অসামান্য সুন্দরীও ছিলেন না অথবা বীনানিন্দিত মঞ্জুভাষিণীও ছিলেন না। ছিলেন অঙ্কের এম এ এবং একজন উচুঁদরের বাক্পটু মেয়ে | ” |
সূচিপত্র |
[সম্পাদনা] জন্ম
ফজিলতুন্নেসা ১৯০৫ সালে ময়মনসিংহ জেলার করটিয়ার ‘কুমল্লীনামদার’ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম ওয়াহেদ আলী খাঁ। ওয়াহেদ আলী খাঁ মাইনর স্কুলের শিক্ষক ছিলেন।
[সম্পাদনা] শিক্ষা
মাত্র ৬ বছর বয়সে ওয়াহেদ আলী খাঁ ফজিলতুন্নেসাকে করটিয়ার প্রাইমারী স্কুলে ভর্তি করে দেন। প্রতি বছরেই তিনি ক্লাসে প্রথম স্থান অধিকার করতেন। নিম্ন প্রাইমারী, উচ্চ প্রাইমারী ও মাইনর পাস করার পরই তাকে ১৯১৭ সালে ঢাকার ইডেন স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেওয়া হন। এখানে চার বছর পড়ার পর ১৯২১ সালে তিনি ঢাকা বিভাগে প্রথম স্থান অধিকার করে ম্যাট্রকুলেশন পরীক্ষায় পাশ করেন। ইডেন কলেজ থেকেই ১৯২৩ সালে তিনি আই এ পাস করেন। কলেজে ফজিলতুন্নেসা ছাত্রীদের কাছে কারো ‘ফতুল’ কারো কাছে ‘ফতুল দি’ নামে পরিচিত ছিলেন। আই এ পাস করার পর ফজিলতুন্নেসা কলকাতা বেথুন কলেজ থেকে ডিসটিংশনের সাথে বি এ পাস করেন। অতঃপর ১৯২৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অঙ্ক শাস্ত্রে মিশ্র বিভাগের এম এ পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে প্রথম স্থান দখল করেন। ১৯২৮ সালে সেপ্টেম্বর মাসে স্টেট স্কলারশিপ নিয়ে পিএইচডি ডিগ্রির জন্য ফজিলতুন্নেসা বিদেশে যান। কিন্তু, ১৯৩০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পিতার মারাত্বক অসুখের খবর পেয়ে সম্পূর্ণ কোর্স শেষ না করেই দেশে ফিরে আসেন। [২]
[সম্পাদনা] পরিবার
বিদেশে পড়ার সময় ফজিলতুন্নেসার সাথে খান বাহাদুর আহসানউল্লাহ্র পুত্র সলিসিটর শামসোদ্দোহার সাথে পরিচয় ঘটে এবং তারা উভয়েই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে প্রতিশ্রুত হন। প্রিন্সিপাল ইব্রাহীম খাঁর ঘটকালিতে ফজিলতুন্নেসা ও শামসোদ্দোহার বিয়ে সম্পন্ন হয়। আসেন। [৩]
[সম্পাদনা] নজরুল ও ফজিলতুনন্নেসা
১৯২৮ সালে কাজী নজরুল ইসলাম নজরুলের দ্বিতীয় দফা ঢাকা সফরের সময় ফজিলতুন্নেসার সাথে নজরুলের পরিচয় ঘটে। ফজিলতুন্নেসা তখন ঢাকার দেওয়ান বাজারস্থ হাসিনা মঞ্জিলে থাকতেন। কাজী মোতাহার হোসেনের কাছ থেকে ফজিলতুন্নেসা জানতে পারেন নজরুল হাত দেখে ভাগ্য বলতে পারেন এবং ফজিলতুন্নেসারও তার হাত নজরুলকে দেখাবার ইচ্ছা হয়। এভাবে ফজিলতুন্নেসা ও তার বোন সফীকুননেসার সাথে নজরুলের পরিচয় ঘটে ফজিলতুন্নেসার বাসায়। কাজী মোতাহার হোসেনের লেখা থেকে জানা যায়, সেই দিন রাতেই নজরুল ফজিলতুন্নেসার ঘরে যান এবং প্রেম নিবেদন করেন। ফজিলতুন্নেসা নজরুলের আবেদন প্রত্যাক্ষান করেন। নজরুল ফজিলতুন্নেসার বিলেত গমন উপলেক্ষে ‘’বর্ষা-বিদায়” নামক একটি কবিতা লেখেন। কলকাতা ফিরে গিয়ে নজরুল ফজিলতুন্নেসাকে একটি কাব্যিক চিঠি লেখেন। সেই কাব্যিক চিঠির নাম রহস্যময়ী (পরে তুমি মোরে ভুলিয়াছ নাম দেওয়া হয়)।[৪] কাজী মোতাহার হোসেন লেখেন, “ফজিলতের প্রতি নজরুলের অনুভূতির তীব্রতা দু’তিন বছরের সময়-সীমায় নিঃশেষিত হয়ে যায়” [৫]
[সম্পাদনা] মৃত্যু
ফজিলতুন্নেসা জোহা ১৯৭৬ সালের ২১ অক্টোবর মৃত্যু বরণ করেন।
[সম্পাদনা] সূত্র
- ↑ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশি বছরের ইতিহাস; রফিকুল ইসলাম; পৃষ্ঠা: ৭২-৭৩
- ↑ ’’মরহুমা ফজিলতুন্নেসার সঙ্গে আমার পরিচয়’’-স্মৃতিকথা; কাজী মোতাহার হোসেন; পৃষ্ঠা: ১৪৩
- ↑ ’’মরহুমা ফজিলতুন্নেসার সঙ্গে আমার পরিচয়’’-স্মৃতিকথা; কাজী মোতাহার হোসেন; পৃষ্ঠা: ১৪৪
- ↑ স্মৃতিপটে নজরুল-স্মৃতিকথা; কাজী মোতাহার হোসেন; পৃষ্ঠা: ৯৮-৯৯
- ↑ আমার বন্ধু নজরুল: তার গান-স্মৃতিকথা; কাজী মোতাহার হোসেন